1. abrajib1980@gmail.com : মো: আবুল বাশার রাজীব : মো: আবুল বাশার রাজীব
  2. abrajib1980@yahoo.com : মো: আবুল বাশার : মো: আবুল বাশার
  3. farhana.boby87@icloud.com : Farhana Boby : Farhana Boby
  4. mdforhad121212@yahoo.com : মোহাম্মদ ফরহাদ : মোহাম্মদ ফরহাদ
  5. shanto.hasan000@gmail.com : রাকিবুল হাসান শান্ত : রাকিবুল হাসান শান্ত
  6. masum.shikder@icloud.com : Masum Shikder : Masum Shikder
  7. shikder81@gmail.com : Masum shikder : Masum Shikder
  8. riyadabc@gmail.com : Muhibul Haque :

‘ভারতে আজ কথা বলাও বিপজ্জনক’

  • Update Time : সোমবার, ২২ মার্চ, ২০২১
  • ১৯৭ Time View

ভারতের একটি বিখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষাবিদ গত সপ্তাহে নিজ নিজ পদ থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন। তাদের এই পদত্যাগে আবারও আলোচনায় উঠে এসেছে বিজেপি সরকারের অধীনে ভারতে একাডেমিক স্বাধীনতার (শিক্ষাবিদদের ভীতিমুক্ত মতপ্রকাশের অধিকার) বর্তমান অবস্থা এবং বিরোধী মতাদর্শীদের ওপর ক্রমবর্ধমান দমন-পীড়নের অভিযোগগুলো। প্রভাবশালী মার্কিন সাময়িকী টাইমের সাম্প্রতিক একটি প্রতিবেদনে বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছে।

গত সোমবার দিল্লির নিকটবর্তী অশোকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক হিসেবে পদত্যাগ করেছেন প্রতাপ ভানু মেহতা। পদত্যাগপত্রে তিনি দাবি করেছেন, ভারত সরকারের পরোক্ষ চাপেই তিনি পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছেন। সংবাদপত্রে লেখা কলাম এবং শিক্ষা সংক্রান্ত কাজগুলোতে মেহতা ক্ষমতাসীন ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) প্রধানতন্ত্রবাদের কঠোর সমালোচনা করতেন।

গত বৃহস্পতিবার প্রতাপ ভানু মেহতার সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করে পদত্যাগ করেছেন অশোকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপক অরবিন্দ সুব্রামানিয়ামও। তিনি একসময় ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির প্রধান অর্থনৈতিক উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তবে প্রতাপ মেহতার সঙ্গে হওয়া আচরণকে ‘একাডেমিক মতপ্রকাশ এবং স্বাধীনতার বিরোধী’ উল্লেখ করে পদত্যাগ করেন তিনি।

পর্যবেক্ষকরা বলছেন, ভারতে হিন্দু জাতীয়তাবাদী দল বিজেপি একাডেমিক স্বাধীনতা ও ভিন্ন মতপ্রকাশকে আরও বিস্তৃতভাবে চেপে ধরছে, তার সবশেষ উদাহরণ এসব পদত্যাগের ঘটনা।

ফ্রিডম হাউস নামে একটি মার্কিন এনজিও ২০২০ সালে ভারতে একাডেমিক স্বাধীনতার স্কোর সম্ভাব্য চারের ভেতর তিন থেকে দুইয়ে নামিয়ে এনেছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দেশটিতে রাজনৈতিক স্পর্শকাতর বিষয় নিয়ে একাডেমিক আলোচনায় ক্রমবর্ধমান হুমকিকে এর জন্য দায়ী করা হয়েছে।

ভারতে শিক্ষাবিদ, সাংবাদিক ও সমাজকর্মীদের ভয় দেখানোর জন্য পুলিশ জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবিরোধী আইন ক্রমবর্ধমানভাবে ব্যবহার করছে বলে অভিযোগ করেছেন প্রখ্যাত শিক্ষাবিদ হর্ষ মান্দার, যিনি নিজেই এধরনের ভুক্তভোগী। ২০১৯ সালে একটি শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভে বক্তৃতা দেওয়ায় তার বিরুদ্ধে সহিংসতায় উসকানি দেওয়ার অভিযোগ আনা হয়।

হর্ষ মান্দার বলেন, সরকার মনে করে, এখন শিক্ষাবিদ ও সুশীল সমাজের কিছু কণ্ঠস্বর তাদের একমাত্র বিরোধী পক্ষ এবং তারাই ভারতকে হিন্দু আধিপত্যবাদী রাষ্ট্রে পরিণত করার পথে একমাত্র বাধা। তারা (সরকার) ভীতি সঞ্চার করতে অনেক পদ্ধতি অবলম্বন করছে।

প্রতাপ ভানু মেহতা তার পদত্যাগপত্রে অভিযোগ করেছেন, অশোকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর ভারতীয় সরকারের পরোক্ষ চাপ থাকায় তিনি পদত্যাগে বাধ্য হয়েছেন।

মেহতা বলেন, [বিশ্ববিদ্যালয়ের] প্রতিষ্ঠাতাদের সঙ্গে সাক্ষাতের পর আমার কাছে এটা পুরোপুরি পরিষ্কার হয়ে যায় যে, বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে আমার সংশ্লিষ্টতা হয়তো রাজনৈতিক দায় হিসেবে বিবেচিত হয়েছে। রাজনীতির সমর্থনে আমার লেখাগুলো, যা স্বাধীনতার সংবিধানিক মূল্যবোধ এবং সকল নাগরিককে সমান সম্মান করে- তা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য ঝুঁকি বয়ে আনতে পারে বলে মনে হয়। তাই আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বার্থে পদত্যাগ করছি।

চাকরি যাওয়ার ভয়ে নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক অশোকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক কর্মী বলেন, ২০১৪ সালে বেসরকারি অর্থায়নে প্রতিষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রতিষ্ঠাতারা এক বৈঠকে মেহতাকে বলেছিলেন, ভারত সরকারের বিরুদ্ধে তার সমালোচনা বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্প্রসারণ পরিকল্পনার জন্য হুমকি সৃষ্টি করছে।

এ বিষয়ে মন্তব্য জানতে টাইমের পক্ষ থেকে অশোকা বিশ্ববিদ্যালয় ও ভারত সরকারের কাছে অনুরোধ জানানো হয়েছিল, তাতে কোনও পক্ষই সাড়া দেয়নি। তবে অশোকার ছাত্র-পত্রিকা ‘এডিক্ট’-এ অনুরূপ অভিযোগের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন সহ-প্রতিষ্ঠাতা বলেছিলেন, নিবন্ধটি ‘প্রকৃতপক্ষে ভুল’। প্রতাপ মেহতাও এ বিষয়ে মন্তব্য করার অনুরোধে সাড়া দেননি।

মেহতা অশোকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ পদ ‘ভাইস চ্যান্সেলর’ ছিলেন। ২০১৯ সালে ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে পদত্যাগ করেন তিনি। তবে অনেকের ধারণা, এর পেছনে রাজনৈতিক কারণও ছিল।

ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর রেস অ্যান্ড জেন্ডার-এর অঙ্গনা চ্যাটার্জি বলেন, পদক্ষেপটি আমাদের অনেকের কাছেই অস্বস্তিকর। কারণ এটি এমন একটি ক্রমবর্ধমান কৌশলের অংশ, যেখানে সরকারি বুদ্ধিজীবী, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি এবং মানবাধিকার কর্মী- যারা প্রগতিশীল, উদার, গণতান্ত্রিক সমাজে একটি স্বাধীন বিশ্ববিদ্যালয় এবং স্বাধীনতার সুনির্দিষ্ট ধারণা সম্পর্কে কথা বলেন- তাদের চিহ্নিত করে নিরুৎসাহিত করা হয় এবং লক্ষ্যবস্তু বানানো হয়।

তার কথায়, সরকার বোঝাতে চায় যে, শুধু সরকারি প্রতিষ্ঠানই নয়, সরকারের সমালোচক পক্ষে অবস্থান নিলে যেকোনও প্রতিষ্ঠানের জন্যই তা অগ্রহণযোগ্য হিসেবে দেখা হবে এবং সেই মতো আচরণ করা হবে।

অশোকার আরেক শিক্ষাবিদ সুব্রামানিয়াম তার পদত্যাগের অন্যতম কারণ হিসেবেও মেহতার ওপর চাপ থাকার অভিযোগের বিষয়টিউল্লেখ করেছেন। ২০১৮ সালে মোদির অর্থ উপদেষ্টার পদ থেকে সরে দাঁড়ানো এ অর্থনীতিবিদ প্রতাপ মেহতা প্রসঙ্গে লিখেছেন, এমন সৎ ও বিখ্যাত একজন ব্যক্তি, যিনি অশোকার অন্তর্নিহিত দৃষ্টিভঙ্গিকে মূর্ত করে তুলেছেন, তার পদত্যাগে বাধ্য হওয়া যন্ত্রণাদায়ক। অশোকা বেসরকারি খেতাব এবং স্বতন্ত্র অর্থনৈতিক ভিত্তি থাকা সত্ত্বেও একাডেমিক মতপ্রকাশ ও স্বাধীনতার পক্ষে অবস্থান নিতে পারছে না।

ক্যালিফোর্নিয়ায় অবস্থানরত ভারতীয় শিক্ষাবিদ অঙ্গনা ব্যক্তিগতভাবে এধরনের হুমকির মুখে পড়েছিলেন। কাশ্মীরে বেশ কিছু অচিহ্নিত কবর নিয়ে তদন্ত করে একটি প্রতিবেদন লিখেছিলে অঙ্গনা। এর জেরে ২০০৮ সালে তার বিরুদ্ধে সহিংসতায় উসকানি দেওয়ার অভিযোগ আনে পুলিশ। এসবই ছিল মোদি সরকার ক্ষমতায় আসার আগের ঘটনা।

অঙ্গনার অভিযোগ, বিজেপি নির্বাচিত হওয়ার পর থেকেই দলটির সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের হুমকির কারণে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ভারতে ফেরা তার জন্য কঠিন হয়ে গেছে।

দেশটিতে নাগরিক সমাজের অন্য ক্ষেত্রগুলোও সেন্সরের মুখে পড়েছে। ভারতে মানবাধিকার পরিস্থিতির প্রকাশ্য সমালোচনার পর ২০২০ সালে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের ভারতীয় শাখাকে সেদেশে কাজ বন্ধ করতে বাধ্য করে বিজেপি সরকার।

অঙ্গনা বলেন, ভারতে আজ অগণিত উপায়ে মানুষকে হয়রানি, দমন ও বশীভূত করা হচ্ছে। ভারতে আজ কথা বলাও বিপজ্জনক।

Please Share This Post in Your Social Media

এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ দেখুন..