বিশেষ প্রতিবেদন,কলকাতা: সেই কোন যুগে ‘চাঁদের পাহাড়’ উপন্যাস লিখেছিলেন বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়। সালটা ছিল ১৯৩৭। তার পর ৮৩ বছর পেরিয়ে গিয়েছে। আপামর বাঙালি পাঠক কিন্তু এখনও মজে রয়েছে সেই ‘চাঁদের পাহাড়’ নিয়েই। আফ্রিকায় না গিয়েও কিলিমাঞ্জারো পাহাড় আর মাসাইমারা ঘন অরণ্যের নিখুঁত বর্ণনা করে সকলকে চমকে দিয়েছিলেন বিভূতিভূষণ। আফ্রিকায় চাকরি করতে গিয়ে উপন্যাসের নায়ক শঙ্কর সেখানে জড়িয়ে গিয়েছেন দিয়েগো আলভারেজের অভিযানে। অজানা বুনিপ থেকে ভয়ঙ্কর সিংহ, ব্ল্যাক মাম্বার হিংস্রতা পেরিয়ে হিরের খনি খুঁজে পেয়েছিলেন তিনি। সেই উপন্যাস নিয়ে কেউই বাংলায় সিনেমা করার দুঃসাহস দেখাননি।
দেখিয়েছিলেন একজন। তিনি কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায়। দেবকে দিয়ে মাসাইমারায় গিয়ে অভিনয় করিয়েছিলেন ওই সিনেমায়। শুধু তাই নয়, সিক্যুয়েলও তৈরি করেছিলেন ‘চাঁদের পাহাড়ে’র। সেই সিনেমার নাম ছিল ‘আমাজন অভিযান’। শুটিং করেছিলেন আমাজনে গিয়েই। তবে সেই কাহিনি কিন্তু বিভূতিভূষণের ছিল না। এ ছাড়াও দেবকে নিয়েই তৈরি করেছিলেন ‘পাসওয়ার্ড’ সিনেমাও। সেই পরিচালক কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায় ব্যক্তিগত জীবনে শুধু সিনেমা পরিচালকই নন, তিনি আসলে একজন চিকিৎসকও। সিনেমা পরিচালনায় আসার আগে তিনি রোগীদের চিকিৎসাই করতেন। তিনি একজন সফল এমবিবিএস। চিকিৎসক হিসেবে কাজ করেছেন মেখলিগঞ্জ সরকারি হাসপাতালে। এমনকী, পরে বেশ কয়েকটি বেসরকারি হাসপাতালেও কাজ করা হয়ে গিয়েছে তাঁর।
কিন্তু মনে–প্রাণে সিনেমার প্রতি তাঁর ছিল অদম্য কৌতূহল। তাই চিকিৎসকের পেশা ছেড়ে ২০০৬ সালে চলে আসেন সিনেমা পরিচালনায়। কিন্তু করোনা পরিস্থিতি এবং লকডাউনে যখন সব যখন স্তব্ধ হয়ে রয়েছে, (এমনকী, এতদিন বন্ধ ছিল সিনেমার শুটিংও) তখনই আমফান তাণ্ডবে এলোমেলো হয়ে গিয়েছে সুন্দরবনের জীবন, ঠিক সেই সময়ই তাঁর মনে চিকিৎসক সত্তা ফের জেগে ওঠে। ঠিক ১৪ বছর পর। আর তাই ছুটে গিয়েছেন সুন্দরবনের মেটেখালিতে। সেখানে চিকিৎসা–শিবির করে এসেছেন। দুর্গত অসুস্থ প্রান্তিক মানুষকে দিয়েছেন চিকিৎসা পরিষেবা। যাঁরা এই দুঃসময়ে সাধারণ স্বাস্থ্য পরিষেবাটুকুও ঠিকমতো পাচ্ছেন না। শুধু তাই নয়, আগামী রবিবারই যাচ্ছেন হাসনাবাদে। সেখানেও করবেন চিকিৎসা শিবির। অসহায় ও অসুস্থ মানুষের কাছে সেদিন পৌঁছে দেবেন ন্যূনতম চিকিৎসা পরিষেবা।
এই শিবিরগুলি আয়োজনের পেছনে রয়েছেন ওয়েস্ট বেঙ্গল ডক্টর্স ফোরামের অর্জুন দাশগুপ্ত, শ্রমজীবী স্বাস্থ্য উদ্যোগের চিকিৎসক পুনর্ব্রত গুন এবং নাটকের দল ‘শৈলশী’। নাটকের এই দলটি কমলেশ্বরবাবুরই। বিষয়টি নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায় বলেছেন, ‘সিনেমার কাজে এতটাই জড়িয়ে গিয়েছি যে, চিকিৎসার কাজটাই করে ওঠার সময় এখন আর সে ভাবে পাই না। তবে কয়েকজন বন্ধু এবং সংস্থার উদ্যোগে এ ভাবে অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে পেরে আমার খুব ভালো লাগছে। ভবিষ্যতেও এ ভাবে সাধারণের পাশে দাঁড়াতে পারলে নিজেকে সৌভাগ্যবান মনে করব।’ তাঁর মতে, উদার অর্থনীতিই মানুষের সর্বনাশ করে দিয়েছে। মানুষ যে ভাবে স্বার্থপর ও দাম্ভিক হয়ে উঠেছিল, তা এই অতিমারী এবং ঘূর্ণিঝড় ভেঙে চুরমার করে দিয়েছে। চারদিকে ফের সাম্যের দাবি শুনতে পাচ্ছি। এটা ইতিবাচকই মনে হচ্ছে।