1. abrajib1980@gmail.com : মো: আবুল বাশার রাজীব : মো: আবুল বাশার রাজীব
  2. abrajib1980@yahoo.com : মো: আবুল বাশার : মো: আবুল বাশার
  3. farhana.boby87@icloud.com : Farhana Boby : Farhana Boby
  4. mdforhad121212@yahoo.com : মোহাম্মদ ফরহাদ : মোহাম্মদ ফরহাদ
  5. shanto.hasan000@gmail.com : রাকিবুল হাসান শান্ত : রাকিবুল হাসান শান্ত
  6. masum.shikder@icloud.com : Masum Shikder : Masum Shikder
  7. shikder81@gmail.com : Masum shikder : Masum Shikder
  8. riyadabc@gmail.com : Muhibul Haque :

সংখ্যালঘু নির্যাতনে ঘেরা সাম্প্রদায়িকতার সংস্কৃতি: নাইম ইসলাম নিবির

  • Update Time : বৃহস্পতিবার, ৪ আগস্ট, ২০২২
  • ২৭৮ Time View

সংখ্যালঘু নির্যাতনে ঘেরা সাম্প্রদায়িকতার সংস্কৃতি

— নাইম ইসলাম নিবির

নড়াইল জেলার লোহাগড়ায় হিন্দু সম্প্রদায়ের বেশ কয়েকটি বাড়ি, দোকানপাট, মন্দিরে হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। এতে আহত হয়েছেন হিন্দু সম্প্রদায়ের অনেক মানুষ। এ ঘটনায় আমি ক্ষুব্ধ ও হতাশ। এই বাংলাদেশের জন্য ৩০ লাখ মানুষ বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়ে শহীদ হয়নি; ২ লাখ মা-বোন ত্যাগ স্বীকার করেননি। এত ত্যাগ, এত বিসর্জন, এত রক্ত যেই দেশ সৃষ্টির জন্য, সেই দেশে স্বাধীনতার ৫০ বছর পর এসেও যদি এ ধরনের বর্বরতা দেখতে হয়, তাহলে হতাশ না হয়ে উপায় নেই।

আসলে আমাদের নিজ ধর্মের প্রতিই গভীরতা নেই। কেউ একজন না বুঝে বা বুঝে আমাদের ধর্ম নিয়ে কিংবা মহানবীকে (সা.) নিয়ে ফেসবুকে কটূক্তি করবে আর আমরা সঙ্গে সঙ্গে সেই ধর্মের অনুসারীদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ব, হামলা করব- এটা গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। আমাদের ধর্ম এত হালকা নয়, কেউ একজন ফেসবুকে পোস্ট দিল আর তাতেই ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত লাগবে? ইসলাম ধর্মের অনুসারীদের মধ্যে শিয়া, সুন্নি, কুর্দি নানা তরিকা আছে। পীরের মুরিদের দিক দিয়ে বিবেচনা করলেও নানা মতের মানুষ পাওয়া যাবে।

কেউ মাজারের পক্ষে, কেউ বিপক্ষে। কেউ মিলাদ পড়া সমর্থন করে, কেউ করে না। তাই বলে কি মতের মিল না হলে আরেক মতাবলম্বীর লোকজন হামলা করবে? যারা ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের অভিযোগ তুলে নড়াইলে হিন্দু পরিবার এবং তাদের উপাসনালয়ে হামলা করল, তাদের বোঝা উচিত ছিল, কোনো ধর্মই এভাবে আরেক ধর্মের স্থাপনায় হামলা সমর্থন করে না।

এ ছাড়া আরেকটি দিকও বিবেচনা করতে হবে। সামাজিক মাধ্যমে যে পোস্টের জের ধরে উত্তেজনা ও উস্কানি; সেটা আদৌ অভিযুক্ত ব্যক্তি দিয়েছেন কিনা- তা প্রমাণসাপেক্ষ। অতীতে কয়েকটি ঘটনায় দেখা গেছে, এমন পোস্ট অভিযুক্ত ব্যক্তি দেননি। তাঁকে ফাঁসানোর জন্য অন্য কেউ দিয়েছে। এ ছাড়া এটা কাণ্ডজ্ঞান থেকেই বোঝা যায় যে, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের কেউ সংখ্যাগুরু সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে সামাজিক মাধ্যমে পোস্ট দেবে না।

আসলে নড়াইলের ঘটনা কোনো বিচ্ছিন্ন বিষয় নয়। এর আগেও আমরা এ ধরনের সাম্প্রদায়িক আগ্রাসন দেখেছি। ২০০১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সংখ্যালঘু পরিবারের মেয়েরা ধর্ষিত হয়েছে। আমরা পূর্ণিমা-মাহিমার কথা তো ভুলে যেতে পারি না! তবে এসব ক্ষেত্রে অভিযোগের তীর ছিল স্বাধীনতার চেতনাবিরোধী শক্তির দিকে। কিন্তু গত ১৩ বছর ধরে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পক্ষের দল রাষ্ট্রক্ষমতায়। তারপরও কেন রামু, নাসিরনগর, কুমিল্লা, রংপুর, সুনামগঞ্জ, সর্বশেষ নড়াইলে সংখ্যালঘুরা নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন? কেন সাঁওতালপল্লিতে আগুন দিয়ে ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়া হচ্ছে?

আসলে ধর্মীয় উগ্রবাদ সংক্রামক ব্যাধির মতো ছড়িয়ে পড়ছে। ইউটিউবে নারীবিদ্বেষী ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। অন্য ধর্মকে কটাক্ষ করে উস্কানিমূলক বক্তব্য প্রচার করা হচ্ছে। এসব কারণে কারও কারও মধ্যে উগ্রবাদ তৈরি হচ্ছে। উস্কানি দিয়ে সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা করানো সহজ হওয়ারই কথা। কারণ, আমরা এ দেশে দেখেছি ব্রেইনওয়াশ করে তরুণ সমাজের একটি অংশকে কীভাবে জঙ্গিবাদে ধাবিত করা হয়েছে। শহীদি মৃত্যুর কথা বলে আত্মঘাতী হওয়ার মন্ত্র মাথায় ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। তাদের কুমন্ত্রে যে শুধু মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরাই পা দেয়, এমনটা নয়। গুলশানের হলি আর্টিসান হামলায় নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, আওয়ামী লীগ পরিবারের সদস্যও দেখা গেছে।

ওয়াজ-মাহফিলের নামে কী ধরনের উগ্রবাদ ছড়ানো হচ্ছে, সেদিকে নজর দেওয়া উচিত। মাদ্রাসায় কী শেখানো হচ্ছে সেদিকেও নজর দিতে হবে। মাদ্রাসায় জাতীয় পতাকা ওড়ানো হয় কিনা; জাতীয় সংগীত পরিবেশন করা হয় কিনা- এসব দেখতে হবে। শুধু মাদ্রাসার দিকে নজর দিলে চলবে না। আমাদের স্কুল-কলেজের দিকেও দৃষ্টি রাখতে হবে। পোশাকের ব্যাপারে স্কুল-কলেজেও আপত্তিকর ঘটনা ঘটেছে। ১০-১৫ বছর আগে আমাদের দেশে হিজাব নিয়ে এত বাড়াবাড়ি ছিল না। সম্প্রতি হিজাবকে কেন্দ্র করে অনেক অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটে গেল। এসবের মধ্য দিয়ে মানুষে মানুষে বিদ্বেষ সৃষ্টি করা হচ্ছে। মতের মিল না হলে উস্কে দিয়ে হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ করানো হচ্ছে। একটি সংঘবদ্ধ চক্র ঠান্ডা মাথায় এসব অপকর্ম করে যাচ্ছে। মানুষের মধ্যে বিভাজন সৃষ্টি করছে। বিভাজন সৃষ্টির এই সংস্কৃতি দেশ ও জাতির জন্য মঙ্গলজনক নয়।

রাজধানীর ফার্মগেটে একজন নারী কলেজ শিক্ষক কপালে টিপ পরায় পুলিশ সদস্য তাঁকে ‘তুই’ বলে সম্বোধন করে কটূক্তি করেছিলেন। এ ধরনের আচরণ সরকার সমর্থন করছে- এটা বলার সুযোগ নেই। কিন্তু সরকার শক্ত পদক্ষেপ না নিলে এসব বন্ধ করা যাবে না। সেই পুলিশ সদস্যকে ঘটনার পর সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে; তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। কিন্তু এর পর তাঁর বিরুদ্ধে স্থায়ী বা দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির কথা সংবাদমাধ্যমে আসেনি। অপরাধের কঠোর শাস্তি হলেই এসব অপরাধ বন্ধ হবে, তা বলা যাবে না। তবে অনেকাংশে কমে আসবে। বিচারহীনতায় এসব অপকর্মের সুযোগ তৈরি হচ্ছে। বিচার হলে মানুষ আস্থা পেত। নাসিরনগরের ঘটনায় কঠোর শাস্তি হলে হয়তো নড়াইলের ঘটনা নাও হতে পারত।

সম্প্রতি জাতীয় সংসদে জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য ফখরুল ইমাম পাঠ্যপুস্তকে হিন্দু ধর্মের অগ্রাধিকার বিষয়ে বক্তব্য দিয়েছেন। মুহূর্তেই সেটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এখন সেই সংসদ সদস্য বলছেন, তিনি অধিবেশন কক্ষে সার্চ দিয়ে সেটি পেয়েছেন, মিলিয়ে দেখার সুযোগ পাননি। সেটি অনেক আগের সংবাদ। এখন তিনি তাঁর বক্তব্য প্রত্যাহারের জন্য স্পিকারকে বলেছেন। এই সংসদ সদস্য শুধু জনপ্রতিনিধি নন; তাঁর দলেরও গুরুত্বপূর্ণ পদে আছেন। না জেনে, না বুঝে এ ধরনের দায়িত্বহীন বক্তব্য দিয়ে তো রাজনীতি হয় না। রাজনীতি হলো জনগণের পক্ষে কথা বলা এবং সেটা হতে হবে দায়িত্বশীল।

গুজব রটিয়ে সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার ঘটনার পুনরাবৃত্তি যাতে না হয়, সে জন্য নড়াইলে হামলার সঙ্গে জড়িতদের কঠোর শাস্তির আওতায় আনতে হবে। হামলাকারীদের পাশাপাশি উস্কানিদাতাদেরও আইনের আওতায় নিয়ে আসতে হবে। স্বাধীন বাংলাদেশে যারা ধর্মীয় উন্মাদনার নামে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে চায়, তারা জাতীয় শত্রু। তারা আমাদের সভ্যতা ও সংস্কৃতির শত্রু।

নাইম ইসলাম নিবির : প্রধানমন্ত্রীর স্নেহধন্য রাজনীতিক ও কলাম লেখক
nayemulislamnayem148@gmail.com

Please Share This Post in Your Social Media

এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ দেখুন..