বিশেষ প্রতিবেদন,কলকাতা:বাস নামাতেই হবে রাস্তায়। না হলে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে বেসরকারি বাস মালিকদের বিরুদ্ধে। রীতিমতো সতর্ক করে দিলেন পশ্চিমবাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। উল্লেখ্য, কলকাতার রাস্তায় প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম বেসরকারি বাস চলছে। ফলে প্রতিদিনই সাধারণ মানুষ চরম দুর্ভোগে পড়ছেন।
বেসরকারি বাস যাতে নিয়মিত চলাচল করে, সেই নির্দেশ দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বলেছিলেন, স্বাস্থ্যবিধি মেনে বাস চালাতে। কিন্তু বেসরকারি বাস মালিকরা জানিয়েছিল, স্বাস্থ্যবিধি মেনে বাস চালালে লোকসান অত্যধিক বেড়ে যাবে। পরিস্থিতি বিবেচনা করে বেসরকারি বাস মালিকদের তিনমাসের জন্য বাস পিছু মাসে ১৫ হাজার টাকা করে ভর্তুকি দেওয়ার কথাও ঘোষণা করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী।
সেই ঘোষণাতেও বাস চালাতে রাজি নন মালিকরা। ফলে তিনদিন ধরে কলকাতার রাস্তায় প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম বাস চলছে। ফলে বাসে ভিড় বেড়ে যাচ্ছে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা সম্ভব হচ্ছে না। স্বভাবতই ক্ষুব্ধ মুখ্যমন্ত্রী বেসরকারি বাস মালিকদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দিলেন মঙ্গলবার। জানিয়ে দিলেন, রাস্তায় বাস না নামালে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। প্রয়োজনে মালিকদের কাছ থেকে বাস নিয়ে নেবে সরকার। তার পর সেই বাস সরকারই চালাবে। মুখ্যমন্ত্রী জানান, সে ক্ষেত্রে যদি বেসরকারি বাসের চালক সেই বাস চালাতে চান, তাঁকেই চালক হিসেবে নিয়োগ করবে সরকার। না হলে নতুন চালককে দিয়ে সেই বাস চালানো হবে।
এ কথা ঠিক, লকডাউনে বাস না চলায় বিশাল ক্ষতির মুখে পড়েছেন বেসরকারি বাসগুলির মালিকরা। তার পর জ্বালানির দাম বাড়ায় খরচও বেড়ে গিয়েছে। ফলে পুরনো ভাড়ায় বাস চালালে ক্ষতির অঙ্কই বাড়বে। এর মধ্যে স্বাস্থ্যবিধির নিয়ম মেনে চলবে, বাসে যতগুলি সিট রয়েছে, ঠিক ততজনই যাত্রী তুলতে হবে। তাতে লোকসানের পরিমাণ অস্বাভাবিক বেড়ে যাবে বলে অভিযোগ বাস মালিকদের। মাসে ১৫ হাজার টাকা ভর্তুকিতে সেই লোকসান মেটানো যাবে না। তাই বাস মালিকদের দাবি, ভর্তুকি দিতে হবে না, বরং ভাড়া বাড়ানোর অনুমতি দিক সরকার। তাতে লোকসান কমানো অনেকটাই সম্ভব হবে বলে তাঁদের দাবি।
এদিকে, সরকার ভাড়া না বাড়ালেও অনেক বেসরকারি বাস কলকাতার রাস্তায় বেশি ভাড়া নিয়েই যাত্রী পরিবহণ করছে বলে অভিযোগ। যাত্রীদের কেউ কেউ এমন অভিযোগও করেছেন, সরকার ভাড়া না বাড়ালেও অনেক বেসরকারি বাস নতুন ভাড়ার টিকিটও ছাপিয়ে ফেলেছে। যাত্রীদের হাতে বেশি ভাড়ার বিনিময়ে সেই টিকিট দিচ্ছেও। বিষয়টি সরকারেরও নজরে এসেছে। এদিন মুখ্যমন্ত্রী জানিয়ে দেন, ১ জুলাই বেসরকারি বাস মালিকদের গতিবিধি সরকার দেখবে। তার পর ৩ জুলাই সরকার পরবর্তী পদক্ষেপের কথা জানাবে। শোনা যাচ্ছে, সরকারের নির্দেশ না মানলে প্রয়োজনে বেসরকারি বাসগুলির পারমিট বাতিলও করা হতে পারে।
এদিকে, এদিনই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাজ্যের মানুষকে ২০২১ সালের জুন মাস পর্যন্ত বিনামূল্যে রেশন দেওয়ার কথা ঘোষণা করেন। আর তা নিয়েই রাজ্যে নতুন করে রেশন–রাজনীতি শুরু হয়ে যায়। উল্লেখ্য, এদিন বিকেলে জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দিতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ঘোষণা করেন, আরও পাঁচ মাস, মানে নভেম্বর পর্যন্ত ফ্রি–রেশন দেওয়া হবে দেশের ৮০ কোটি মানুষকে। তার পর শেষ বিকেলে মুখ্যমন্ত্রী সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে আগামী বছরের জুন পর্যন্ত রাজ্য ফ্রি রেশন দেবে বলে জানান। রাজনীতি বিশেষজ্ঞদের ধারণা, প্রধানমন্ত্রীকে টেক্কা দিতেই এই ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। কারণ, ২০২১ সালে বাংলায় বিধানসভা নির্বাচন। তাই প্রধানমন্ত্রীকে টেক্কা দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী ফ্রি রেশন দিয়ে গরিব মানুষের মন জয় করতে চাইছেন।
বিজেপিও মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণাকে রাজনৈতিক কৌশল বলে দাবি করেছে। তারা প্রশ্ন তুলেছে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ফ্রিতে রেশন কী ভাবে দেবেন? কারণ, রেশনের চাল–গমে পুরো ভর্তুকিই দেয় কেন্দ্রীয় সরকার। এখানেই থেমে থাকেননি বিজেপি নেতারা। মুখ খুলেছেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষও। তিনি বলেছেন, ‘বিধানসভা ভোটের দিকে তাকিয়েই এই ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। তবে আগামী বছর জুন মাস পর্যন্ত মুখ্যমন্ত্রী তাঁর সরকারকে টিকিয়ে রাখতে পারবেন তো? তাঁর উচিত সে কথাই আগে ভাবা। পরে না হয় ভোটের কথা ভাববেন।’ দিলীপ ঘোষের এই কথার পর ফের রাজ্য রাজনীতিতে নতুন করে জল্পনা শুরু হয়েছে।