প্রত্যয় ওয়েব ডেস্ক রিপোর্ট:আজ থেকে ৭৩ বছর আগে ২০ জুন, গতকালকের দিনে ১৯৪৭ সালে দুই বাংলাকে ভাগ করা হয়। ছবিতে ১৯৪৭ সালে হিন্দুস্তান স্ট্যান্ডার্ডে ছাপা একটি মানচিত্র। পাঞ্জাব ভাগ করাটা যতটুকু সহজ ছিলো, বাংলা ভাগ তার চাইতে দশ গুন কঠিন ছিলো। শেষ পর্যন্ত বাংলার দুই তৃতীয়াংশ পায় পাকিস্তান যা আজকের বাংলাদেশ, এক তৃতীয়াংশ পায় ভারত যার নাম পশ্চিম বাংলা।
ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের সূতিকাগার ছিলো মূলত তৎকালীন বাংলা। বাংলার ২ মূল নেতা তখনকার শেরেবাংলা ও সোহরাওয়ার্দী কেউ চাননি প্রথমে পাকিস্তানের সাথে যোগ দিতে। শেরেবাংলা তার লাহোর প্রস্তাবে মুসলিম সংখ্যা গরিষ্ঠ একাধিক দেশের কথা বলেছিলেন। সোহরাওয়ার্দী ছিলেন পশ্চিম বাংলার লোক। তার জীবনের ৯০ ভাগ সময় কেটেছে কলকাতায়। বাংলা ভাগ হলে তিনি এক প্রকার রাজনৈতিক রিফিউজি হয়ে যেতেন পূর্ব বাংলায়। তিনি তার শেষ বিন্দু দিয়ে চেষ্টা করেছিলেন বাংলা ভাগ না করে ইউনাইটেড বেঙ্গল নামে আলাদা দেশ গড়ার। তত্কালীন ইউনাইটেড বেঙ্গল অর্থাৎ পশ্চিমবঙ্গ, বিহার, উড়িষ্যা, আসাম, বাংলাদেশ পৃথিবীর ১২% জিডিপি পূরন করতো, পৃথিবীর অন্যতম একটি সমৃদ্ধ অঞ্চল হিসেবে পরিচিত ছিলো! শেষ পর্যন্ত পশ্চিম বাংলার কিছু রাজনৈতিক দলের বিরোধের কারনে তা সম্ভব হয়নি।
২০ জুন, ১৯৪৭ সালে একটা ভোট হয়।
বাংলার সাংসদদের মাঝে ১২০ জন বাংলা ভাগ করার বিপক্ষে ছিলেন, ৯০ জন পক্ষে। তারপর আলাদা আলাদা পূর্ব বাংলার সাংসদ ও পশ্চিম বাংলার সাংসদদের মাঝে ভোট হয় বাংলা ভাগ করা হবে কিনা, সেই প্রশ্নে পূর্ব বাংলায় ভাগ না করার পক্ষে ভোটে জিতলেও পশ্চিম বাংলায় ভাগ করা চেয়ে ভোট হয়।
ভোটের আগে শর্ত ছিলো কোন এক অংশ আলাদা হতে চাইলে অবশ্যই বাংলা ভাগ হবে, তাই হয়েছে।
The Bengal partition stories এ লেখা মাউন্টবেটেনের কাছে সোহরাওয়ার্দী আবেদন করেছিলেন তিনি জিন্নাহকে রাজি করাতে পারবেন যদি বাংলা ভাগ না হয় তাহলে বাংলার পাকিস্তানে যোগ দেওয়ার প্রয়োজন হবেনা, নিজেই স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে থাকতে পারবে। জিন্নাহও এতে রাজি ছিলেন, কারন তার মূল স্বপ্ন ছিলো পাকিস্তান। কিন্তু সেই ২০ জুন সোহরাওয়ার্দীর সব চেষ্টায় পানি পরে যায়। বর্তমান পশ্চিমবঙ্গ ও বর্তমান বাংলাদেশের প্রায় সব হিন্দু-মুসলমান স্বজাতির জন্য একটি স্বাধীন রাষ্ট্র চেয়েছিলেন! সেটা হবে পশ্চিমবঙ্গ আসাম ত্রিপুরা ও বর্তমান বাংলাদেশ নিয়ে কিন্তু ভারত ও পাকিস্তানের নিজ স্বার্থে ও নিজেদের মধ্যে কোন্দলে দুই বাংলা ভাগ হয়।
সোহরাওয়ার্দী দূরের পাকিস্তানে যোগ দেওয়ার চাইতে আলাদা দেশই ভালো মনে করেছিলেন দেশভাগের আগে। কারন বাস্তব পক্ষে পাকিস্তান একটা অস্বাভাবিক রাষ্ট্র হতো। তখনকার পরিস্থিতি বিবেচনায় হয়তো দুই বাংলা আলাদা হওয়া সঠিক ছিলো। ভাগের পক্ষে ভোট হয়ে যাওয়ায় শেষ পর্যন্ত সোহরাওয়ার্দী শুধু পূর্ব বাংলা নিয়ে আলাদা রাষ্ট্র গড়ার জন্য কিছু করেননি / করতে পারেননি / করার সুযোগও ছিলোনা তখন। তবে এইভাবে এত দূরত্বে অবস্থিত দুই রাষ্ট্র যে অসম্ভব হবে তা হয়তো তখনই প্রতীয়মান ছিলো। শেষ পর্যন্ত পূর্ব বাংলা স্বাধীন হয়, তবে তার বিনিময়ে দিতে হয় ২৪ বছরে ৩০ লাখেরও বেশি প্রাণ।