মানুষের ওপর যেমন আল্লাহর হক রয়েছে তেমনি আল্লাহর ওপরও মানুষের হক বা অধিকার রয়েছে। এ অধিকারের বিষয়ে যথাযথ দায়িত্ব পালন করা বান্দার একান্ত কাজ।
আল্লাহ তাআলা মানুষকে তার নির্দেশ মতো কাজ করার কথা বলেছেন। এ নির্দেশ মোতাবেক কাজ করার নামই ইবাদত। তা হতে পারে পরিবার প্রতিপালন, ব্যবসা-বাণিজ্য, চাকরি-বাকরি কিংবা ব্যক্তিগত যে কোনো কাজ। এমন কোনো কাজ নেই, যে কাজের ব্যাপারে মহান আল্লাহর বিধি-নিষেধ নেই।
সুতরাং আল্লাহর হুকুম মোতাকেব কাজ করাই বান্দার দায়িত্ব ও কর্তব্য। আর বান্দার ওপর মহান আল্লাহর অধিকারও এটি। এরমধ্যে বান্দার প্রতি সবচেয়ে বড় নির্দেশ হচ্ছে- তাঁর সঙ্গে কাউকে শরিক করা যাবে না। তার নাফরমানি ও অবাধ্যতা থেকে বিরত থেকে থাকতে হবে।
অপারগতা ও অজ্ঞতা এবং চরম অবহেলা ও বাড়াবাড়ির কারণে আল্লাহর সঙ্গে বান্দা অপরাধ করতে পারে। এ কারণে যদি আল্লাহ তাআলা বান্দাকে আজাব বা শাস্তি দেন, তাহলে সেটা বান্দার উপর জুলুম হবে না। পক্ষান্তরে দয়ালু আল্লাহ তাআলা যদি কোনো বান্দাকে ক্ষমা করে দিতে চান তবে কেউ তাতে বাঁধাও দিতে পারবে না। হাদিসে পাকে প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহর হক বা অধিকার সম্পর্কে সুস্পষ্ট ঘোষণা তুলে ধরেছেন-
হজরত মুয়াজ ইববে জাবাল রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, আমি বিশ্বনবির পেছনে ‘উফায়ের’ নামক গাধার উপর বসা ছিলাম। তখন তিনি বললেন-
‘হে মুয়াজ! তুমি কি জান বান্দার উপর আল্লাহর হক এবং আল্লাহর উপর বান্দার হক কী?
মুয়াজ রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, এ ব্যাপারে আল্লাহ ও তাঁর রাসুলই বেশি জানেন।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন-
‘বান্দার উপর আল্লাহর হক হলো- একমাত্র তাঁরই ইবাদাত করবে এবং তাঁর সঙ্গে কাউকে শরিক করবে না। আর আল্লাহর উপর বান্দার হক হলো- যে তাঁর সঙ্গে কাউকে শরিক করে না তাকে শাস্তি না দেয়া।’
হজরত মুয়াজ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, ‘আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল! এ ব্যাপারে মানুষকে সুসংবাদ প্রদান করি?
তিনি (রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন- তাদের (এ) সুসংবাদ দিও না; কারণ তারা হাত-পা গুটিয়ে পরনির্ভরশীল হয়ে কাজ-কর্ম ও ইবাদাত করা ছেড়ে বসে থাকবে।’ (বুখারি ও মুসলিম)
এ হাদিসে মানুষকে সব কাজে মহান আল্লাহর বিধান মেনে চলার প্রতি গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। যারা আল্লাহর বিধান মোতাবেক ব্যক্তি, পরিবার, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় জীবন পরিচালনা করবে। সব কাজে আল্লাহর বিধান বাস্তবায়ন করবে, তারাই আল্লাহর শাস্তি থেকে বেঁচে থাকবে এবং দুনিয়া ও পরকালের সব সুখ-শান্তি ও নেয়ামত তাদের জন্য নির্ধারিত।
হাদিসের এ নির্দেশনা মুসলিম উম্মাহর জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আল্লাহর এ জমিনে তারই বিধান বাস্তবায়নে স্বচেষ্ট থাকবে। তবেই বান্দা আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করতে সক্ষম হবে।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে হাদিসের ওপর যথাযথ আমল করার তাওফিক দান করুন। আল্লাহর হক আদায়ে স্বচেষ্ট থাকার তাওফিক দান করুন। দুনিয়া ও পরকালের শান্তি ও নেয়ামত লাভের তাওফিক দান করুন। আমিন।