নিজস্ব প্রতিবেদক, রাঙামাটি: কয়েকদিনের ভারি বর্ষণের ফলে পার্বত্য জেলা রাঙামাটিতে ক্ষয়ক্ষতির সংখ্যা বেড়েছে। বৃহস্পতিবার পর থেকে সোমবার পর্যন্ত টানা পাঁচ দিনের ভারি বর্ষণে জেলার ১৯৯টি স্থানে ছোট-বড় ভাঙন ও পাহাড় ধস হয়েছে। পাহাড় ধসের কারণে জেলায় মোট ৩৮১টি বসতঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে; এরমধ্যে আশ্রয়ণেরও ঘর রয়েছে ১৩টি। ১০ জন আহত হয় এবং পানিতে ডুবে নিখোঁজ রয়েছেন একজন। সোমবার (৮ আগস্ট) সন্ধ্যায় রাঙামাটি জেলাপ্রশাসন এসব তথ্য জানিয়েছে।
জেলা প্রশাসনের হিসাবে, ১৪টি ব্রিজ-কালভার্ট, ১৬টি বিদ্যুতের খুঁটি এবং জেলার ৬৮৩ একর জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এছাড়া রাঙামাটি-চট্টগ্রাম জাতীয় মহাসড়কসহ জেলার ৭৫টি সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সাময়িকভাবে ৯টি স্থানে যানবাহন চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। পাহাড়ি ঢলের কারণে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে ১২৪টি ঘর ও ৫টি হাটবাজার পানিতে ডুবে আছে।
জেলার বিলাইছড়ি উপজেলার ফারুয়া ইউনিয়ন ও জুরাছড়ির চারটি ইউনিয়নেরই নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। তীব্র স্রোতের কারণে বন্ধ রয়েছে রাঙামাটি-বান্দরবান সড়ক পথে চলাচলের চন্দ্রঘোনা ফেরি। জেলায় সোমবার পর্যন্ত মোট ২৩৪টি আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এসব আশ্রয় কেন্দ্রে অবস্থান করছেন ১ হাজার ৭২৭ জন মানুষ।
রাঙামাটি জেলাপ্রশাসক মোহাম্মদ মোশারফ হোসেন খান বলেন, ‘রাঙামাটির বরকল উপজেলায় পানিতে ডুবে একজন নিখোঁজ রয়েছেন। নিখোঁজ ব্যক্তিকে উদ্ধারে ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরিরা উদ্ধার কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। নদীতে তীব্র স্রোত থাকায় উদ্ধার অভিযান ব্যাহত হচ্ছে। এছাড়া জেলার ৫টি ইউনিয়ের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে এবং জেলাজুড়ে বেশকিছু ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।’
এদিকে, সোমবার বিকেল সাড়ে সাড়ে ৪টার দিকে জেলা শহরের মানিকছড়ি এলাকায় জাতীয় গ্রিডের ৩৩ কেভি ভোল্টের লাইনে গাছ পড়ে বিকেল থেকে পুরো রাঙামাটি শহর বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। রাত সাড়ে ৯টায় জেলা শহরের প্রাণকেন্দ্র বনরূপাসহ বিভিন্ন এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ দেয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) রাঙামাটি বিতরণ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী সাইফুর রহমান সন্ধ্যায় জানিয়েছিলেন, জেলা শহরের মানিকছড়ি এলাকায় জাতীয় গ্রিডের সোর্স লাইনে একটি বড় গাছ পড়ে; এতে করে পুরো শহর বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে।’রাত সাড়ে ৯ টার বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয় শহরে । গ্রাহকদের অভিযোগ একটি গাছ সরাইতে প্রায় ৫ ঘন্টার সময় লাগার কথা নয়।
অপর দিকে জেলার কাপ্তাই উপজেলায় কর্ণফুলী নদীতে তীব্র স্রোত ও ফেরির পল্টুনের লোহার দড়ি ছিঁড়ে যাওয়ার কারণে সোমবার দুপুর ২টা থেকে রাঙামাটি-বান্দরবান সড়কের চন্দ্রঘোনা ফেরিতে পারাপার বন্ধ করেছে। পল্টুনের ছিঁড়ে যাওয়া ফেরীর তার সংস্কার ও নদীর তীব্র স্রোত না কমা পর্যন্ত ফেরি পারাপাল বন্ধ রেখেছে সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তর।
সওজ রাঙামাটি বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী সবুজ চাকমা বলেন, ‘তীব্র স্রোত আর পল্টুনের সমস্যার কারণে ফেরি পারাপার আপাতত বন্ধ রাখার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। কবে নাগাদ ফেরি চালু করা যেতে পারে সেটি আপাতত বলা যাচ্ছে না। তবে কর্ণফুলী নদীর দুই পাড়েই যানবাহন চলাচল করছে। কেবল ফেরি বন্ধ থাকায় এক পাড়ের যানবাহন অন্য পাড়ে যেতে পারছে না।’
উল্লেখ্য- জেলা প্রশাসন সুত্রে জানিয়েছে, ইতিমধ্যে ১০টি উপজেলা ১২টি থানায় ২৩৮টি আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে আরো কয়েকটি আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তত রাখা হয়েছে । জেলায় সবমোর্ট আশ্রয়কেন্দ্রে ১৭৩০ জনকে তিনবেলা খাবার দেয়া হচ্ছে ।