নিজস্ব প্রতিবেদক: আগামী অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে ৩০ হাজার ৭৩৬ কোটি টাকার বরাদ্দ থাকছে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে। এ তথ্য জানিয়ে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেছেন, বাজেটে এবার সঞ্চালন এবং বিতরণ খাতে বেশি বরাদ্দ রাখা হচ্ছে। তিনি বলেন, করোনাভাইরাসের সংক্রমণের কারণে গ্যাস ও বিদ্যুৎ বিলের বিলম্ব মাশুল জুন পর্যন্ত মওকুফ করা হয়েছিল। তবে এর মেয়াদ কোনোভাবেই আর বাড়বে না। ৩০ জুনের মধ্যে এসব বকেয়া বিল না দিলে বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। বুধবার অনলাইনে এক ব্রিফিংয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
আজ বাজেট প্রস্তাবিত ঘোষণা হওয়ার কথা রয়েছে। এর আগেই বিস্তারিত তুলে ধরতে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। চলতি অর্থবছরে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে মোট ২৮ হাজার ৫১ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। এবার বাজেটে প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকার মতো এখাতে বরাদ্দ বাড়ানো হয়েছে। যদিও গেল সপ্তাহে বিদ্যুৎ এবং জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের তরফ থেকে প্রস্তাবিত বাজেটে ২৭ হাজার ৯৯২ কোটি টাকা বরাদ্দ থাকছে বলে জানানো হয়। চলতি বছর বিদ্যুতে ৯৬ ভাগ এবং জ্বালানিতে ৭০ ভাগ বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন হয়েছে। করোনার কারণে এবার শতভাগ লক্ষ্য অর্জন করতে পারেনি কেউ। বিগত বছরগুলোয় এডিপি বাস্তবায়নে রেকর্ড করছে মন্ত্রণালয়।
প্রতিমন্ত্রী সংবাদ সম্মেলনে জানান, করোনার কারণে বিতরণ কোম্পানিগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এজন্য বাজেটে সঙ্কট কাটিয়ে ওঠার জন্য ৮ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ থাকছে। একটি আধুনিক সঞ্চালন এবং বিতরণ ব্যবস্থা গড়ে তোলার চেষ্টা করা হচ্ছে। এজন্য কিছুটা সময়ের প্রয়োজন। তিনি বলেন, মে পর্যন্ত বিতরণ কোম্পানি বিদ্যুৎ বিল আদায়ে ছাড় দিয়েছিল। এই সুবিধা আর বৃদ্ধি করা সম্ভব হচ্ছে না। তা হলে বিতরণ কোম্পানি সঙ্কটে পড়ে গেলে বিদ্যুৎ সরবরাহ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এজন্য সবাইকে একটু একটু করে এগিয়ে আসতে হবে।
বাড়তি বিল আদায় নিয়ে তিনি বলেন, গ্রাহক বিতরণ কোম্পানির সংশ্লিষ্ট এলাকায় ফোন করে সমস্যার সমাধান করতে পারেন। এটি না পারলে সেখানের ঊর্ধ্বতন কারও কাছে বিষয়টি জানাতে পারেন। এতেও কাজ না হলে সরাসরি আমার কাছে জানাতে পারেন। এক্ষেত্রে গ্রাহক অনলাইনে গেলেই আমার ই-মেইল অ্যাডড্রেস পাবেন। সেখানে তিনি আবেদন করতে পারেন। প্রতিমন্ত্রী বলেন, জ্বালানি খাতে গ্যাসের সরবরাহ বৃদ্ধির উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। এজন্য ওয়েল হেড কম্প্রেসর বসানো হচ্ছে। নতুন কূপ খনন এবং সরবরাহ ব্যবস্থা ভালো করা হচ্ছে। সাগরেও তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে মাল্টিক্লোয়েন্ট সার্ভে করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
জানা গেছে, এবার বাজেটে বিদ্যুতে ২৭ হাজার ৫৯৭ কোটি ৭৩ লাখ টাকার মধ্যে অর্থ বিভাগ দেবে ২৪ হাজার ৮০৩ কোটি ৯৩ লাখ, ইসিএ (ঠিকাদারদের মাধ্যমে অর্থায়ন) হবে ১ হাজার ৮৩৭ কোটি ৯৬ লাখ এবং নিজস্ব তহবিল থেকে আরও ৯৫৫ কোটি ৮৪ লাখ টাকা ব্যয় করা হবে। জ্বালানিতে ৩ হাজার ১৩৮ কোটি ৬৫ লাখের মধ্যে অর্থ বিভাগ দেবে ১ হাজার ৮৩৫ কোটি ৬২ লাখ, জিডিএফ (গ্যাস উন্নয়ন তহবিল) থেকে ২৬০ কোটি ২৯ লাখ এবং নিজস্ব খাত থেকে আরও ১ হাজার ৪২ কোটি ৭৪ লাখ টাকা ব্যয় করা হবে।
এবার বিদ্যুতে ৯৩ আর জ্বালানিতে ২৪ প্রকল্প পাচ্ছে এই বরাদ্দ। এ সময় প্রতিমন্ত্রী করোনার কারণে বিদ্যুৎ ও গ্যাসের সারচার্জ মওকুফের বিষয়ে বলেন, এটা আর মোটেও বাড়বে না। কারণ আমরা মনে করি, এখন ধীরে ধীরে (আমরা) স্বাভাবিক হয়ে যাচ্ছি। এটা বাড়ালে আবার আমাদের অবস্থা খারাপ হয়ে যাবে। সুতরাং এ সময় সবার পার্টিসিপেট (অংশগ্রহণ) দরকার।
তিন মাসের বিল এক সঙ্গে দেওয়াটা তো বার্ডেন (বোঝা) হয়ে যাবেÑ এমন প্রশ্নে নসরুল হামিদ বলেন, ‘অবশ্যই বার্ডেন হবে। তবে এজন্য আমরা আগেই বলেছিলাম প্রস্তুত থাকতে হবে। গ্রাহকদের প্রতি মাসের বিল দেওয়া হয়েছে। তবে আমরা বলেছিলাম পরের মাসে বিল দিলেও সার্চ চার্জ লাগবে না। কিন্তু আগামী ৩০ জুনের মধ্যে বিল পরিশোধ করতে হবে। এরপর একদিন পার হলেই সার্চ চার্জ দেওয়া লাগবে।
৩০ জুনের পরও কেউ যদি বিল দিতে না পারে তা হলে তাদের লাইন কেটে দেওয়া হবে কি না- জানতে চাইলে তিনি বলেন, যে নিয়ম আছে সে নিয়মই প্রয়োগ হবে। অতিরিক্ত বিলের বিষয়ে বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী বলেন, বিতরণ কোম্পানিগুলো এটা সমন্বয় না করলে আমার বরাবর আবেদন করলেই হবে। আমি সব কোম্পানিকেই এগুলো সমন্বয় করতে বলেছি। গ্রাহক যাতে সন্তুষ্ট হয় সেভাবেই ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এজন্য মন্ত্রীর কাছে আবেদন করা কতটুকু সম্ভবÑ জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা জাস্ট বললাম। সবাই নিজের এলাকায় আবেদন করবে। তারপরও যদি কেউ প্রতিকার না পায় তা হলে তাদের আমার কাছে আবেদন করতে বলা হচ্ছে।