বিশেষ প্রতিবেদন,কলকাতা:
আমফান–তাণ্ডবে বাংলার ক্ষতি ১ লক্ষ ২ হাজার ৪৪২ কোটি টাকা। নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতিনিধি দলকে এই রিপোর্টই দিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নির্দেশে ৭ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল রাজ্যে আসে। বাংলায় ঝড়ের প্রভাব দেখতে এসে রাজ্যে প্রতিনিধি দল পাঠানোর কথা প্রধানমন্ত্রী নিজেই বলে গিয়েছিলেন। সেই সঙ্গে আপৎকালীন ভিত্তিতে রাজ্যের জন্য একটি এক হাজার কোটি টাকার প্যাকেজও ঘোষণা করে যান। সেই প্যাকেজের টাকা ইতিমধ্যে রাজ্য পেয়েও গিয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ অনুযায়ী রাজ্যের ক্ষয়ক্ষতি মূল্যায়ন করতে দক্ষিণবঙ্গের ক্ষতিগ্রস্ত অঞ্চলগুলি দলটি ঘুরে দেখে।
উত্তর এবং দক্ষিণ ২৪ পরগনার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখার পর দলটি দিল্লি ফিরে যাওয়ার আগে শনিবার বিকেলে নবান্নে আসে। এখানে মুখ্যসচিব রাজীব সিনহা এবং স্বরাষ্ট্র সচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে তাদের বৈঠক হয়। বৈঠকে আমফানের তাণ্ডব এবং তার ফলে রাজ্যের ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আগেই রাজ্যের ক্ষয়ক্ষতির বিস্তারিত খতিয়ান কেন্দ্রীয় দলকে দেওয়ার জন্য সচিবদের নির্দেশ দিয়ে রেখেছিলেন। সেই নির্দেশ অনুযায়ী রাজ্য সরকারের তরফে সচিবরা কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দলকে ক্ষয়ক্ষতির পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট দেন। রাতেই কেন্দ্রীয় দলটি দিল্লি রওনা হয়ে যায়। সূত্রের খবর, দলটি রাজ্য সরকারের রিপোর্ট কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে জমা দেবে। সেই সঙ্গে নিজেদের বক্তব্যও তারা কেন্দ্রীয় সরকারকে জানাবে। সমস্ত কিছু দেখে আমফান নিয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ করবে কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দলটি।
আমফানের পর দু’সপ্তাহ কেটে গিয়েছে। এখনও দক্ষিণবাংলার জনজীবন ঘূর্ণিঝড়ের রোষ পুরোপুরি কাটিয়ে উঠতে পারেনি। বিভিন্ন জায়গায় এখনও তার ধ্বংসলীলা রয়ে গিয়েছে। কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দলটি সমস্ত কিছুই সরেজমিনে পরিদর্শন করে। শুক্রবার বিকেলে গোপালনগরে বাঁধ ভেঙে যাওয়া থেকে শুরু করে শনিবার সকালে সুন্দরবনও তারা ঘুরে দেখে। তবে শুক্রবার বসিরহাট মহকুমার মিনাখাঁ থানার বাসন্তী হাইওয়ের ওপর কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দলকে রাস্তায় আটকে ক্ষোভ প্রকাশ করেন দুর্গতরা। তাঁরা কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দলের কনভয়ের সামনে পথ আটকে বিক্ষোভ দেখান। নানা দাবির কথা লেখা প্ল্যাকার্ড নিয়ে তাঁরা কেন্দ্রীয় দলকে ক্ষতির কথা বোঝানোর চেষ্টা করেন।
দুর্গত এলাকা পরিদর্শন করার পর দলের কোনও সদস্যই সাংবাদিকদের কাছে মুখ খুলতে রাজি হননি। তবে সূত্রের খবর, রাজ্যের অবস্থা দেখে তার ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি তঁারা অনেকটাই বুঝতে পেরেছেন। কেন্দ্রীয় সরকারকে সে বিষয়ে তাঁদের বক্তব্য জানিয়ে দেবেন। এদিকে, বিষয়টি নিয়ে এদিন মুখ খুলেছে বিজেপি। দলের রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেছেন, ‘আমরা চাই, আমফানে রাজ্যের যে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, সেইজন্য প্রয়োজনীয় অর্থ কেন্দ্রীয় সরকার দিক। তবে, সেই অর্থ কোথায় কী ভাবে খরচ হচ্ছে, তার পূর্ণাঙ্গ হিসেবও যেন কেন্দ্র রাজ্যের কাছ থেকে ঠিকমতো বুঝে নেয়।’