বিশেষ প্রতিবেদন,কলকাতা: বাংলায় ১০ হাজার ছাড়িয়ে গেল মোট করোনা সংক্রমিতের সংখ্যা। আর শেষ ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্ত হলেন ৪৭৬ জন। এখনও পর্যন্ত বাংলায় মোট সংক্রমিত হয়েছেন ১০ হাজার ২৪৪ জন। করোনা–সময়ে সরকারি হিসেবে এটাই রাজ্যে সবচেয়ে বেশি একদিনের সংক্রমণ। শুক্রবার রাজ্য সরকারের স্বাস্থ্য দফতরের বুলেটিন থেকেই পাওয়া গেল এই তথ্য। বুধবার ২৪ ঘণ্টায় সংক্রমণের সংখ্যাটা ছিল ৩৪৩ জন, আর মঙ্গলবার সংখ্যাটা ছিল ৩৭২ জন। এর আগে ২৪ ঘণ্টায় সবচেয়ে বেশি সংক্রমিতের সংখ্যা ছিল রবিবার। সেদিন ৪৪৯ জন আক্রান্ত হয়েছিলেন।
বাংলায় মোট সংক্রমিত ১০ হাজার ২৪৪ জন হলেও এখন চিকিৎসাধীন রয়েছেন ৫ হাজার ৫৮৭ জন। শুক্রবার করোনা আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে ৯ জনের। ফলে করোনায় মৃত্যুর সংখ্যাও সাড়ে চারশো পেরিয়ে গেল। শেষ ২৪ ঘণ্টায় যাঁরা মারা গিয়েছেন, তাঁদের মধ্যে ৪ জনই কলকাতার। বাকি ৫ জনের মধ্যে হুগলির রয়েছেন ২ জন, মুর্শিদাবাদ, দক্ষিণ ২৪ পরগনা ও হাওড়ার রয়েছেন ১ জন করে। তবে বৃহস্পতিবারের তুলনায় এদিন মৃত্যুর সংখ্যা ছিল বেশ কম। বৃহস্পতিবার করোনা সংক্রমিত হয়ে মৃত্যু হয়েছিল ১৭ জনের।
তবে এদিন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গিয়েছেন ২১৮ জন। ফলে রাজ্যে মোট করোনা–মুক্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ২০৬ জন। তার মানে শতাংশের হিসেবে ৪১.০৫ জন। সেদিক থেকে করোনায় সুস্থ হওয়ার সংখ্যা নিয়ে আশাবাদী হওয়াই যায় বলে মনে করছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। বুলেটিন থেকে আরও জানা গিয়েছে, শেষ ২৪ ঘণ্টায় রাজ্যে করোনা পরীক্ষা হয়েছে ৮ হাজার ৭৫৮ জনের। ফলে এখনও পর্যন্ত রাজ্যে মোট করোনা পরীক্ষা হয়েছে ৩ লক্ষ ১৫ হাজার ৬৯৯ জনের। যদিও রাজ্যের মোট জনসংখ্যার নিরিখে সংখ্যাটা খুব একটা আশাব্যঞ্জক নয়। কারণ, প্রতি ১০ লক্ষ জনসংখ্যায় ৩ হাজার ৫০৮ জনের করোনা পরীক্ষা হয়েছে।
বিশেষজ্ঞদের ধারণা, ভিনরাজ্য থেকে আসা শ্রমিকরা সবসময় নিজেদের মধ্যে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে চলতে পারেননি। হয়তো তাই তাঁরা বাংলায় ফেরার পর থেকেই সংক্রমণ অনেকটা বেড়ে গিয়েছে। উল্লেখ্য, ভিনরাজ্য থেকে আসা শ্রমিকদের নিয়ে এমন আশঙ্কার কথা আগেই জানিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এমনকী, বাংলায় যে সব শ্রমিক স্পেশ্যাল ট্রেন এসেছে, সেগুলিকে তিনি ‘করোনা স্পেশ্যাল’ ট্রেন বলেও উল্লেখ করেছিলেন। যে কারণে পরে ভার্চুয়াল সভায় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ পর্যন্ত এই মন্তব্যের সমালোচনা করেছিলেন। যদিও এর পর মুখ্যমন্ত্রী দাবি করেন, তিনি ওই কথা বলেননি। বলেছিলেন, জনগণ বলছে।
বিশেষজ্ঞরা অবশ্য বিষয়টি নিয়ে রাজনীতিকে গুরুত্ব দিতে রাজি নন। তাঁরা জানিয়েছেন, শ্রমিকরা নিজেদের রাজ্যে ফিরবেনই। তবে তাঁদের উচিত ছিল, করোনা পরিস্থিতিতে কিছু বিধিনিষেধ মেনে চলা। যেমন সবসময় মাস্ক পরা, নিজেদের মধ্যে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা প্রভৃতি। হয়তো বিভিন্ন কারণে তাঁরা তা রাখতে পারেননি। তাই এই সংক্রমণ বৃদ্ধি ঘটেছে। তবে ট্রেন থেকে নামার পর শ্রমিকদের প্রত্যেককে যদি সরকারি কোয়ারেন্টাইনে রাখার ব্যবস্থা করা যেত, তা হলে হয়তো বিষয়টা এতদূর এগোতো না। পাশাপাশি তাঁরা এ কথাও স্বীকার করে নিয়েছেন, এত শ্রমিককে সরকারি কোয়ারেন্টাইনে রাখার মতো ব্যবস্থা করা সহজসাধ্য ব্যাপার নয়। সেই রকম পরিকাঠামো আমাদের নেই।
তবে বিষয়টি নিয়ে সতর্ক রয়েছে রাজ্য সরকার। পরিস্থিতির দিকে কড়া দৃষ্টি রাখা হচ্ছে। সংক্রমণের সংখ্যা কমিয়ে আনতে সরকার যথোপযুক্ত পদক্ষেপ করবে বলেও নবান্ন সূত্রে খবর।