বিশেষ প্রতিবেদন,কলকাতা:আমফানে ক্ষতিগ্রস্তদের ত্রাণ এবং ক্ষতিপূরণ দেওয়ার ক্ষেত্রে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছিল পশ্চিমবাংলার শাসক দল তৃণমূল নেতা ও কর্মীদের বিরুদ্ধে। অভিযোগ তুলেছিলেন বিরোধী দলের নেতা–নেত্রীরা। সংবাদ মাধ্যমেও সে–সব খবর ফলাও করে প্রকাশিত হয়। তার পরই রাজ্য সরকারের তরফে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া শুরু হয়। যদিও সেই ব্যবস্থার পদ্ধতি নিয়েও বিরোধী দলগুলি প্রশ্ন তুলেছিল। এবার বড় ধরনের প্রশ্ন তুলে বিতর্ক তৈরি করলেন শাসক দলেরই নেতা তথা রাজ্যের গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর বক্তব্যে রীতিমতো শোরগোল পড়ে গিয়েছে রাজ্য রাজনীতিতে।
দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে জেলায় জেলায় তৃণমূলের আঞ্চলিক নেতা থেকে কর্মীদের দল থেকে সাসপেন্ড করা শুরু হয়েছে। তবে বিষয়টি নিয়ে খুব একটা খুশি নন রাজ্যের বনমন্ত্রী তথা জেলা তৃণমূলের কো–অর্ডিনেটর রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়। শনিবার দলের শুদ্ধিকরণ প্রক্রিয়া প্রসঙ্গে তিনি সাফ বলে দেন, ‘প্রকৃত শুদ্ধিকরণ করতে হলে আগে রাঘববোয়ালদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। কিছু চুনোপুটি ধরে এই দুর্নীতি দূর করা যাবে না। সার্বিক ভাবে দুর্নীতি দূর করতে না পারলে এই সমস্যা থেকেই যাবে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের যে ভাবমূর্তি, তা রক্ষা করতে গেলে দল থেকে দুর্নীতি দূর করতে হবে।’ এখানেই থেমে যাননি তিনি। কিছুটা অভিমানের সুরে আরও বলেছেন, ‘অনেক সময় দক্ষ লোকের যথাযথ বিচার হয় না। যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও অনেকে কাজ করার সুযোগ পান না। আমিও কাজ করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু আমাকে কাজ করতে দেওয়া হয়নি।’
রাজীবের এই মন্তব্য প্রকাশ্যে আসার পর পাল্টা মুখ খুলেছেন তৃণমূলের অন্য নেতা–মন্ত্রীরা। মন্ত্রী অরূপ রায় বলেছেন, ‘রাজীবের ভিন্নমত থাকতেই পারে। কিন্তু সে কথা প্রকাশ্যে বলবে কেন? এ ভাবে অভিযোগ করে দলেরই বিরুদ্ধাচরণ করেছে সে।’ মুখ খুলেছেন ফিরহাদ হাকিমও। রাজ্যের মন্ত্রী তথা কলকাতার প্রধান পুরপ্রশাসক ফিরহাদ বলেছেন, ‘আমি জানি না রাজীব ঠিক কী বলেছে! শুনেছি, রাজীব এ–সব কথা বলেছে সংবাদ মাধ্যমের সামনে। তাই সে কথা নিয়ে কোনও মন্তব্য করা আমার উচিত নয়।’ পাশাপাশি তিনি এ কথাও বলেছেন, ‘রাজীব দলের গুরুত্বপূর্ণ নেতা। এ ব্যাপারে তার যদি আলাদা কোনও বক্তব্য থাকে, তা দলের সামনে বলতে পারত। আমাকেও আলাদা ভাবে বলতে পারত। সংবাদ মাধ্যমের সামনে এ ভাবে এ–সব কথা বলে ঠিক করেনি। আর এ নিয়ে দল কী ভাবছে, তা আমি সংবাদ মাধ্যমকে বলব না। দল মনে করলে বলবে।’
অন্যদিকে, রাজীবের এই মন্তব্য নিয়ে রীতিমতো জল্পনা শুরু হয়েছে রাজ্য রাজনীতিতে। অনেকেই বলছেন, তৃণমূলের অনেক নেতার সঙ্গেই নাকি রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঠিক মিলছে না। দলের একাংশ মনে করছেন, তাঁর সঙ্গে বিজেপির যোগাযোগ হয়ে থাকতে পারে। হয়তো সে–দিকেও তিনি ধীরে ধীরে পা বাড়াতে পারেন। তাই এখন দলের বিরুদ্ধে মন্তব্য করছেন। আর সে–ভাবেই বিজেপির হাত শক্ত করতে চাইছেন তিনি।
তবে এদিন রাজীবের কথাকে সমর্থন করেছেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। তবে রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম না করে তিনি বলেছেন, ‘তৃণমূলই এখন স্পষ্ট করে দিচ্ছে, তাদের দলে দুর্নীতির কোনও সীমা–পরিসীমা নেই। মানুষ বিরুদ্ধে চলে গিয়েছে। বিপদ বুঝে এখন তৃণমূল মহান সাজতে চাইছে। তাই শুদ্ধিকরণের নামে রাঘববোয়ালদের বাদ দিয়ে চুনোপুঁটিদের ধরা হচ্ছে। সেইজন্যই মানুষ আজ শাসক দলের দুর্নীতির বিরুদ্ধে রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ করছে।’