নিজস্ব প্রতিবেদক: উত্তর বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপটি এখন সুস্পষ্ট লঘুচাপে পরিণত হয়েছে। এ কারণে সাগর উত্তাল। এর প্রভাবে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ঝড়ো হাওয়া বইছে। কোথাও কোথাও ঝড়ো হাওয়ার সঙ্গে বৃষ্টিও হচ্ছে। বিশেষ করে দক্ষিণাঞ্চলের আবহাওয়া হঠাৎ করেই খারাপ হয়ে গেছে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদফতর। সাগরে তিন এবং নদীতে দুই নম্বর হুঁশিয়ারি সঙ্কেত দেখাতে বলা হয়েছে।
বৈরী আবহাওয়া ও নাব্য সঙ্কটের কারণে শিমুলিয়া-কাঁঠালবাড়ী নৌরুটে বুধবার থেকে লঞ্চ-স্পিডবোট চলাচল বন্ধ ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ। তবে এ নৌরুটে ৬টি ছোট ফেরি চলাচল করছে। বিআইডব্লিউটিএর পরিদর্শক মোহাম্মদ সোলেমান সাংবাদিকদের এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানান, বৈরী আবহাওয়ার কারণে প্রচণ্ড বাতাস বইছে পদ্মায়। তীব্র স্রোত ও নাব্য সঙ্কটের কারণে বুধবার সকাল থেকে এ নৌরুটে লঞ্চ এবং স্পিডবোট চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ করে দেওয়া হয়। তিনি আরও জানান, বেশ কিছুদিন ধরে তীব্র ঘূর্ণিস্রোত ও নাব্য সঙ্কটের কারণে পদ্মায় ফেরি চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। ফেরিগুলো মাঝপদ্মায় গিয়ে নির্দিষ্ট চ্যানেল থেকে ছিটকে গিয়ে ডুবোচরে আটকে যাচ্ছে। যে কারণে গন্তব্যে পৌঁছাতে সময় লাগছে দুই থেকে তিনগুণ বেশি। যার কারণে ফেরি চলাচলে অনেক বেগ পেতে হচ্ছে।
মুন্সীগঞ্জের মাওয়া ট্রাফিক পুলিশের ভারপ্রাপ্ত ইনচার্জ মো. সোহরাব হোসেন জানান, শিমুলিয়া ঘাটে পণ্যবাহী ট্রাক ও যাত্রীবাহী বাসসহ দুই শতাধিক যানবাহন ঘাট এলাকায় পারাপারের অপেক্ষায় রয়েছে। বৈরী আবহাওয়া ও মাঝপদ্মায় তীব্র বাতাসের কারণে দুর্ঘটনা এড়াতে পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া ও আরিচা-কাজিরহাট নৌরুটে বুধবার লঞ্চ চলাচল সাময়িকভাবে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে বলে জানান লঞ্চ মালিক সমিতির ম্যানেজার পান্নালাল নন্দী। সকাল ৯টার দিকে প্রথম ধাপে বন্ধ রাখা হয় লঞ্চ চলাচল। পরে কয়েকবার চেষ্টা করলেও পদ্মা উত্তাল থাকায় আর লঞ্চ চলাচল করতে পারেনি।
অন্যদিকে গত মঙ্গলবার রাত থেকে উপকূলে আবহাওয়া আবারও খারাপ হতে শুরু করে। রাতভর দমকা বাতাসের সঙ্গে চলে বৃষ্টি যা এখন পর্যন্ত অব্যাহত আছে। একই কারণে ভোলা-লক্ষ্মীপুর ও ভোলা-বরিশাল রুটের লঞ্চ এবং ফেরি চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। নদীর প্রবল স্রোত ও ঝড়ো বাতাসের আঘাতে ডুবে গেছে ইলিশা লঞ্চঘাটের পন্টুন। অন্যদিকে আবহাওয়াবিদ বজলুর রহমান জানান, সাগরে লঘুচাপটি সুস্পষ্ট লঘুচাপে পরিণত হয়েছে। ফলে সারা দেশেই ঝড়ো হাওয়া বইছে। বিশেষ করে দক্ষিণাঞ্চলে।
লঘুচাপটি মূলত ভারতের উড়িশা দিয়ে যেতে পারে। এখন উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে। আবহাওয়া অধিদফতর জানায়, লঘুচাপের প্রভাব এবং সাগরে মৌসুমি বায়ু সক্রিয় থাকায় দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বিশেষ করে দক্ষিণাঞ্চলে ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি হচ্ছে। ফলে সাগরে তিন এবং নদীতে দুই নম্বর হুঁশিয়ারি সঙ্কেত দেখাতে বলা হয়েছে। উত্তর বঙ্গোপসাগর এবং আশপাশের এলাকায় সুস্পষ্ট লঘুচাপটি উত্তর পশ্চিম বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে।
মৌসুমি বায়ুর অক্ষ রাজস্থান, সুস্পষ্ট লঘুচাপের কেন্দ্রস্থল বিহার, পশ্চিমবঙ্গ ও রাজস্থান হয়ে আসাম পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছে। এর বর্ধিতাংশ উত্তর বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। মৌসুমি বায়ু বাংলাদেশের ওপর সক্রিয় ও উত্তর বঙ্গোপসাগরে মাঝারি অবস্থায় বিরাজ করছে। পূর্বাভাসে বলা হয়, খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের অধিকাংশ জায়গায়, ঢাকা, সিলেট, ময়মনসিংহ, রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী বা অতিভারী বৃষ্টি হতে পারে।