বিশেষ সংবাদদাতা,কলকাতা: পশ্চিমবাংলায় টাকা নিয়ে জাতপাতের নামে ভোট করানোর চেষ্টা করছে একটি বাজারি সংস্থা। নাম না করে নিজের দল তৃণমূলের রাজনৈতিক পরামর্শদাতা প্রশান্ত কিশোরের (পিকে) ‘আইপ্যাক’ সংস্থার বিরুদ্ধে এমনই বিস্ফোরক অভিযোগ করলেন ব্যারাকপুরের বিধায়ক শীলভদ্র দত্ত। শুধু এ কথা বলেই থেমে যাননি তিনি। রবিবার এক সভায় পরিষ্কার অভিযোগ করেছেন, ‘শুধু হিন্দু–মুসলমানের নামে নয়, হিন্দুদের মধ্যেও কে কোন জাত, কে ব্রাহ্মণ, কে হরিজন, কে কায়স্থ, কে বৈশ্য, কে রাজপুত বা তফশিলি জাতি বা উপজাতি, এ ভাবে ভাগ করে বাংলায় ভোট করাতে চাইছে একটি সংস্থা। বাংলার সংস্কৃতিতে এ ভাবে এমন ঘটনা এর আগে ঘটেছে বলে আমার জানা নেই।’
উল্লেখ্য, বঙ্গ রাজনীতিতে মুকুল রায়ের অনুগামী বলে পরিচিত ছিলেন তৃণমূল বিধায়ক শীলভদ্র দত্ত। মুকুল রায় দল বদল করে এখন বিজেপিতে। শুধু তাই নয়, তিনি এখন সর্বভারতীয় বিজেপির অন্যতম সহসভাপতি। তবে মুকুল রায়ের মতো শীলভদ্র দল বদল করেননি। কিন্তু দলের মধ্যে তিনি যে স্বস্তিতে নেই, তাঁর বক্তব্য এবং আচরণে সে কথা বারবার প্রমাণিত হয়েছে। শেষে তিনি জানিয়ে দেন, সামনের বিধানসভা নির্বাচনে তিনি প্রার্থী হবেন না। এ বিষয়ে ইঙ্গিতবহ ভাবে রবিবার তিনি বলেছেন, ‘অসুস্থতার জন্য আমি ভোটের প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকে সরে যাইনি।’ তবে সক্রিয় রাজনীতি থেকে মোটেও সরে আসেননি তিনি। তৃণমূলের বিভিন্ন সভা–সমাবেশে তাঁকে দেখা যায়। কিন্তু এখন দলের বিভিন্ন পদক্ষেপে তিনি যে ক্ষুব্ধ, সে কথা প্রকাশ্যেই বলতে শুরু করে দিয়েছেন।
রবিবার তিনি আঙুল তোলেন প্রশান্ত কিশোরের (পিকে) ‘আইপ্যাক’ সংস্থার বিরুদ্ধে। বলেন, ‘একটা বাজারি সংস্থা বাইরে থেকে এসে আজ আমাকে রাজনৈতিক জ্ঞান দিচ্ছে! আমি রোজগার করার জন্য রাজনীতি করিনি। কিন্তু ওই সংস্থাটি টাকা নিয়ে ভোটের কাজ করে। সে ভাবেই আজ এসেছে আমাকে জ্ঞান দিতে। তাই দীর্ঘদিন রাজনীতি করার পর ওই সংস্থার কর্মী একটি ছেলের কাছে আজ আমাকে শুনতে হচ্ছে, ভোট নিয়ে নাকি আমাকে ভাবতে হবে না। তারা নাকি ভাবার জন্য এসে গিয়েছে! তারাই নাকি ভোট করবে! তারা নাকি তৃণমূলকে জেতানোর জন্য এসেছে!’ এ কথা বলার পর তিনি প্রশ্ন তুলেছেন, ‘এটা কি বিহার, নাকি উত্তরপ্রদেশ? নাকি, দিল্লি বা মধ্যপ্রদেশ? সংস্থাটির জানা উচিত, বাংলার একটা নিজস্ব সংস্কৃতি আছে। বাংলার মানুষ আবেগ দিয়ে রাজনীতি করে। সেই আবেগ বিক্রি করে তারা আজ জাতপাতের ভোট করাতে এসেছে আমাদের রাজ্যে!’
শীলভদ্র দত্তর এই অভিযোগের পরই বাংলার রাজনীতিতে ফের জল্পনা শুরু হয়ে গিয়েছে। তৃণমূলের দাপুটে নেতা শুভেন্দু অধিকারীকে নিয়ে যখন রাজ্য রাজনীতি তোলপাড় হচ্ছে, তখন শীলভদ্রের বিস্ফোরণ তাতে আরও রং চড়াবে বলে ধারণা রাজনীতি বিশেষজ্ঞদের। যদিও রাজ্যের গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারীকে নিয়ে রাজ্য রাজনীতি যতটা আলোড়িত হচ্ছে, শীলভদ্রকে নিয়ে ওই দলের অভ্যন্তরে ততটা জলঘোলা হবে না বলেই তাঁদের বিশ্বাস। তবে তিনি যেহেতু ব্যারাকপুরের বর্তমান বিধায়ক, তাই তাঁর বক্তব্যের একটা গুরুত্ব রাজনৈতিক মহলে রয়েছে। যে দলের প্রধান নেত্রী যেখানে স্বয়ং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, সেখানে তাঁর এই বিস্ফোরণ তাৎপর্যহীন নয় বলেই মনে করা হচ্ছে। তবে মুকুল রায়ের মতো তিনি বিজেপিতে যাচ্ছেন কিনা, তা নিয়ে এখনও কোনও ইঙ্গিত পাওয়া যায়নি। তিনি যেমন বিজেপির প্রশংসা করেননি, তেমনই কোনও বিজেপি নেতার সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ রয়েছে বলেও প্রমাণ পাওয়া যায়নি। এমন কথাই জানিয়েছেন তৃণমূলের জেলা নেতাদের একাংশ।
তবে শীলভদ্রের এদিনের অভিযোগ সম্পর্কে জবাব এসেছে উত্তর ২৪ পরগনার জেলা তৃণমূলের কাছ থেকেও। দলের তরফে জানানো হয়েছে, শীলভদ্র দত্তের কাজে দলের তরফে কোনও রকম বাধা কখনও দেওয়া হয়নি। তা হলে শীলভদ্রবাবু এমন মন্তব্য করছেন কেন? এক তৃণমূল নেতা জানিয়েছেন, সেই কারণ তাঁর জানা নেই। এদিকে, বিক্ষুব্ধ বিধায়কের বিস্ফোরক মন্তব্য নিয়ে সতর্ক প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে বিজেপি। বলেছে, ‘তৃণমূলের সব নেতাই যে খারাপ, তা নয়। অনেক ভালো নেতা আছেন। কিন্তু তাঁদের দমবন্ধ অবস্থা হয়েছে এখন। নভেম্বর থেকেই দেখা যাবে ভয়ঙ্কর ঝড় আসছে তৃণমূলের অভ্যন্তরে। দলটা আদৌ থাকবে কিনা, সন্দেহ আছে।’