বিশেষ প্রতিবেদন,কলকাতা:
‘অমানবিক!’ এই মন্তব্য বাংলার রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড়ের। নিঃসন্দেহে ভয়ঙ্কর চিত্র। বুধবার মৃতদেহ সৎকার নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে। সেই ভিডিটিতে দেখা গিয়েছে, একটি আধপোড়া মৃতদেহ হুকে গেঁথে টেনে নিয়ে যাচ্ছেন একজন। তার পর সেটি তোলা হচ্ছে কলকাতা করপোরেশন লেখা একটি গাড়িতে। ভিডিওটির সত্যাসত্য সম্পর্কে কিছুই জানা যায়নি। ‘দৈনিক প্রত্যয়’ও তা যাচাই করে দেখেনি। কিন্তু সেই ভিডিও চিত্র প্রকাশ্যে আসতেই চারদিকে শোরগোল পড়ে যায়। সমালোচনায় মুখ হয়ে ওঠেন অনেকেই।
ছবিটি দেখে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন স্বয়ং রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড়ও। তিনি টুইট করে লিখেছেন, ‘এতটাই ভয়ঙ্কর সেই ছবি যে, তা শেয়ার করতে পারলাম না। মৃতদেহের ওপর সকলেরই সর্বোচ্চ সম্মান প্রদর্শন করা উচিত। আমাদের ঐতিহ্য কিন্তু সেটাই। তবে যাঁরা ওভাবে দেহ টেনে নিয়ে যাচ্ছেন, তাঁরা কি সে কথা ভুলে গিয়েছেন?’ সেই সঙ্গে তিনি এই ঘটনার জন্য রাজ্যের স্বরাষ্ট্র সচিবের কাছে ব্যাখ্যা তলব করেছেন। পাশাপাশি ওই টুইটের মাধ্যমে দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়েরও। সন্ধের সময় রাজ্যপাল ফের টুইট করে জানান, রাজ্য সরকারের তরফে স্বরাষ্ট্র সচিব গাফিলতির কথা স্বীকার করে নিয়েছেন। শুধু তাই নয়, এ রকম ঘটনা আর ঘটবে না বলেও তিনি জানিয়েছেন। বলেছেন, মৃতদেহ সৎকারে সরকার সবসময় সতর্ক থাকবে।
জানা গিয়েছে, কলকাতার নীলরতন সরকার হাসপাতাল এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, তারা ১৪টি বেওয়ারিশ মরদেহ কলকাতা পুরসভাকে হস্তান্তরিত করেছে। তবে সেই দেহগুলি করোনা আক্রান্ত ছিল না। এদিকে, কলকাতা পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, যেহেতু ধাপার মাঠে করোনা আক্রান্ত মৃতদের দেহ সৎকার করা হচ্ছে, তাই আদি গড়িয়া শ্মশানে সেই দেহগুলি দাহ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সেই কারণে দেহগুলি সেখানে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু, একসঙ্গে এতগুলি দেহ সেখানে আসতে দেখে স্থানীয়দের সন্দেহ হয়। অনেকেই ভাবেন, করোনায় আক্রান্তদের গোপনে পুড়িয়ে ফেলার জন্য সেখানে দেহগুলি আনা হয়েছে। তার পরই তাঁরা বিক্ষোভে ফেটে পড়েন।
সেই বিক্ষোভের জেরে দেহগুলির সৎকার আটকে যায়। খবর পেয়ে সেখানে ছুটে আসেন স্থানীয় তৃণমূল নেতাদের সঙ্গে পুলিশও। তাঁরা স্থানীয়দের বোঝানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু লাভ হয়নি। বিক্ষোভে অটল থাকেন স্থানীয়রা। বাধ্য হয়ে দেহগুলিকে ফের করপোরেশনের গাড়িতে তোলা হয়। সেই সময় হুকে গেঁথে দেহগুলি টেনে নিয়ে যাওয়া হয়। সেই সময়ই দৃশ্যগুলি মোবাইলে ভিডিও করে রাখেন স্থানীয়রা। সেই ভিডিওই সারাদিন ধরে ভাইরাল হতে থাকে। সমালোচনা শুরু হয়ে যায় বিভিন্ন মহলে। রাজনৈতিক নেতাদের পাশাপাশি অরাজনৈতিক ব্যক্তিরাও ঘটনার সমালোচনা করেন। সোশ্যাল মিডিয়াতেও সমালোচনার ঢেউ ওঠে।
গড়িয়া শ্মশানের ভাইরাল হওয়া ভিডিও নিয়ে সমালোচনায় মুখর হয়ে উঠেছেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। তিনি বলেছেন, ‘মাওবাদীদের দেহ নিয়ে আসার ধরন নিয়ে এক সময় মানবিকতার প্রশ্ন তুলেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এখন বোঝা যাচ্ছে, মাওবাদীদের মৃতদেহের প্রতিই শুধু তাঁর সম্মান রয়েছে। কিন্তু করোনা আক্রান্ত মৃতদের প্রতি ন্যূনতম সহানুভূতিও নেই।’ তিনি আরও বলেছেন, ‘খুবই ভয়ঙ্কর, নির্মম, অমানবিক ঘটনা। দেহগুলি গলে গিয়েছে।’ তাঁর দাবি, ‘পরিচয় গোপন করে করোনায় মৃতদের দেহ লুকিয়ে অ্যাসিড দিয়ে পুড়িয়ে দিচ্ছে রাজ্য সরকার।’
ঘটনায় ক্ষুব্ধ সিপিএমও। দলের নেতা সুজন চক্রবর্তী ঘটনার তীব্র নিন্দা করে কলকাতার পুরপ্রশাসক ফিরহাদ হাকিমকে চিঠি লিখেছেন। চিঠিতে তিনি পুরো ঘটনাটি জানতে চেয়েছেন। সত্যিই যদি তেমন ঘটনা ঘটে থাকে, তা হলে একই সঙ্গে তিনি দোষীদের শাস্তিরও দাবি জানিয়েছেন।