প্রত্যয় ইউরোপ ডেস্ক: ইউরোপীয়দের একটা বড় অংশ মনে করছে, ট্রাম্প পুনর্নির্বাচিত হওয়ার মানে হলো যুক্তরাষ্ট্র পশ্চিমা জোটের নেতৃত্ব ছেড়ে দিচ্ছে। নিউ ইয়র্ক টাইমস-এর এক বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, ন্যাটোর সদস্যপদ নিয়ে প্রশ্ন তোলা ছাড়াও ইউরোপীয় ইউনিয়নকে প্রতিদ্বন্দ্বী ও শত্রুপক্ষ আখ্যা দিয়ে থাকেন ট্রাম্প। শুধু তা-ই নয়, ইউরোপীয় দেশগুলোর মধ্যে দ্বন্দ্ব তৈরিরও চেষ্টা করেছেন তিনি। রাষ্ট্র হিসেবে যুক্তরাজ্যের অবস্থান ট্রাম্পের পক্ষে হলেও সেখানকার সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ তাকে নেতিবাচকভাবে দেখে থাকেন।
অনেক ইউরোপীয়ই আশঙ্কা করছেন, দ্বিতীয় দফায় নির্বাচিত হলে ট্রাম্প নিজেকে নিয়ন্ত্রণ না করে আরও বেশি কট্টর আচরণ করতে পারেন। আরও বেশি করে নিজের খেয়াল খুশিমতো চলবেন। যেমন করে কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে তিনি মহামারি বিশেষজ্ঞদের উপদেশ অগ্রাহ্য করে গেছেন, মাস্ক পরা নিয়ে হাসি-ঠাট্টা করেছেন এবং বলেছেন ভাইরাস চলে যাবে; তেমন আচরণগুলোরই ধারাবাহিকতা রক্ষা করতে দেখা যেতে পারে ট্রাম্পকে।
জার্মান সংবাদপত্রগুলোর প্রথম পাতা ট্রাম্পের সমালোচনায় ভরে থাকে। ‘উন্মাদ ট্রাম্প ও আমেরিকান বিপর্যয়’- এমন অনেক শিরোনাম দিয়ে অগণিত পডকাস্ট ও ডকুমেন্টারি তৈরি হয়েছে। এদিকে ইউক্রেনের নাগরিকদের কারও কারও আশঙ্কা, একটি অপরিণত বিজয়ের বৈধতা দেওয়ার জন্য অভিনন্দন বার্তা দিতে প্রেসিডেন্ট ভোলোডাইমার জেলেনস্কি চাপ দিতে পারেন। কিয়েভভিত্তিক নিউ ইউরোপ সেন্টারের পরিচালক আলিয়োনা গেতমানচুক বলেন, ‘আমরা অসহায়, কারণ আমরা যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক সমর্থনের ওপর নির্ভরশীল।’
ফরাসি প্রতিরক্ষা বিষয়ক বিশ্লেষক ফ্রাঁসোয়া হেইসবার্গ বলেন, ‘বাইডেনের প্রেসিডেন্সিকে তুলনামূলকভাবে সভ্যতায় প্রত্যাবর্তনের মতো করে স্বাগত জানানো হবে।’ ট্রাম্প প্রশ্নে ব্রিটিশ কর্মকর্তাদের মনোভঙ্গিটা আবার ভিন্ন। কারণ, ট্রাম্প ব্রেক্সিটকে দৃঢ় সমর্থন দিয়েছেন। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের সঙ্গে তার সম্পর্কটাও ঘনিষ্ঠ।
অপরদিকে ব্রেক্সিটের বিরোধিতা করেছেন বাইডেন। ব্রিটিশ কর্মকর্তাদের আশঙ্কা, তাদের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকারে থাকা অ্যাংলো-আমেরিকান বাণিজ্য চুক্তিতে সংক্ষিপ্ত পরিবর্তন নিয়ে আসতে পারেন বাইডেন। শুধু তা-ই নয়, বাইডেন নির্বাচিত হলে তার সহযোগীদের সঙ্গে পুরনো কিছু তিক্ততার মীমাংসা করতে হবে জনসনকে। কারণ, ২০১৬ সালে সাবেক ডেমোক্র্যাট দলীয় প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামাকে নিয়ে আক্রমণাত্মক মন্তব্য করেছিলেন তিনি।
তবে সাধারণ ব্রিটিশ নাগরিকদের মধ্যে জো বাইডেনের নির্বাচিত হওয়া নিয়ে কোনও আতঙ্ক নেই। কারণ, সাধারণ ব্রিটিশ নাগরিকদের কাছে ট্রাম্প এতটাই অজনপ্রিয় যে, তুমুল বিক্ষোভের মুখে যুক্তরাজ্য সফরের পরিকল্পনা বাতিল করতে হয়েছিল ট্রাম্পকে। জনমত জরিপেও দেখা গেছে, ব্রিটিশ নাগরিকদের মধ্যে বাইডেনের প্রতি নিরঙ্কুশ সমর্থন রয়েছে।
মধ্য ও পূর্ব ইউরোপের নেতারা রুশ সীমান্তে মার্কিন সেনা উপস্থিতি জোরদারের কারণে ট্রাম্পের প্রশংসা করেছেন। বসনিয়ান সার্ব নেতা মিলোরাড ডোডিক বাইডেনকে ‘সার্ব বিদ্বেষী’ বলে আখ্যা দিয়েছেন। তিনি সার্বিয়ান-আমেরিকানদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন ট্রাম্পকে ভোট দেওয়ার জন্য।