নিজস্ব প্রতিবেদকঃ গরিব পিতার পক্ষে সংসারের ব্যয় নির্বাহ করা কঠিন ছিলো। দু’বেলা খাবারের অন্বেষণে ২০১২ সালে দিনাজপুর জেলার খানসামা থানার গুচ্ছগ্রাম পাকেরহাট গ্রামের আজিজার রহমানের মেয়ে খুশি আরা আক্তারকে রাজধানীর গুলশানের নিকেতনে একটি বাসায় কাজ করতে পাঠানো হয়। তখন খুশির বয়স মাত্র ১১ বছর।
নিকেতনের যে বাসায় খুশি কাজ করতেন, সে বাসার মালিক মাসুদুজ্জামান সরকারের অনুরোধে খুশির বাবা তাকে বাসায় কাজ করতে পাঠান। মাসুদুজ্জামানের গ্রামের বাড়ীও দিনাজপুরের একই থানা এলাকায়।
টানা এক বছর মাসুদুজ্জামানের বাসায় কাজ করেন খুশি। এরপর ২০১৩ সালের সেপ্টেম্বরের ২৭ তারিখ কাউকে কিছু না বলে বাসা থেকে কোথায় যেন চলে যান।
এ বিষয়ে ২০১৩ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর গুলশান থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করা হয়েছিল। খুশির নিয়োগকারী মাসুদুজ্জামান ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় মাইকিংসহ বিভিন্ন জাতীয় পত্রিকায় নিখোঁজ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেন। কিন্তু কোন হদিস মিলেনি খুশির।
মেয়ের সন্ধান না পাওয়ায় খুশির বাবা আজিজার রহমান মাসুদুজ্জামানসহ তাঁর পরিবারের পাঁচ জনের বিরুদ্ধে দিনাজপুর জেলা আদালতে নারী ও শিশু নির্যাতন মামলা করেন। আদালত খানসামা থানাকে মামলা দায়ের করে তদন্তের নির্দেশ দেন। মামলাটি খানসামা থানা পুলিশের পাশাপাশি তদন্ত করেন পিবিআই ও সিআইডি। মামলাটি বর্তমানে সিআইডিতে তদন্তাধীন রয়েছে।
এরমধ্যে গত মঙ্গলবার (৩০ জুন) গুলশান থানা পুলিশ বিশ্বস্ত সূত্রে জানতে পারে খুশি বনানী থানাধীন কড়াইল বস্তিতে বসবাস করছেন। সংবাদ পেয়ে গুলশান থানা পুলিশ বনানী থানাধীন কড়াইল বস্তির বউ বাজারের একটি বাসা হতে খুশিকে উদ্ধার করে নিরাপদ হেফাজতে নেন। পরবর্তী সময়ে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই জাবিরুল ইসলাম খুশিকে আদালতে উপস্থাপনের জন্য গুলশান থানা থেকে নিজ হেফাজতে দিনাজপুরে নিয়ে আসেন।
গুলশান থানার অফিসার ইনচার্জ কামরুজ্জামান জানান, খুশি আরাকে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, ঘটনার দিন সে বাসা থেকে হঠাৎ বের হয়ে পথ হারিয়ে ফেলেন। পথ খুঁজে না পেয়ে সে হাটতে হাটতে গুলশান থানাধীন গুদারাঘাট এলাকায় রাস্তার পাশে গাছের নিচে বসে কান্না করছিলেন। গুলশান ১ এলাকায় অবস্থিত ডিসিসি মার্কেটের ক্লিনার মনোয়ারা বেগম তাকে কাঁদতে দেখে তার নাম-ঠিকানা জিজ্ঞাসা করেন। খুশি তার নাম ছাড়া আর কিছুই বলতে না পারায় মনোয়ারা বেগম কড়াইল বস্তিতে তার বাসায় নিয়ে যান এবং তিনিই খুশি আক্তারকে দীর্ঘ সাত বছর লালন পালন করেন।
দীর্ঘ সাত বছর পর খুশিকে খুঁজে পাওয়ার পর অভিযোগ থেকে মুক্তির খবরে আনন্দ বইছে সেই গৃহকর্তা মাসুদুজ্জামান ও তাঁর পরিবারে।
মাসুদুজ্জামান বলেন, মেয়েটা কি কোন খারাপ যায়গায় গেল, তাকে কি কেউ মেরে ফেলল? এধরনের চিন্তা আমাদের গ্রাস করতো। আমি এবং আমার স্ত্রী সব সময় গ্রেফতার হওয়ার আতঙ্কে থাকতাম। খুুশিকে খুঁজে পাওয়ায় আমরা স্বস্তি পেলাম।