1. abrajib1980@gmail.com : মো: আবুল বাশার রাজীব : মো: আবুল বাশার রাজীব
  2. abrajib1980@yahoo.com : মো: আবুল বাশার : মো: আবুল বাশার
  3. farhana.boby87@icloud.com : Farhana Boby : Farhana Boby
  4. mdforhad121212@yahoo.com : মোহাম্মদ ফরহাদ : মোহাম্মদ ফরহাদ
  5. shanto.hasan000@gmail.com : Rakibul Hasan Shanto : Rakibul Hasan Shanto
  6. masum.shikder@icloud.com : Masum Shikder : Masum Shikder
  7. shikder81@gmail.com : Masum shikder : Masum Shikder
  8. riyadabc@gmail.com : Muhibul Haque :

আপাতত আগামীর দিকেই তাকিয়ে আমরা

  • Update Time : শুক্রবার, ৫ জুন, ২০২০
  • ১৯৫ Time View

উপমন্যু রায়

একটা ছোট্ট খবর। অথচ আমাদের বাংলায়, কিংবা বলা যায়, গোটা ভারতীয় উপমহাদেশেই খবরটি তেমন গুরুত্ব পায়নি। কোথাও ছাপা হলেও যেন আড়াল করার একটা চেষ্টা ছিল। কেন ছিল, তা বোধ করি অননুমেয় নয়।

আসলে আমরা যারা বাঙালি, তারা সহজেই নিজেদের ভাবনাচিন্তা অনুযায়ী পৃথিবীটাকে বিভাজন করে দিতে পারি। যেমন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ এবং তার পরে বেশ কিছুটা সময় আমরা হিটলারের কারণে গোটা জার্মানিটাকেই খল বানিয়ে দিয়েছিলাম। তার পর সময় যত গড়িয়েছে, ততই সেই জায়গাটা নিয়েছে আমেরিকা। কোথাও কোনও নেতিবাচক কিছু ঘটলেই হল, ‘যত দোষ নন্দ ঘোষ’ ওই আমেরিকা।
অথচ কী আশ্চর্য দেখুন, ওই সাম্রাজ্যবাদী ইউরোপ বা আমেরিকার দিকেই আমরা দেশ, জাতি বা ব্যক্তিগত স্বার্থে বা স্বীকৃতির জন্য তাকিয়ে থাকি। অথচ গুণ গাইব যখন, আগে ছিল সোভিয়েত ইউনিয়ন, তার পর কিউবা, এর পর এখন বেশ কিছুদিন ধরেই চিন।
সোভিয়েত ইউনিয়নের কথা বাদ দেওয়া যেতে পারে। কারণ, সেই দেশ এখন ইতিহাস। এখন সেই দেশ শুধুই রাশিয়া। কমিউনিজমের নাম–গন্ধ নেই। তাই সেই দেশ এখন আর আমাদের আলোচনায় আসে না। আর কিউবাও অনেক দূরে সরে গিয়েছে। অতঃকিম, চিন।

শুধু বঙ্গজ কমিউনিস্টদের কাছেই নয়, অকমিউনিস্টদেরও নানা ভাবে ‘শত্রুর শত্রু আমার মিত্র’ ইত্যাদি কারণে চিন একটু কাছের বইকি। এক সময় তো আমাদের পশ্চিমবাংলা চিনের বক্ষলগ্ন হতে পাগল হয়ে উঠেছিল। কান পাতলে ইতি–উতি শোনা যেত, ‘চিনের চেয়ারম্যান, আমাদের চেয়ারম্যান’। কিন্তু চিনারা আমাদের কতখানি আপন মনে করেন, তা বুঝতে পারা মনে হয় তাঁদের অভিব্যক্তির মতোই কঠিন।
আজ তবু গুণমান নয়, চিনা পণ্য স্রেফ কম দামে বিক্রি হওয়াটাই আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। সেদিন কে এক রসিক মানুষ দেখলাম সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করেছেন, চিন সব জিনিসই দু’নম্বর বানায়, যেগুলির স্থায়িত্ব নেই মোটেও। কিন্তু করোনাটা নাকি তারা এক নম্বর বানিয়েছে, যা গোটা পৃথিবীটাকেই নির্বোধ বানিয়ে দিয়েছে!

সে যাই হোক, করোনা ভাইরাসের জন্য সারা পৃথিবী যতই চিনকে অভিযুক্ত করুক না কেন, বেজিং কিন্তু তার দায় এখনও স্বীকার করেনি। যদিও ওয়াশিংটন দাবি করেছে, তাদের গোয়েন্দা রিপোর্টে নাকি চিনের বিরুদ্ধে করোনা ভাইরাস তৈরির প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে।
শুধু আমেরিকাই নয়, ইতিমধ্যে ফ্রান্স, ইতালি, স্পেন, অস্ট্রেলিয়া, জার্মানি, ইংল্যান্ড যে এই ভাইরাস নিয়ে চিনের আচরণে খুশি নয়, তা বুঝিয়ে দিয়েছে। যদিও চিন সে–সব নিয়ে ভাবিত নয় মোটেই। তারা বরং ভারত সীমান্তে সেনার সংখ্যা বাড়িয়ে আর একটা শীতল ছায়াযুদ্ধের সূচনা করতে চাইছে। জানি না কাজটা পৃথিবীর ভাবনাচিন্তাকে অন্য খাতে বইয়ে দেওয়ার চেষ্টা কিনা!

হ্যাঁ, যে কথাটা বলছিলাম। সেই ছোট্ট খবর। খবরটা প্রকাশ করেছে ফোর্বস পত্রিকা। তারা অবশ্য বড় করেই প্রকাশ করেছে। কিন্তু আমাদের মহাজ্ঞানী উপমহাদেশ, বিশেষ করে বাংলা পত্রপত্রিকাগুলিতে সেই খবর বিশেষ আমল পায়নি। ফোর্বসের খবর বলেই হয়তো তেমন আমল দেওয়া হয়নি।
যদিও খবরটা চিনের পক্ষে বেশ ইতিবাচকই ছিল। বাঙালি সমাজ হয়তো সেই খবরের পিছনে সিঁদূরে মেঘ দেখতে পেয়েছে। তাই খবরটা আপাত দৃষ্টিতে চিনের পক্ষে ইতিবাচক হলেও তা নিয়ে খুব বেশি আলোড়ন ফেলে দেওয়া হয়নি।
খবরটা হল, করোনা ভাইরাসের প্রতিষেধক নাকি তৈরি করে ফেলেছে চিন। হ্যাঁ, সেই দেশ। এই ভাইরাস গোটা পৃথিবীতে ছড়িয়ে যাওয়ার জন্য যে দেশের বিরুদ্ধে অধিকাংশ দেশ অভিযোগের আঙুল তুলেছে। ফোর্বস জানিয়েছে, এ বছরেই নাকি চিন সেই প্রতিষেধক বাজারে নিয়ে আসছে। —মানে? হ্যাঁ, মানেটা ঠিক কী?
মানেটা মানেই। চিনের প্রশাসনকে উদ্ধৃত করে ফোর্বস জানিয়েছে, ২ হাজার মানুষের ওপর নাকি ওই প্রতিষেধক ইতিমধ্যেই পরীক্ষা করেছে চিন। আর তাদের সেই পরীক্ষা নাকি সফলও হয়েছে।
শুধু তাই নয়, আরও একটি বিষয় হল, ওই প্রতিষেধক তৈরি করেছে চিনের সরকারি ল্যাবই। চমকে ওঠার মতো খবর বইকি! তবে এখানেই শেষ নয়। চিন নাকি বছরে ১০ থেকে ১২ কোটি এই প্রতিষেধক তৈরি করতে পারবে। এই সংখ্যাটা পরে আরও বিপুল পরিমাণে বাড়িয়েও দিতে পারবে।

জানি এই খবর পড়ে অনেকেই হয়তো খুশি হবেন। বেশি খোঁচাখুচি করলে বিশেষ করে বঙ্গজ কমিউনিস্টরা যুক্তি দেখাতে শুরু করবেন, পৃথিবী থেকে করোনা ভাইরাসকে সরিয়ে দিতে চিন নতুন ওষুধ নিয়ে আসছে। এটা সভ্যতার পক্ষে যথেষ্ট ইতিবাচক দিক। কিন্তু, —সত্যিই কি তাই? যদি একটু উল্টো ভাবে ভাবি?
ভাবতে তো হবেই। চিনের উহানেই তো প্রথম করোনা সংক্রমণের খবর পাওয়া যায়। তার পর তা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা এবং পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়ার পর অন্য দেশের স্বাস্থ্য পরিকাঠামোকে কাঠগড়ায় দাঁড় করানোর চেষ্টাটা তো আগেই বেজিং করেছে।
এখানেই শেষ নয়। চিনে করোনা সংক্রমণ নিয়ে আলোচনা করতে গেলে আমাদের কাছে বারবার উহানের কথাই উঠে আসে। সেখানে নাকি সংক্রমণ আর নেই, সেখানে নাকি লকডাউন তুলে নেওয়া হয়েছে, সেখানে নাকি ফের সংক্রমণ ধরা পড়েছে, এইসব আর কী!
কিন্তু উহান মানেই তো চিন নয়। চিন একটা বিশাল দেশ। তার কতটুকু খবর আমরা পাই?
মানে তথাকথিত মহান চিন সরকার সেইসব খবর কতখানি বাইরে আসতে দেয়? সেদিন তো একটা খবরে দেখলাম, চিনের কোন এক বিশ্ববিদ্যালয়ের অসতর্কতায় একটি খবর ফাঁস হয়ে যায়। তাতে চিন নাকি সে দেশে ৬ লক্ষেরও অনেক বেশি সংক্রমণের খবর চেপে গিয়েছে। তা হলে তাদের এত সহজে বিশ্বাস করব কী করে?‌

জানি এ কথা শুনে কেউ কেউ বলে উঠবেন, চিনকে তো এখনও দোষী সাব্যস্ত করা যায়নি, তা হলে তার বিরুদ্ধে এত অভিযোগ কেন? পাল্টা একটি প্রশ্নও তো করা যেতে পারে, চিন যে পুরোপুরি নির্দোষ, তা–ও তো প্রমাণিত হয়নি, তা হলে? এখানেই আসে একটি খটকা।
যদি চিন আন্তর্জাতিক স্তরে দোষী সাব্যস্ত হয় এবং তার সঙ্গে তারা যদি এই প্রতিষেধক সত্যিই বাজারে আনে, তা হলে তো সন্দেহ একটা জাগবেই।

এমন তো নয় যে, তারা ইচ্ছে করেই করোনা ভাইরাসকে পৃথিবী জুড়ে ছড়িয়ে দেতে চেয়েছে। তার পর তার প্রতিষেধক বাজারে এনে মহান হতে চাইছে! আবার, সে ক্ষেত্রে সেই প্রতিষেধক বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় ক্রমে গোটা পৃথিবীর বাজার দখল করে নেবে।
তা যদি হয়, তা হলে টাকার সমুদ্রে ভেসে যাবে চিন। গোটা পৃথিবী জুড়ে অর্থনৈতিক আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত হবে তাদের। মার্কিন ডলারের হিসেবে নয়, গোটা পৃথিবীর আর্থিক অঙ্ক তখন বিচার্য হবে ইউয়ানের (‌রেন্মিন্বি)‌ হিসেবে। কেমন হবে সেটা?
জানি, এখনই চিনকে সরাসরি দোষী বলে দেওয়া উচিত হবে না। তবে, এ কথাও অনস্বীকার্য, এই ভাইরাসে চিনের ভূমিকা একটা ছিলই। আগের নিবন্ধগুলিতে সে কথা আমি বলেওছিলাম। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বা ‘হু’ চিনের যত প্রশংসাই করুক না কেন, যতই আড়াল করার চেষ্টা করুক না কেন, তাদের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে আজ কিন্তু একটা সংশয় দেখা দিয়েছেই। বিশেষ করে নিজেদের আগের বক্তব্য থেকে বারবার সরে এসে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা সে ভাবে ভাবতেই মানুষকে বাধ্য করেছে।

এখন আবার আরও একটি কথা শোনা যাচ্ছে। আমেরিকাও দাবি করেছে, তারা নাকি করোনার প্রতিষেধক তৈরির ক্ষেত্রে অনেকটাই এগিয়ে গিয়েছে। এই রকম দাবি এর আগেও আরও কয়েকটি দেশের গবেষণা সংস্থা বা বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফে করা হয়েছিল। তবে শেষ পর্যন্ত কোনও দাবিই পরিণতি পায়নি। তাই আমেরিকার দাবি নিয়ে কোনও প্রতিক্রিয়া জানানোর সময় এখনও আসেনি।
কিন্তু চিন যে দাবি করেছে, এই বছরেরই শেষ দিকে তারা নাকি ওই প্রতিষেধক পৃথিবীর বাজারে তুলে দিতে সক্ষম হবে। তাতেই ব্যাপারটা নিয়ে ভুরু কুঁচকে গিয়েছে অনেকের। চিন যদি সত্যিই প্রতিষেধক তৈরি করতে পারে, তা হলে অবশ্যই বাজারে তারা তা আনুক। কারণ, এই ভাইরাসের আক্রমণ থেকে মানুষ আগে বাঁচুক।
সেই সঙ্গে আরও একটা কথা বেজিংকে জানিয়ে দেওয়া উচিত অবশিষ্ট পৃথিবীর, তা হল, কোভিড–১৯ ছড়িয়ে যাওয়ার পিছনে যদি চিনের অবদান কখনও প্রমাণিত হয়, তা হলে তার মূল্যও তাদের চোকাতে হবে।

এই ভাইরাস আজ পৃথিবীটাকেই ছন্নছাড়া করে দিয়েছে। শুধু মানুষ যে আক্রান্ত হচ্ছেন বা প্রাণ হারাচ্ছেন, তা–ই নয়, অর্থনীতিও আজ গোল্লায় যেতে বসেছে। দেশে দেশে খবর বা ছবিটা একই। ব্যবসাগুলি ধুঁকছে, চাকরি চলে যাচ্ছে অসংখ্য মানুষের। জীবন ও জীবিকা নিয়ে এক ভয়ঙ্কর সমস্যার মধ্যে পড়ে গিয়েছেন সকলে। কারও লোভ এবং স্বার্থসিদ্ধির জন্য মানুষকে যদি এত দাম দিতে হয়, তার কোনও ক্ষমা হতে পারে না।

আপাতত না–হয় আগামিদিনের দিকে তাকিয়ে আমরা।‌

Please Share This Post in Your Social Media

এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ দেখুন..