1. abrajib1980@gmail.com : মো: আবুল বাশার রাজীব : মো: আবুল বাশার রাজীব
  2. abrajib1980@yahoo.com : মো: আবুল বাশার : মো: আবুল বাশার
  3. farhana.boby87@icloud.com : Farhana Boby : Farhana Boby
  4. mdforhad121212@yahoo.com : মোহাম্মদ ফরহাদ : মোহাম্মদ ফরহাদ
  5. shanto.hasan000@gmail.com : Rakibul Hasan Shanto : Rakibul Hasan Shanto
  6. masum.shikder@icloud.com : Masum Shikder : Masum Shikder
  7. shikder81@gmail.com : Masum shikder : Masum Shikder
  8. riyadabc@gmail.com : Muhibul Haque :

মুসা নবীর এক্সোডাস এবং আমাদের সরকারের কভিড-১৯ ব্যবস্থাপনার হালচাল

  • Update Time : শুক্রবার, ১৯ জুন, ২০২০
  • ৮২৮ Time View

প্রত্যয় প্রবাস ডেস্ক:করোনার তাড়া খেয়ে বা অন্য প্রয়োজনে বিদেশ থেকে যখন লাখো প্রবাসী ভাইবোন দেশে ফিরছিলেন, তখনই বোঝা দরকার ছিল, এই উল্টো-এক্সোডাস দেশের ভেতরেও ঘটবে। হজরত মুসা (আ.) মিসর থেকে তাঁর অনুসারীদের নিয়ে পালাচ্ছিলেন কেবল ফেরাউনের ভয়েই নয়, মহামারির কবল থেকে তাঁর লোকদের বাঁচাতে। কিন্তু ফেরাউনের সাম্রাজ্য তো দাসের শ্রম ছাড়া চলবে না। রাজ্যপাট চলবে না, ভোগবিলাস চলবে না, ক্ষমতা ধরে রাখা যাবে না। এ জন্যই মুসা নবীকে তাঁর জাতির লোকজন নিয়ে পালাতে হয়েছিল। ইতিহাসে এর নাম দেশান্তর বা এক্সোডাস। আসলে তারা ফিরতে চাইছিল তাদের আপন দেশে—যেখান থেকে তাদের আনা হয়েছিল ফেরাউনের রাজধানীতে। তাই ফেরাউনের অত্যাচার এবং মহামারি ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের দ্বিগুণ বিপদে মানুষ ঘরে ফেরার বিপজ্জনক রাস্তাই বেছে নিয়েছিল।

করোনার আতঙ্কে আমরা এখন সে ধরনের এক্সোডাসই দেখছি। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের কালরাতের পর এটা আরেকটা কালরাত। সে সময়েও মানুষ এভাবে বাঁচার জন্য দেশগ্রামে ছুটেছিল। সে সময়ও রাজধানী এমনই অনিরাপদ বোধ হয়েছিল তাদের। এখানে তো দাফন-কাফন ও কবরের উপায়টাও নেই।

এখন বিদেশের মানুষ দেশে আসছে, ঢাকার মানুষ ছুটি পাওয়ার আগে তো বটেই, পাওয়ার পরে বহুগুণে রাজধানী ছাড়ছে। বাসে, ট্রেনে, ফেরিতে, লঞ্চে ও মহাসড়কে সেসব দৃশ্যের জন্ম হচ্ছে, যা হয় ঈদের ছুটিতে। দৌড়ে, ঝুলে, গাদাগাদি করে মানুষ ঢাকা ছাড়ছে। জনসমাগম এড়ানোর কথা বলা হলেও কেউ শুনছে না। তারা পড়িমরি করে পৌঁছাতে চাইছে নিজ গ্রামে, দ্যাশের বাড়িতে, পরিবার, আত্মীয়স্বজন ও গ্রামবাসীর কাছে।

তারা দেখেছে ঢাকায় কোনো আশ্রয় নেই। অনেকেই বাড়িভাড়া, মেসভাড়া, বস্তির ঘরভাড়া দিতে পারবে না। অনেকেই খাদ্যের বাড়তি জোগান পারেনি বা পারবে না। তারা গত ১৫ দিনে এটাও দেখেছে, করোনা মোকাবিলায় সরকারি আয়োজন অতি সামান্য। চিকিৎসকেরা পর্যন্ত সুরক্ষাপোশাক পাচ্ছেন না। অসুস্থ হলে নেওয়ার মতো হাসপাতালও কম। করোনা পরীক্ষার সরঞ্জাম নেই, আইইডিসিআর রোগীদের ফিরিয়ে দিচ্ছে। এ অবস্থায় ঢাকার টোলারবাগে চিকিৎসাহীনতায় মারা যাওয়া এক পিতার পুত্রের আহাজারির সংবাদ অনলাইনে বিস্ময়কর মনোযোগ পায়।

একটা ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে তো মহামারি মোকাবিলা করা লাগে। সেটা এখনো নেই আমাদের। রূপরেখা নেই, ভরসা নেই। এই অবস্থায় মানুষ কেন ঢাকায় পড়ে থাকবে? তাঁদের মনে হয়ে থাকতে পারে যে এখানে একা একা মরার চেয়ে বাড়ি গিয়ে আপনজনের মধ্যে মরা ভালো। সেখানে অন্তত সেবা করার লোক পাওয়া যাবে, অভাবে সাহায্য পাওয়া যেতে পারে। তা ছাড়া আপনজনের মধ্যে আপন পরিবেশে দাঁড়িয়ে মানুষ বেশি আত্মবিশ্বাস পায়। দশজনে মিলে বুদ্ধি করে চলতে পারে।

তাই হুড়মুড় করে ঢাকা ছাড়ার মধ্যে কেবল পলায়ন নেই, আছে করোনা মোকাবিলার প্রস্তুতির প্রস্তুতি। সেই প্রস্তুতির আগের ছোটাছুটি, অস্থিরতা, ভয়—এখনকার আচরণে ফুটে উঠছে।

কথায় বলে, আগের হাল যেদিকে, পিছের হালও সেদিকে যায়। মানুষ বিশৃঙ্খল, কারণ রাষ্ট্র বিশৃঙ্খল ও অপ্রস্তুত। যদি সরকার প্রকৃত পরিস্থিতি সবাইকে জানিয়ে ধাপে ধাপে কী করতে হবে তা জানাত, যদি একের পর একেকটি খাত বন্ধ করে ওই সব খাতের লোকদের প্রস্তুতির নির্দেশনা দিত, যদি ঢাকায় যথেষ্ট ফিল্ড হাসপাতাল, চিকিৎসা প্রস্তুতি নিত, যদি সরকারিভাবে দরিদ্রদের সুরক্ষা সাবান, মাস্ক ইত্যাদি দিত, যদি দ্রব্যমূল্য বাড়তে না দিত, যদি পশ্চিম বাংলা ও কেরালার রাজ্য সরকারের মতো দরিদ্রদের ছয় মাসের খাদ্যসাহায্য দেওয়ার ঘোষণা দিত, তাহলে মানুষ এভাবে বনপোড়া হরিণের মতো ছুটত না। যদি সরকার জরুরি পরিস্থিতির কায়দায় শৃঙ্খলা ও দূরদর্শিতা নিয়ে কাজ করত, বেশির ভাগ মানুষও তাদের অনুসরণ করত। সঠিক নেতৃত্ব ও দিশা পেলে এই বিশৃঙ্খল জনতাও বিরাট শক্তি হয়ে উঠতে পারে, তা আমরা মুক্তিযুদ্ধসহ বড় বড় দুর্যোগে দেখেছি।

বাংলার মানুষের সেই সুনাম আছে। এরই মধ্যে তরুণেরা নেমে পড়েছে। বিজ্ঞানী এগিয়ে আসছেন করোনা পরীক্ষার যন্ত্রের উদ্ভাবন নিয়ে, ছাত্রছাত্রীরা রাস্তায় সাবান-স্যানিটাইজার বিলি করছে, বুয়েট সমাজ ডাক্তারদের জন্য পিপিই বানাচ্ছে। রানা প্লাজার উদ্ধারের কায়দায় যার যা কিছু আছে তা নিয়ে দাঁড়ানোর লক্ষণ ফুটে উঠছে।

আমরা প্রাকৃতিক দুর্যোগে কাবু হই না, কাবু হই সামাজিক ও রাজনৈতিক দুর্যোগে।

করোনার দুর্যোগে দিশাহীন মানুষ যা ভালো মনে করেছে, তা করছে। তারা প্রথমে বিদেশে বা রাজধানীর বৈরী পরিবেশ ছেড়ে সহায়-সাহায্যের খোঁজে নিজ নিজ গ্রাম ও এলাকায় ছুটছে।

আমাদের এখন এলাকায় থেকে কী করা যাবে আর কী করা যাবে না, জীবনের সেই সুশাসনের নির্দেশমালা পাঠাতে হবে।

সেখানে যাতে টোলারবাগের সুরক্ষা কার্যক্রমের মতো ছোট ছোট সামাজিক কাঠামো গড়ে ওঠে। প্রশাসন, রাজনীতিক, স্বাস্থ্য প্রশাসন ও এলাকাবাসী নিয়ে কমিটি গড়ে তুলে কাজ করতে হবে। এলাকা হোক সামাজিক প্রতিরোধের ভিত্তি। প্রতিটি মোবাইল নম্বর ও মোবাইল সেটকে যোগাযোগ প্রচার নজরদারির হাতিয়ার বানিয়ে ফেলতে হবে।

বড় দুর্যোগে মানুষ অন্য মানুষের সহায়, আপনজনের মহব্বত আর সৃষ্টিকর্তার আশ্রয় চায়। সে জন্য নিজের কমিউনিটিতে ফিরতে চায়। সেখানে অন্তত একা একা মরবে না। চিকিৎসা তো এখানেও নেই, সেখানেও নেই। অন্তত পরিবার, সমাজ আছে, তারা ফেলে দেবে না। সে জন্য তারা বাড়ি যায়—পালায়। ঘুরে দাঁড়ানোর আগে, এটা তাদের প্রস্তুতি। এই কাজটা সুশৃঙ্খলভাবে হতে পারত, ধাপে ধাপে হতো পারত, সংক্রমণবিরোধী পথে হতে পারত। তা যে হয়নি, তার দায় সাধারণের নয়, অসাধারণদের।

এজমালি সংস্কৃতি, দেশগ্রামের সংস্কৃতি সহজে বদলায় না। আছোঁয়া থাকার নতুন সংস্কৃতিকে দেশীয় সংস্কৃতির সঙ্গে মিলিয়ে কায়েম করতে হবে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনাতেও দেশীয় সংস্কৃতি অনুযায়ী রোগ প্রতিরোধের পথ ও কৌশল ঠিক করার কথা বলা হয়েছে। তার জন্য সবার আগে বিশ্বাস ও আস্থা ফিরিয়ে আনতে হবে। সরকার যদি জনগণকে বিশ্বাস করে তাদের পাশে থাকার পথ নেয়, মানুষ যদি সরকারের কাজে ও কথায় আস্থার লক্ষণ পায়, তাহলে বাজি ধরে বলতে পারি, মানুষ অনেকটাই জেগে উঠবে। ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, বাংলাদেশিদের মতো জেগে ওঠার গুণ কম জাতিরই আছে।

গত ৫০ বছরে অনেক দেশই ধ্বংস হয়ে গেছে, বাংলাদেশ কিন্তু এগিয়েছে। এটাই এই মাটির ও মানুষের ধারা। একে বুঝে একে শ্রদ্ধা করে চললে, মানুষ সময়ের ডাকে সাড়া দেবেই। কিন্তু শুভবোধ ও দায়িত্বশীলতা আগে আসতে হবে ওপর থেকে, তলার মানুষ সঠিক নেতৃত্ব পেতে প্রস্তুত।

শহীদুজ্জামান কাকন
অর্থনীতিবিদ,সুইডেন
কিশোরগন্জ২(কটিয়াদী,পাকুন্দিয়া)।

Please Share This Post in Your Social Media

এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ দেখুন..