প্রত্যয় ইসলাম ডেস্ক:বৃষ্টি আল্লাহর নেয়ামত। আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রিয় বান্দার জন্য ভালোবাসার বার্তা। আরশ থেকে রহমত বর্ষণের বার্তাবাহক। বৃষ্টির সফেদ নির্মল ফোঁটায় প্রভুর ভালোবাসা ভর করে নেমে আসে। রহমতের ধারা বইতে থাকে দুনিয়া জুড়ে। বৃষ্টির পবিত্র পানির স্পর্শে প্রশান্ত হয় মুমিন মন। যৌবন ফিরে পায় নদী-নালা, খাল-বিল। জীবন্ত উর্বর হয় খাঁ খাঁ রোদে পুড়তে থাকা মাটি। সতেজ সজীব হয় বৃক্ষ। পাখির হৃদয় জেগে ওঠে উষ্ণ অভ্যর্থনায়। পৃথিবী হয়ে ওঠে রঙিন সজীব ও প্রেমময়। আল্লাহ বলেন, ‘তুমি কি দেখ না যে, আল্লাহ আকাশ থেকে পানি বর্ষণ করেন, অতঃপর পৃথিবী সবুজ শ্যামল হয়ে ওঠে। নিশ্চয় আল্লাহ সূক্ষ্মদর্শী, সকল বিষয় জানেন।’ (সুরা হজ : ৬৩)
আল্লাহ পানির মাধ্যমে সব বস্তুকে সজীব রাখেন। পানি ছাড়া জীবন সজীব জীবন্ত থাকতে পারে না। তৃষিত মন শীতল হয় না। সেই পানি জোগানের জন্য আল্লাহ তায়ালা প্রথমে সূর্যকে তাপ দেন। সূর্যের তপ্ত আগুনকে নিক্ষিপ্ত করেন বিশাল সমুদ্রে। তাঁরই নির্দেশে পানি বাষ্প হয়ে ওপরে উঠে যায়। সেখানে মেঘের সৃষ্টি হয়। সেই পানি পান করলে মানুষ প্রাণে প্রাণ ফিরে পায়। সেই মেঘ বৃষ্টির ফোঁটা হয়ে ঝরে পড়ছে ঝিনুকের মুখে। সৃষ্টি হচ্ছে মূল্যবান মোতি। মৃত জলাধার ফিরে পায় সোনালি যৌবন। সেই মেঘ থেকে বৃষ্টি হচ্ছে ক্ষেত-খামারে। সবুজ হয়ে ওঠে মাঠের পর মাঠ। বৃষ্টির পানি পান করে মিষ্টি সুস্বাদু হচ্ছে আম, আঙুর, খেজুর ইত্যাদি। সেই পানিতে হয় তিক্ত করলার বুক। সেই পানি সাপের মুখে বিষ হচ্ছে। হরিণ পান করলে হয় মেশক। এই পানিই প্রয়োজনরে সীমা পার করলে হয়ে ওঠে মরণ। পানি ফুরিয়ে গেলে দেখা দেয় আকাল। আল্লাহ বলেন, ‘আমি আকাশ থেকে পবিত্রতা অর্জনের জন্য পানি বর্ষণ করি। তা দ্বারা মৃত ভূভাগকে সঞ্জীবিত করার জন্য এবং আমার সৃষ্ট জীবজন্তু ও অনেক মানুষের তৃষ্ণা নিবারণের জন্য এবং আমি তা তাদের মধ্যে বিভিন্নভাবে বিতরণ করি, যাতে তারা স্মরণ করে। কিন্তু অধিকাংশ লোক অকৃতজ্ঞতা ছাড়া কিছুই করে না।’ (সুরা ফুরকান : ৪৮-৫০)
বৃষ্টি বা পানির স্পর্শ ছাড়া ফসল পরিপক্ব হয় না। ফসলের প্রাণে সবুজ সুখ ফিরে আসে না। কৃষকের ক্ষেতের ধান বৃষ্টির কল্যাণে ধান থেকে চারা হয়। বাড়ন্ত চারা লকলকে সবুজ হয়। হলদে ধানে মৌ মৌ করে মাঠের পর মাঠ। আল্লাহ ফসল ও বীজের বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন, ‘তিনিই আকাশ থেকে পানি বর্ষণ করেছেন। অতঃপর আমি এ দ্বারা সর্বপ্রকার উদ্ভিদ উৎপন্ন করেছি। অতঃপর আমি এ থেকে সবুজ ফসল নির্গত করেছি, যা থেকে যুগ্ম বীজ উৎপন্ন করি। খেজুরের কাঁদি থেকে গুচ্ছ বের করি, যা নুয়ে থাকে এবং আঙুরের বাগান, জয়তুন, আনার পরস্পর সাদৃশ্যযুক্ত এবং সাদৃশ্যহীন। বিভিন্ন গাছের ফলের প্রতি লক্ষ করো যখন সেগুলো ফলন্ত হয় এবং তার পরিপক্বতার প্রতি লক্ষ করো। নিশ্চয় এগুলোতে নিদর্শন রয়েছে ঈমানদারদের জন্য।’ (সুরা আনআম : ৯৯)
মানুষের কল্যাণবহির্ভূত বৃষ্টি বর্ষণ করতে আল্লাহ অপছন্দ করেন। যে বৃষ্টি মানুষের কল্যাণ নিশ্চিত করে না, সে বৃষ্টি বর্ষিত হয় মানুষের পাপের ফসল হিসেবে। মানুষের পাপের কারণেই বৃষ্টির ফোঁটায় পৃথিবী পাড়ায় ক্ষতি হয়। আল্লাহ বলেন, ‘আমি আকাশ থেকে পানি বর্ষণ করেছি। অতঃপর তাতে উদগত সর্বপ্রকার কল্যাণকর উদ্ভিদরাজি।’ (সুরা লোকমান : ১০)। হাদিসের মধ্যে আল্লাহর বিধান পালনের সঙ্গে বৃষ্টির কল্যাণের বিষয়টি সুনিশ্চিতভাবে বর্ণিত হয়েছে। হাদিসে কুদসিতে আছে, ‘আমার বান্দারা যদি আমার বিধান যথাযথ মেনে চলত তবে আমি তাদের রাতের বেলা বৃষ্টি দিতাম আর সকালবেলা সূর্যের আলো দিতাম এবং কখনও তাদের বজ্রপাতের আওয়াজ শোনাতাম না। (মুসনাদে আহমাদ)
বৃষ্টি আল্লাহর পক্ষ থেকে পৃথিবীকে পবিত্র করার উপঢৌকন। পৃথিবীর দেহকে ধুয়ে-মুছে বিশুদ্ধ করার উপকরণ। বৃষ্টির পরম ছোঁয়ায় ধরাধম সজীব পবিত্র হয়। প্রকৃতি পরিবেশের ময়লা-আবর্জনা পরিষ্কার হয়। গাছের পাতায় লেগে থাকা বৃষ্টির ফোঁটা মুক্তার ছবি একে শূভ্র শিশির হয়ে ঝরে পড়ে জমিনে। আল্লাহ বলেন, ‘তুমি কি দেখনি যে, আল্লাহ আকাশ থেকে পানি বর্ষণ করেছেন, অতঃপর সে পানি জমিনে ঝরনাসমূহে প্রবাহিত করেছেন। এরপর তা দ্বারা বিভিন্ন রঙের ফসল উৎপন্ন করেন। অতঃপর তা শুকিয়ে যায়, ফলে তোমরা তা পীতবর্ণ দেখতে পাও। এরপর আল্লাহ তাকে খড়কুটায় পরিণত করে দেন। নিশ্চয় এতে বুদ্ধিমানদের জন্য উপদেশ রয়েছে।’ (সুরা যুমার : ২১)
প্রাণের প্রয়োজনে পানিকে আল্লাহ সহজ করেছেন। সাগর নদী খাল বিল জলাধারের ব্যবস্থা করেছেন। জমিনে বিছিয়ে দিয়েছেন পানির বিস্তৃত ফোয়ারা। মাটি খুঁড়লেই পবিত্রতার ঘ্রাণ নিয়ে বের হয়ে আসে পানি। পাইপ বসিয়ে টিউবওয়েলে চাপ দিলে পানির ঝরনা বইয়ে আসে। আল্লাহ তায়ালা মানুষের জীবন চলাচল সহজ করার জন্য পাহাড়ের বুকে ছড়িয়ে দিয়েছেন প্রস্রবণ। বিশাল পৃথিবী জুড়ে ঝরনার বিস্তৃতি জ্ঞানী লোককে আশ্চর্য করে। আল্লাহ বলেন, ‘তখন আমি খুলে দিলাম আকাশের দরজা প্রবল বারি বর্ষণের মাধ্যমে এবং ভূমি থেকে প্রবাহিত করলাম প্রস্রবণ। অতঃপর সব পানি মিলিত হলো এক পরিকল্পিত কাজে।’ (সুরা কমার : ১১-১২)
বৃষ্টির প্রেমে পড়েছেন পৃথিবীর সকল প্রাণ। পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মানুষ মুহাম্মদ (সা.) বৃষ্টিকে ভালোবেসে ছুঁয়ে দিয়েছেন। মুহাম্মদের (সা.) বৃষ্টি স্পর্শের বিষয়টি হাদিসে বর্ণিত হয়েছে এভাবে- হজরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা রাসুলের (সা.) সঙ্গে ছিলাম, এমন সময় বৃষ্টি নামল। তখন রাসুল (সা.) তাঁর কাপড় খুলে দিলেন। ফলে এতে বৃষ্টির পানি পৌঁছল। আমরা জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহর রাসুল! এমন কেন করলেন? তিনি বললেন, কেননা এটা মহান আল্লাহর কাছ থেকে আসার সময় খুবই অল্প। (মুসলিম : ১৯৬৮)। বৃষ্টির সময় দোয়া করা। কেননা বৃষ্টির সময় দোয়া কবুল হয়। রাসুল (সা.) বলেছেন, বৃষ্টির সময় দোয়া কবুল হয়ে থাকে। (আবু দাউদ : ২৫৪০)। বৃষ্টির সময় পড়ার জন্য দোয়াও শিক্ষা দিয়েছেন নবীজি (সা.)- ‘আল্লাহুমা সাইয়বান নাফিয়া’, অর্থাৎ, ‘হে আল্লাহ! এমন বৃষ্টি দান করুন যাতে ঢল, ধস বা আজাবের মতো কোনো অমঙ্গল নিহিত নেই।’ (বুখারি : ১০৩২)