কলাপাড়া(পটুয়াখালী) প্রতিনিধি: বিশ্বনন্দিত পর্যটন কেন্দ্র কুয়াকাটা ক্রমশই গ্রাস করছে ক্ষুধার্ত সাগর। ধীরে ধীরে ছোট হয়ে আসছে কুয়াকাটার মানচিত্র। রূপলাবন্য, ঐশ্বর্য্যরে সূর্যোদয়- সূর্যাস্তের বেলাভূমি কুয়াকাটা হারাতে বসেছে তার চিরচেনা সৌন্দর্য। প্রতি বছরের ন্যায় অমাবস্যা ও পূর্ণিমার জোঁয়ারে সাগরে সৃষ্টি হয় বড়বড় প্রকান্ড ঢেউ। শোঁ শোঁ শব্দে ভয়ানক ঢেউয়ের ঝাঁপটাতে বালুক্ষয় করে সৈকতের পরিধি ছোট হয়ে আসছে। প্রচন্ড রকমের ঝুঁকিতে রয়েছে সৈকতের ট্যুরিজম পার্ক, কুয়াকাটা মাদ্রাসা পয়েন্ট বেরীঁবাধ মাত্র তিনের একাংশ বাকি আছে আর বিলীন হতে। পর্যটন এলাকায় হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করে প্রতিদিনই আতংকে আছেন বিনিয়োগকারীরা। কুয়াকাটার চৌমাথা থেকে মাত্র ২০০ ফুট বাকি আছে সাগরে বিলিন হতে। স্থানীয় বিভিন্ন সংগঠন সৈকত রক্ষায় গোঁয়েন-বাধঁ নির্মানের দাবিতে প্রতিবছরই কুয়াকাটা রক্ষামূলক কর্মসূচি দিলেও সরকারের কোন টনক নড়ছেনা।
পাউবো কর্তৃপক্ষ বলছে সার্ভে চলছে উর্ধতন কর্মকর্তাদের জানানো হয়েছে। পর্যটকদের পদচারনামুখর জায়গাটুকু কুয়াকাটা সৈকত চলে যাচ্ছে সাগরের গর্ভে। পুরানো কোন চিহ্ন নেই নন্দিত স্থান সৈকতের। ভাঙ্গনের কবলে পরে পর্যটকদের গুরুত্বপূর্ণ ৫ টি দর্শনীয় স্থান বিলীন হচ্ছে যার মধ্যে সৈকত লাগোয়া নারিকেল বাগানের ঐতিহ্য ও জাতীয় উদ্যান অন্যতম ।
সরেজমিনে কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত ঘুরে দেখা গেছে, বরাবরের মতো প্রতিবছর মে থেকে ৫ মাস পূর্ণিমা- আমাবস্যার জোঁয়ারে সাগর ভয়ানকভাবে ফুঁসে ওঠে। এক একটা বিশাল ঢেউ এসে সজোরে আঘাত হানে সমুদ্র সৈকতের পাড়ে। উপকূলীয় অঞ্চল বালুএলাকা হওয়ায় ঢেউয়ের ঝাপঁটায় বালু সরিয়ে পশ্চিম দিকে মোহনায় গিয়ে পড়ে। এতে পাড়ের বিশাল অংশে ফাটল ধরে বিলীন হয়ে যায় সাগর। স্থানীয় ও বিশেষজ্ঞদের মতে, সাগরের স্রোতের গতি পরির্বতনের একটি গোঁয়েন বাধেঁ রক্ষা করতে পারে বিশ্বের অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র কুয়াকাটা। মাত্র একদিনের ব্যবধানে তাল গাছ, রেইনট্রি গাছ ও নারিকেল গাছসহ নানা প্রজাতির উদ্ভিদ ঢলে পড়ে সৈকতে। গত দুই মাসে প্রায় ৪০ ফুট পাড় ভেঙ্গে বিলীন হয়ে গেছে সাগরের গর্ভে। এভাবে বালু ক্ষয় অব্যাহত থাকলে খুব কম সময়ের ব্যবধানে কুয়াকাটা বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে আবাসিক এলাকা ও ফসলি জমিতে পানি ঢুকে পড়বে বলে আশংকা করছে এলাকাবাসী।
৫ বছরের ব্যবধানে ২ কিলো জায়গা চলে গেছে সাগরের ভিতরে। বালুক্ষয়ের শিকার হয়ে সীমানা প্রাচীরসহ পুরো বায়ো গ্যাস প্লান্ট সরকারি ভবনটি এখন শুধুই স্মৃতি। সৈকত লাগোয়া অর্ধশত বছর আগের ফয়েজ মিয়ার হাজার হাজার নারিকেল বাগান, তালবাগান, শাল বাগান, ৩ টি লেক, ঝাউবন ,গঙ্গামতির চর, লেম্বুরবন এসব বিলীন হয়ে গেছে কয়েক বছর আগে। সাগরের কোলঘেষে বালুক্ষয় করে স্রোতে নিয়ে যায় যা গোঁয়েন-বাধেঁর মাধ্যেমে স্রোতের গতি পরির্বতন করলেই সৈকতটি রক্ষা পাবে এমন দাবি উঠছে সর্বত্র। এভাবে চলতে থাকলে দেশী-বিদেশী পর্যটকদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ এ সৈকতটি খুবদ্রুতই বিলীনের আশঙ্কা প্রকাশ করেছে ঘুরতে আসা পর্যটকরা।
কুয়াকাটায় বেড়াতে আসা বিদেশী পর্যটক সিভিল প্রকৌশলী ইউরা টিউরিয়াজিন বলেন, ‘ অ্যা লঙ ডিফেন্স ওয়োল মে বি ইনাফ সাপোর্ট টু প্রিভেন্ট স্যান্ড ইরৌজন অ্যাজ আই সী ইন মাই কান্ট্রি। বালুক্ষয় রোধ করতে সুদীর্ঘ রক্ষা প্রাচীর যথেষ্ট সহায়ক হতে পারে। যেমনটা আমাদের দেশেও দেখা যায়। কুয়াকাটা উন্নয়ন কর্মী শফিকুল আলম শফি বলেন, কুয়াকাটা সৈকত ভাঙ্গন র্দীঘ দিনের সমস্যা। সাগরে সামন্য ভিতরে মাত্র ১.৫ সেন্টি মিটার পানি এটি গোঁয়েন বাধেঁর মাধ্যেমে রক্ষা পেতে পারে। গোয়েন-বাধঁ দিয়ে সাগরের পানির স্রোতের গতি পরির্বতন করলে খুব সহজে আমাদের কুয়াকাটার সৈকত রক্ষা হতে পারে। অনেক দেশে ভ্রমন করে এগুলো আমি দেখেছি। ঢেউয়ের আঘাতে বিধ্বস্ত সৈকতে দেখা হয় স্থানীয় বাসিন্দা বশির উদ্দিনের (৬০) সাথে অশ্রু সজল চোখে তিনি বলেন সেই ৩৫/৪০ বছর আগে ৪-৫ মাইল দুরে শুটকির ব্যাবসা করতাম সৈকতের তীরে। কি হবে কুয়াকাটার ভবিসৎ ! এখনও কেনো নজর দিচ্ছেনা সরকার।
সী-বীচের ছোট্ট চায়ের দোকানি রেজাউল করিম বলেন, এই চায়ের দোহান দিয়াই মোর সোংসার চলে, রাইতে দোহান বন্ধ কইর্যা বাড়ি যাই, সকালে আইসা দেহি দোহানডা সাগরের চরে পইরা রইছে, কতো বচ্ছর ধইর্যা হোনতাছি সরকার কুয়াকাটার উন্নয়ন করবে, এখন দেখি তারা ভাঙ্গনই ফিরাতে পারছে না। কলাপাড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আবুল খায়ের বলেন, ভারতীয় একটি বিশেষজ্ঞ টিম সৈকতের বালুক্ষয় রোধে কাজ করবে বলে আশা করছি। তিনি আরও
বলেন, জিইও টিউব প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে বালুক্ষয় রোধ করা যেতে পারে। তবে কবে নাগাদ কাজ শুরু হবে তা নিশ্চিত করে এখন বলা যাচ্ছেনা।
পটুয়াখালী পাউবো‘র নির্বাহী প্রকৌশলী খান মোহাম্মদ ওয়ালিউজ্জামান বলেন কুয়াকাটা সৈকত রক্ষার জন্য স্থায়ী ভাবে (টিপিপি) প্লানিং তৈরী করে মন্ত্রনালয়ে পাঠানো হয়েছে আশা করি দ্রুত ব্যবস্থা হবে।
উল্লখ্য, দেশের বাহিরে পর্যটন শিল্পের সাফল্য অনুকরণীয় উদাহরণ হতে পারে। প্রকৃতির অপার দান ১৮ কিলোমিটারের সমুদ্র সৈকত পেয়েও দায়িত্বপ্রাপ্ত বিভাগ রয়েছেন উদাসীন। দ্রুত বালুক্ষয় রোধসহ কুয়াকাটার উন্নয়ন ও জীববৈচিত্র রক্ষায় বাস্তব পদক্ষেপ নিয়ে এগিয়ে আসবেন কর্তা ব্যক্তিরা এমনটাই আশা প্রকাশ করেছেন বিনিয়োগকারীসহ কুয়াকাটায় ঘুরতে আসা দেশী-বিদেশী পর্যটক ও স্থানীয় মহল।