বিশেষ প্রতিবেদন,কলকাতা:
আমফান বিপর্যয়ে কাবু বাংলা। কলকাতা–সহ দক্ষিণবঙ্গের বহু জায়গায় বিদ্যুৎ নেই। তাই পানীয় জলও পাচ্ছেন না বাসিন্দারা। বুধবারের পর বৃহস্পতিবারও কেটে গিয়েছে। এমনকী, শুক্রবারেও অবস্থার পরিবর্তন হয়নি। এদিকে, কলকাতা পুরসভার প্রশাসক ফিরহাদ হাকিম জানিয়েছেন, সাতদিনের মধ্যে স্বাভাবিক হয়ে যাবে শহর। বিদ্যুৎমন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়ও বিদ্যুৎ পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে ৭ দিন লাগার কথা জানান। তাতে ক্ষোভ আরও বেড়ে গিয়েছে মানুষের। এবার তাঁরা পথেই নামলেন।
কলকাতার বেহালা, তপসিয়া, অজয়নগর, দমদমে রীতিমতো বিক্ষোভ দেখান সেখানকার বাসিন্দারা। বেহালায় বেশ ভয়ঙ্কর ঘটনাই ঘটে গিয়েছে। সেখানকার অনেক এলাকাই জলমগ্ন। তারই মধ্যে বৃহস্পতিবার পাঁচটি দেহ ভাসতে দেখা যায় বিভিন্ন এলাকায়। অনুমান, ঝড়ের সময় বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে তাঁদের মৃত্যু হয়েছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, বারবার ফোন করে খবর দেওয়া হয়েছে প্রশাসনকে। কিন্তু প্রশাসনের তরফে কোনও তৎপরতা দেখা যায়নি। পরে অবশ্য দেহগুলি সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়।
বেহালার অধিকাংশ অঞ্চলই রয়েছে বিদ্যুৎহীন। তাই চালানো যাচ্ছে না পাম্প। ফলে পানীয় জলও পাওয়া যাচ্ছে না। শুক্রবারও সমস্যার সমাধান না হওয়ায় রীতিমতো ক্ষোভে ফেটে পড়েন সেখানকার বাসিন্দারা। তাঁদের অভিযোগ, প্রশাসনকে সমস্ত কথা জানানোর পরও সদুত্তর পাওয়া যায়নি। এর পরই ১২০, ১২১ নম্বর ওয়ার্ডের জয়শ্রী মোড়, রায় বাহাদুর রোডে জোড়া বটতলা এলাকায় রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন তাঁরা। একই অভিযোগে টালিগঞ্জের কুদঘাটে রাস্তা অবরোধ করা হয়।
দু’দিন ধরে জল না পাওয়ায় এবং এলাকায় বিদ্যুৎ না থাকায় তপসিয়া মোড়েও রাস্তা অবরোধ করেন স্থানীয়রা। এই অবরোধের জেরে গুরুত্বপূর্ণ ওই রাস্তায় সমস্ত গাড়ি আটকে যায়। পুলিশ তাঁদের অবরোধ তুলে নিতে বললেও নিজেদের অবস্থানে অনড় ছিলেন তাঁরা। স্থানীয় কাউন্সিলরদের এসে দেখা করে বিদ্যুৎ পরিষেবা স্বাভাবিক করার পাশাপাশি জলের সমস্যা মেটানোরও তাঁরা দাবি জানান।
দক্ষিণ দমদম পুরসভার ৪ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দারাও এদিন নতুন বাজার মেন রোড অবরোধ করে তুমুল বিক্ষোভ দেখান। এলাকাবাসীর অভিযোগ, রাস্তাঘাট, ঘর জলমগ্ন। পুরকর্মীরা ঠিকমতো কাজ করছেন না। সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তীও বিষয়টি নিয়ে মুখ খুলেছেন। তিনি বলেছেন, ‘৪৮ ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও কলকাতার পাশাপাশি যাদবপুরেরও একাধিক জায়গা বিদ্যুৎহীন এবং জায়গাগুলিতে জলও পাওয়া যাচ্ছে না। অসহনীয় পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে দিন কাটছে মানুষের। পুরসভা ও প্রশাসনকে জরুরি ভিত্তিতে এই সমস্যাগুলির সমাধান করতে হবে।’
হুগলির উত্তরপাড়ায়ও বিক্ষোভ দেখান সেখানকার মানুষ। এই সময় পুলিশ আন্দোলনকারীদের ওপর লাঠিচার্জ করে বলে অভিযোগ উঠেছে। পুলিশও পাল্টা অভিযোগ করেছে, আন্দোলনকারীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট ছোঁড়ে। তাই বাধ্য হয়ে পুলিশ লাঠি চালিয়েছে। উল্লেখ্য, দুই ২৪ পরগনা, হাওড়া, হুগলির বহু জায়গায় এখনও জল জমে রয়েছে। পানীয় জল পাওয়া যাচ্ছে না। এমনকী, বিদ্যুৎও আসেনি বহু জায়গায়। ফলে মানুষের দুর্ভোগ বেড়েই চলেছে।
এরই মধ্যে কলকাতা পুরসভার কমিশনারের পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হল খলিল আহমেদকে। শোনা যাচ্ছে, তাঁর কাজ নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীও খুব বিরক্ত ছিলেন। করোনা ও আমফানে বিপর্যয়ের পর তাঁকে আরও সক্রিয় হওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু, আমফানের পরও শহর জুড়ে জল না মেলায়, ভেঙে পড়া গাছ না সরানোর অভিযোগ ওঠে পুরসভার বিরুদ্ধে।
স্বাভাবিক ভাবেই বিরক্ত পুরপ্রশাসক ফিরহাদ হাকিম সমস্যাগুলির সমাধানের পথ খুঁজতে বৈঠকে বসেন। এর পরই খবর আসে খলিল আহমেদকে তাঁর পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। তাঁর জায়গায় নতুন কমিশনার হয়েছেন বিনোদ কুমার। ৬ বছর ধরে কমিশনারের পদে ছিলেন খলিল। তাঁকে মিউনিসিপ্যাল অ্যাফেয়ার্স এবং আর্বান ডিপার্টমেন্টের প্রধান সচিব করা হয়েছে।