বিশেষ সংবাদদাতাঃ অদম্য চেষ্টা আর সাধনায় মানুষ ছুঁতে পারে তার স্বপ্নকে। স্বপ্নকে ছোঁয়ার এ যুদ্ধ নিরস্তর। তবে কারো কারো স্বপ্ন পূরণের পথে নেমে আসে অতি অপ্রত্যাশিত কিছু প্রতিবন্ধকতা। ঘটে স্বপ্নের অপমৃত্যু। মুকুলেই ঝরে যায় কিছু সম্ভাবনাময় ফুল। বিগত বেশ কয়েক বছর ধরে বিভিন্ন সরকারী বিশ্বিবদ্যালয়, মেডিকেল কলেজ, ডেন্টাল কলেজ ও প্রতিযোগীতামূলক চাকুরী পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের মধ্য দিয়ে হয়তো ভেঙ্গে গিয়েছে এমনি অনেক স্বপ্ন।
কিছু প্রশ্ন ফাঁসকারী চক্র অত্যন্ত সুকৌশলে বছরের পর বছর দেশের বিভিন্ন প্রতিযোগীতামূলক পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস করে আসছিল। বাংলাদেশ পুলিশের বিশেষায়িত ইউনিট সিআইডি’র অধিনে সাইবার পুলিশ গঠনের পর থেকেই ইউনিট’টি বিরতীহীনভাবে কাজ করে যাচ্ছে এ সকল প্রশ্ন ফাঁসকারী চক্রকে আইনের আওতায় আনতে।
২০১৭ সালে ঢাকা বিশ্বিবদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁসকারী দুইটি চক্রকে চিহ্নিত করে প্রথমবারের মতো আইনের আওতায় আনে সিআইডি’র এই ইউনিট। উক্ত ঘটনায় দায়েরকৃত মামলায় প্রশ্নপত্র ফাঁসকারী চক্রের মূলহোতাসহ মোট ৪৭ জনকে গ্রেফতার করা হয়, যার মধ্যে ৪৬ জনই বিজ্ঞ আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করে। এ চক্রগুলো প্রেস এবং পরীক্ষার কেন্দ্র থেকে প্রশ্নপত্র বের করে সেগুলোর সমাধান করে ডিজিটাল ডিভাইসের মাধ্যমে পরীক্ষার কেন্দ্রে থাকা পরীক্ষার্থীর নিকট পৌঁছে দিত।
২০১৮ সালের ঢাকা বিশ্বিবদ্যালয়ের ‘ঘ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনায় ঐ চক্রের মূল হোতাসহ ১৭ জনকে গ্রেফতার করে সিআইডি। তবে এই চক্রের অন্যতম দুই মূলহোতা এসএম ছনোয়ার হোসেন ও মোহাইমিনুল ইসলাম বাধঁন দীর্ঘদিন যাবৎ পলাতক ছিল। সম্প্রতি তাদের গ্রেফতার করতে সক্ষম হয় সিআইডি’র সাইবার পুলিশ। অভিযানে মোহাইমিনুল ইসলাম বাঁধনের কাছ হতে বিভিন্ন জনের নামে মোট ২ কোটি ২৬ লক্ষ টাকার চেক উদ্ধার করা হয়। অন্য অভিযুক্ত এসএম ছনোয়ার হোসেন বিজ্ঞ আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করে যে, সে ঢাকা বিশ্বিবদ্যালয়ের ‘ঘ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসসহ বিভিন্ন সরকারী মেডিকেল কলেজের ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসকারী চক্রের সাথেও জড়িত।
ছনোয়ারের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে গত ১৯/০৭/২০২০ তারিখে সাইবার পুলিশের একটি দল বিভিন্ন সরকারী মেডিকেল কলেজের ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসকারী চক্রের মূল হোতা জসিমউদ্দিন ভূইয়া মুন্নুসহ তার অন্যতম দুই সহযোগী জাকির হোসেন দীপু ও পারভেজ হোসেন খান কে গ্রেফতার করে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জসিমউদ্দিন ভূইয়া মুন্নু জানায় যে, তারা ২০১৩ সাল থেকে ধরাবাহিকভাবে সরকারী মেডিকেল ও ডেন্টাল কলেজের ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস করে আসছিল। সে আরো জানায়, তার এই চক্রে ৫০ জনের অধিক সদস্য রয়েছে এবং প্রশ্নপত্র ফাঁসের মাধ্যমে তারা এপর্যন্ত প্রায় অর্ধশত কোটি টাকা উর্পাজন করেছে।
উক্ত ঘটনায় জসিম উদ্দিন ভূঁইয়া মুন্নু ও তার ১৪ জন সহযোগীসহ অজ্ঞাতনামা ১৫০-২০০ জনের বিরুদ্ধে মিরপুর মডেল থানায় একটি মামলা দায়ের করে সিআইডি’র সাইবার পুলিশ। প্রশ্নপত্র ফাঁসকারী এই চক্রের অন্যান্য সদস্যদেরকে গ্রেফতার করতে ইতোমধ্যে কাজ শুরু করেছে সাইবার পুলিশ। পাশাপাশি প্রশ্নপত্র ফাঁসকারী চক্র কর্তৃক অবৈধভাবে অর্জিত বিপুল পরিমাণ স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি অনুসন্ধানের জন্যও কাজ করে যাচ্ছে সাইবার পুলিশ।