বাংলাদেশের অমর নায়ক সালমান শাহ। মৃত্যুর ২৭ বছর পরও তিনি চিরসবুজ ঢাকাই সিনেমার দর্শকের অন্তরে। এতটুকু কমেনি তার আবেদন ও জনপ্রিয়তা। আজও কোথাও সালমান শাহের সিনেমা দেখার সুযোগ পেলে সেটি লুফে নেন দর্শক। তার ভক্ত ছড়িয়ে রয়েছে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে।
এই সালমান শাহ তার ক্যারিয়ার শুরু করেছিলেন ছোটপর্দা দিয়ে। কাজ করেছেন কিছু খন্ড ও ধারাবাহিক নাটকে। এসব বেশিরভাগ নাটকে তিনি জুটি বেঁধেছেন শমী কায়সারের সঙ্গে। সালমান-শমীর মধ্যে ভালো বন্ধুত্বও ছিলো।
বন্ধু সালমানকে হারানোর শোক বয়ে বেড়ান আজও শমী। সেকথাই জানালেন তিনি একটি লাইভ অনুষ্ঠানে। জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত সুরকার ও জনপ্রিয় উপস্থাপক তানভীর তারেকের সঙ্গে সেই লাইভ আড্ডায় তিনি জানান আরও বেশ কিছু অজানা কথা।
সেখানে তিনি বলেন, ‘সালমান শাহ যখন মারা যায় আমি হুমায়ূন ফরীদি এবং সুবর্ণা আপা (সুবর্ণা মুস্তাফা) একটা শো করতে ভিয়েনাতে ছিলাম। আমরা জানতাম না যে সালমান শাহ মারা গেছে। আমার মনে আছে আমরা রিহার্সাল করে বেরিয়েছি, তখন কিন্তু টেলিফোন বুথ ছিলো। ফরীদি ভাই বললেন যে, ‘আমি একটু বাংলাদেশে ফোন করে আসি।’
আমরা আরও অনেক আর্টিস্টরা বাইরে দাঁড়ানো। ফরীদি ভাই বুথের ভেতরে আমরা দেখতে পাচ্ছি বসে গেছেন। ফোনে কথা বলতে বলতে। আমরা দৌঁড়ে বুথের কাছে গেলাম। গ্লাসের বুথ। ফরীদি ভাই কাঁদছেন। চিৎকার করে বলছেন সালমান মারা গেছে, সালমান বেঁচে নেই। আমরা কেউ তার কথাটা বিশ্বাস করতে পারলাম না।’
‘সেদিন সারাদিন যে আমাদের কি গেছে, আমরা সারাদিন কোনো রিহার্সাল করিনি। আমরা চুপচাপ বসে ছিলাম। আমরা কাঁদছি। আমাদের কারোরই কিছু ভালো লাগছে না। আমি বারবার মাকে ফোন করছি। আমি ওই দিনটির কথা কোনোদিন ভুলব না। ১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর। মনে আছে হুমায়ূন আহমেদের একটা নাটক মঞ্চস্থ করতে আমরা সেবার ভিয়েনায় গিয়েছিলাম। ফরীদি ভাই সেই নাটকের লিড ক্যারেক্টার ছিলেন। ফরীদি ভাই আমাদের টিম লিডার ছিলেন’- আবেগাপ্লুত কণ্ঠে এসব কথা বলেন ‘নক্ষত্রের রাত’খ্যাত অভিনেত্রী শমী কায়সার।
লাইভ আড্ডায় শমী স্মৃতিচারণ করে সালমান শাহকে নিয়ে আরও বলেন, ‘একবার বিটিভিতে একটি আন্দোলন হয়েছিলো একটি নাটক থেকে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নাম কেটে ফেলার জন্য। বঙ্গবন্ধুর নাম ফেলে দেয়ায় শিল্পীরা আন্দোলনের ডাক দিয়েছিলো। আমরা বলেছিলাম কেউ কাজ করবো না। সেই যে অনশন-ধর্মঘট হলো সেটাতে সুবর্ণা আপাও (সুবর্ণা মুস্তাফা) ছিলেন। এবং সালমান শাহও ছিলো সেই আন্দোলনে।’
প্রসঙ্গত, সোহানুর রহমান সোহান পরিচালিত ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’ সিনেমা দিয়ে ঢাকাই সিনেমায় পা রাখেন সালমান শাহ। এরপর তিনি কাজ করেছেন ২৭টি সিনেমাতে। ১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর তার রহস্যজনক মৃত্যু হয়।
সালামান শাহ ও হুমায়ূন ফরীদি বেশ কিছু সিনেমায় একসঙ্গে কাজ করেছেন। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য ‘মায়ের অধিকার’, ‘আনন্দ অশ্রু’, ‘বিচার হবে’। বিশেষ করে ‘মায়ের অধিকার’ সিনেমায় মামা-ভাগ্নে চরিত্রে তাদের জুটি আজও দর্শককে বিনোদন দেয়।
এ সিনেমার মতোই বাস্তব জীবনেও সালমান-ফরীদির সম্পর্কটা বেশ জমজমাট ছিলো বলে জানা যায়। আজ দুজনই চলে গেছেন পৃথিবীর মায়া কাটিয়ে। তিনি এদেশের দর্শক দুজনকেই মনে রেখে দিয়েছেন চিরদিনের সবুজ ভালোবাসায়।