বিশেষ সংবাদদাতা,কলকাতা : তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্রের অভিযোগ, একটি টেলিভিশন চ্যানেলের বিতর্কসভায় বিজেপি সাংসদ তথা কেন্দ্রীয়মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয় নাকি তাঁর সম্পর্কে ‘আপত্তিকর’ এবং ‘মর্যাদাহানিকর’ মন্তব্য করেছিলেন। আর মহুয়া মৈত্র সেই অভিযোগ দায়ের করেন আলিপুর থানায়। যদিও রাজ্য বিজেপির অভিযোগ ছিল, যেহেতু বিজেপি সাংসদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয়েছে, তাই পুলিশ অনেক তৎপরতা দেখাবে। কিন্তু আদালত সত্য–ই বিচার করবে, পুলিশের অতি সক্রিয়তাকে নয়। ঘটনা হল, বুধবার কলকাতা হাইকোর্ট মহুয়া মৈত্রের আনা ‘মহিলার বিরুদ্ধে আনা মর্যাদাহানি’ ঘটানোর অভিযোগের প্রেক্ষিতে পুলিশের দেওয়া চার্জশিট খারিজ করে দিয়েছে।
হাইকোর্টের এই রায়ের পর স্বভাবতই উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছে গেরুয়া শিবির। দলের তরফে বলা হয়েছে, ‘মিথ্যে অভিযোগের বিরুদ্ধে এটা খুব বড় জয়।’ অন্যদিকে, মহুয়া মৈত্র এখন দেশের বাইরে রয়েছেন। তাই এই রায় নিয়ে তাঁর কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। উল্লেখ্য, ওই বিতর্কসভাটি ২০১৭ সালে আয়োজন করেছিল একটি সর্বভারতীয় ইংরেজি নিউজ চ্যানেল। সেই সভার শেষ দিকে বাবুল সুপ্রিয় রসিকতা করে বলেছিলেন, ‘মহুয়া, আর ইউ অন মহুয়া।’ অর্থাৎ, ‘মহুয়া, আপনি কি মহুয়ায় আছেন?’ প্রসঙ্গত, মহুয়া গাছের ফল মহুয়া থেকে তৈরি পানীয় যথেষ্ট উত্তেজক হয়ে থাকে, আর সেই পানীয়কে মহুয়া বলা হয়ে থাকে। বাবুল সুপ্রিয়র সেই কথার তীব্র প্রতিবাদ জানান সাংসদ মহুয়া মৈত্র। তিনি অভিযোগ জানান, আসলে বাবুল তাঁকে মত্ত বলতে চেয়েছেন। তা তাঁর মর্যাদাহানি করেছে বলেও অভিযোগ করেন। আলিপুর থানার দ্বারস্থ হন।
মহুয়া মৈত্রের অভিযোগের ভিত্তিতে সেই মামলা পৌঁছে যায় মুখ্য বিচারবিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে। ভারতীয় দণ্ডবিধির ৫০৯ ধারায় অভিযুক্ত করে বাবুল সুপ্রিয়র বিরুদ্ধে চার্জশিট দেওয়া হয়। সেই আদালত কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়র বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানাও জারি করে। তখন কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন বাবুল সুপ্রিয়। হাইকোর্টে তাঁর বিরুদ্ধে জারি হওয়া গ্রেফতারি পরোয়ানা স্থগিত হয়ে যায়। আর এদিন হাইকোর্ট মহিলার মর্যাদাহানি ঘটিয়েছেন বলে যে অভিযোগ মহুয়া মৈত্র করেছিলেন, তা খারিজ করে দেয়। পুরো রায়টি বাবুল সুপ্রিয় তাঁর টুইটারে প্রকাশ করেছেন। তিনি লেখেন, ‘এটা মিথ্যের বিরুদ্ধে সত্যের অনেক বড় জয়।’ এখন প্রশ্ন হল, রায়ের বিষয়ে তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্র কী সিদ্ধান্ত নেবেন? তিনি বিদেশে থাকায় এ ব্যাপারে নিশ্চিত ভাবে কিছু বলা যাচ্ছে না। যদি তাঁর এই রায় পছন্দ না হয়, তা হলে তিনি সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করতে পারেন।
মামলা চলাকালীন বাবুল সুপ্রিয়র আইনজীবী অয়ন ভট্টাচার্য দাবি করেছিলেন, ‘টক শো চলার সময় কেন্দ্রীয় মন্ত্রী যে মন্তব্য করেছিলেন, তাতে তিনি কোনও ভাবেই মহুয়া মৈত্রের সম্মানহানি করতে চাননি।’ কিন্তু তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্রের আইনজীবী সব্যসাচী বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন, ‘ওই মন্তব্য করে বাবুল সুপ্রিয় সরাসরি মহুয়া মৈত্রকে মত্ত বলতে চেয়েছেন। এটা সরাসরি তাঁর সম্মানহানি করেছে।’ রায় বাবুল সুপ্রিয়র পক্ষে গেলেও হাইকোর্ট তাঁকে সতর্ক করে দিতেও দ্বিধা করেনি। বিচারপতি বিবেক চৌধুরি পরিষ্কার জানিয়েছেন, একজন জনপ্রতিনিধি তাঁর আচরণে সংযম ও ভদ্রতা বজায় রাখবেন, এমনই হওয়া উচিত। ভবিষ্যতে এমন মন্তব্য করার ক্ষেত্রে বাবুল সুপ্রিয়কে সতর্ক থাকারও নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।