নিজস্ব প্রতিবেদকঃ অনলাইন প্ল্যাটফর্মে ভিডিও আপলোডের মাধ্যমে প্রায় লক্ষাধিক তরুন-তরুনীর ভাগ্য বদলে দিয়েছেন এটিএম স্যার। তার ভিডিও দেখে অনেক বেকার তরুন-তরুনীরা ইংরেজি এবং ফ্রিল্যান্সিং শিখে আজ সফল, আর এভাবেই নিজের ভাগ্য বদল করেছেন লক্ষাধিক তরুন-তরুনী।
জানা গেছে, ইংরেজির পাশাপাশি বেকারদের সমৃদ্ধ জীবন গড়তে অনুপ্রেরণা দেন এটিএম মাহমুদ। তিনি সকলের কাছে ‘এটিএম স্যার’ হিসেবেই বেশি পরিচিত।
এটিএম স্যারের ভিডিও দেখে নতুন করে পড়ালেখার প্রতি অনুপ্রেরণা পেয়েছেণ অনেকেই। তাদের মধ্যে একজন উবার চালক শিহাব। যিনি পেয়েছেন সফলতা। এই বছর এসএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে এখন কলেজে ভর্তি হয়েছেন।
সদ্য কলেজে ভর্তি হওয়া শিহাব জানান, “আমি স্যারের মতো গুছিয়ে কিছুই বলতে পারব না। কিন্তু আমার কাছে তিনি একজন ম্যাজিশিয়ান, একজন মানবতার ফেরিওয়ালা। স্যারের কারনে আমি পড়াশোনায় গ্যাপ নিয়েই আবারও স্কুলে ভর্তি হই এবং ২০২৩ সালে এসএসসি পরীক্ষায় ৪.২৫ জিপিএ নিয়ে উত্তীর্ণ হই। আমি স্যারের কাছে কৃতজ্ঞ।”
উবার চালক শিহাব এখানেই থেমে থাকতে চান না, বরং উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হওয়ার আগ্রহ এখনও তার চোখে-মুখে বিদ্যমান। তাছাড়া নিজেকে একজন সফল ফ্রিল্যান্সার হিসেবে গড়ে তোলার স্বপ্ন দেখেন শিহাব।
শুধু শিহাব নয়; এমন অল্প শিক্ষিত কিংবা সুশিক্ষিত প্রায় লক্ষাধিক গ্রাম বাংলার বেকার তরুণ-তরুণীর সাফল্যের সাক্ষী হয়েছেন এটিএম স্যার।
এটিএম স্যার বলেন, আমি মনে করি, শিক্ষা মানুষের জন্মগত অধিকার। এই অধিকারে ধনী-গরীব কিংবা বয়স কোন বাঁধা হতে পারে না। আমি শুধু শিহাবের জানার আগ্রহকে জাগিয়ে তুলতে চেষ্টা করেছি। সে আমার অফিসে এসেও খানিকটা দ্বিধা-দ্বন্দ্বে ছিল সে পারবে কিনা! আমি শুধু তার ওই দ্বিধাটা কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করেছি। কারণ শিহাবের ওই কৃতজ্ঞতা মিশ্রিত হাসিমাখা মুখই আমার সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি।”
তার মতে, কোন কিছু পাওয়ার আশায় বা সমাজে আলোচনায় থাকতে তিনি এসব করেন না। তার মাধ্যমে যদি কিছু তরুণ সুপথে নিজেদের পরিচালিত করতে পারে সেই আনন্দ থেকে বঞ্চিত হতে চান না তিনি।
দেশের অসংখ্য তরুণ-তরুণীর বেকার অবস্থার জন্য দায়ী আমাদের ভঙ্গুর শিক্ষা ব্যবস্থা বলে মনে করেন এটিএম স্যার। তিনি বলেন, “পুঁথিগত বিদ্যার গোলকধাঁধায় আমরা আঁটকে গিয়েছি। প্রতিবছর যেসব গ্রাজুয়েট শিক্ষিত যুবক চাকরির বাজারে প্রবেশ করছে, এদের অধিকাংশই ব্যবহারিক শিক্ষা জ্ঞান নেই। যার ফলে ইংরেজী একটি আবেদনপত্র লিখতে বললে তারা তা সঠিকভাবে লিখতে পারে না। একটা জাতির পিছিয়ে পড়ার জন্য এটিই যথেষ্ট। এছাড়া চাকরি না পেয়ে এসব শিক্ষিত তরুণদের মাঝে এখন বাসা বাঁধছে হতাশা। হতাশাগ্রস্থ হয়ে তারা নিজেদেরকে সমাজ ও পরিবারের বোঝা মনে করছে। অথচ ইংরেজী ভাষায় দক্ষতা এবং যোগাযোগে নতুনত্ব আনতে পারলেই এসব তরুণই হয়ে উঠতে পারবে দেশের সম্পদ। ফ্রিল্যান্সিংসহ নিত্যনতুন পেশায় এখন বিশ্ব সমৃদ্ধ হচ্ছে। আমাদের তরুণদেরও যুগের সাথে তাল মিলিয়ে চলার জন্য নিজেদেরকে প্রস্তুত করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, আমি আমার ভিডিও কিংবা ক্লাসে এসব বিষয়েই মূলত ফোকাস করার চেষ্টা করি। কতটুকু পারছি জানি না, তবে শিহাবদের মতো স্বল্প শিক্ষিত কিংবা শিক্ষিত তরুণদের মাঝে বেঁচে থাকার তাগিদ জাগ্রত করতে পারলে আমি তৃপ্ত হই। একটা যুবকও যদি হতাশাগ্রস্থ হয়ে আত্মহত্যার দিকে পা বাড়ায়, দেশের একজন মানুষ হিসেবে সেই ব্যর্থতার দায় আমি এড়াতে পারি না।“
এটিএম স্যার জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত এই তরুণ-তরুণীদের নিয়েই কাজ করতে চান। যুবসমাজকে দিতে চান শিক্ষা ও শেখার এক আনন্দময় পরিবেশ। যে জগতে শিক্ষার্থীরা খুঁজে পাবে নিজেকে, বিভিন্ন সৃজনশীল কর্মকাণ্ডে নিজেকে সংযুক্ত করবে।