বিশেষ প্রতিবেদন,কলকাতা:রাজ্যে করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আনতে বেশ বেগ পেতে হচ্ছে স্বাস্থ্য কর্তাদের। রবিবারের তুলনায় সংক্রমণ কিছুটা কমলেও তা তেমন আহামরি কিছু নয়। এদিন বিকেল পর্যন্ত শেষ ২৪ ঘণ্টায় রাজ্যে করোনা ভাইরাসে সংক্রমিত হয়েছেন ৮৬১ জন। রবিবার এই সংখ্যাটা ছিল ৮৯৫ জন। সোমবার পর্যন্ত শেষ ২৪ ঘণ্টায় যাঁরা আক্রান্ত হয়েছেন, তাঁদের মধ্যে ২৮১ জন। রবিবার সংখ্যাটা ছিল ২৪৪ জন। এর অর্থ, গোটা রাজ্যে সংক্রমণ কিছুটা কমলেও কলকাতায় প্রায় ৪০ জন বেড়ে গিয়েছে। বিষয়টি স্বাস্থ্য কর্তাদের যে স্বস্তি দিচ্ছে না, সে কথা বলাই বাহুল্য।
সোমবার রাজ্য সরকারের স্বাস্থ্য দফতর যে বুলেটিনে এই তথ্যগুলি প্রকাশ করেছে, তা থেকে আরও জানা গিয়েছে, রাজ্যে মোট সংক্রমিতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২২ হাজার ৯৮৭ জন। যদিও এঁদের মধ্যে করোনা অ্যাক্টিভ রোগীর সংখ্যা ৬ হাজার ৯৭৩ জন। শেষ ২৪ ঘণ্টায় ২২ জন করোনা আক্রান্তের মৃত্যু হয়েছে। করোনা–সময়ে এই সংখ্যাটা এখনও পর্যন্ত সর্বোচ্চ। ফলে রাজ্যে করোনায় মোট মৃতের সংখ্যা হয়েছে ৭৭৯ জন। এদিন যে ২২ জন প্রাণ হারিয়েছেন, তাঁদের মধ্যে ১০ জনই কলকাতার। পরিস্থিতি বিবেচনা করে কলকাতা, বারাসত–সহ একাধিক এলাকায় লকডাউন আরও কড়াকড়ি করছে প্রশাসন। কলকাতার ১৯ রাস্তাকে ফের কন্টেনমেন্ট জোন ঘোষণা করা হয়েছে। এই তথ্যগুলির মধ্যে একটাই ইতিবাচক খবর রয়েছে। তা হল, রাজ্যে মোট করোনা–মুক্ত হয়ে সুস্থ হওয়ার হার ৬৬.২৭ শতাংশ। শেষ ২৪ ঘণ্টায় করোনা প্রকোপ থেকে সুস্থ হয়ে উঠেছেন ৫২৪ জন। ফলে এখনও পর্যন্ত করোনা–মুক্ত হয়ে সুস্থ হয়ে উঠেছেন ১৫ হাজার ২৩৫ জন।
করোনা–মুক্ত হয়ে সোমবার যাঁরা বাড়ি ফিরে গিয়েছেন, তাঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন শিলিগুড়ির প্রাক্তন মেয়র অশোক ভট্টাচার্য। উল্লেখ্য, গত ১৫ জুন বাংলার এই দাপুটে সিপিএম নেতার করোনা পরীক্ষার রিপোর্ট পজিটিভ আসে। তার আগে কয়েকদিন ধরে জ্বর, সর্দি–কাশি এবং শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা দেখা দেওয়ায় ব্যক্তিগত চিকিৎসকের পরামর্শে তাঁর করোনা পরীক্ষা হলেও রিপোর্ট নেগেটিভ আসে। কিন্তু ১৫ জুন অবস্থা ক্রমশ জটিল হলে শিলিগুড়ির একটি বেসরকারি হাসপাতালে তাঁকে ভর্তি করা হয়। তখন তাঁর করোনা পরীক্ষা করা হলেও সেই রিপোর্টও নেগেটিভ আসে। সেই সময় তাঁর স্ত্রীরও করোনা পরীক্ষা হয়। সেই পরীক্ষার ফলও নেগেটিভ আসে। সেই সময় অশোকবাবুর নিউমোনিয়া হয়েছে বলে জানা যায়। সেই চিকিৎসাই চলছিল। এর পর ১৬ জুন রাতে ফের তাঁর সোয়াব টেস্ট হলে রিপোর্ট পজিটিভ আসে।
তার পর থেকে তাঁর চিকিৎসা চলছিল। রবিবার তাঁর শেষ করোনা পরীক্ষার রিপোর্ট নেগেটিভ আসে। তার পর রবিবার দুপুরেই তাঁকে উত্তরায়ণের হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়। হাসপাতালের তরফে তাঁর হাতে পুষ্পস্তবক তুলে দেওয়া হয়। তিনিও হাসপাতালের চিকিৎসক, নার্সদের পাল্টা সংবর্ধিত করেন। হাসপাতাল থেকে সোজা চলে যান দলীয় কার্যালয়ে। সেখানে পুষ্পবৃষ্টি ছড়িয়ে তাঁকে বরণ করে নেওয়া হয়। তার পর সোজা বাড়ি ফেরেন। বাড়ির চারপাশে তখন ছিল অনুগামীদের ভিড়। আশেপাশের আবাসনের ব্যালকনিগুলিতেও ভিড় ছিল পড়শিদের। সকলেই তাঁকে করতালি দিয়ে অভিবাদন জানান। তাঁর স্ত্রী প্রদীপ দিয়ে তাঁকে বরণ করে নেন। সেই সঙ্গে চারদিকে বেজে ওঠে শঙ্খ।
অন্যদিকে, করোনায় সংক্রমিত বিজেপি সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায়ের অবস্থা এখন স্থিতিশীল। হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, লকেটের শারীরিক অবস্থার দিকে কড়া নজর রয়েছে চিকিৎসকদের। চিকিৎসকরাই জানিয়েছেন, তাঁর অবস্থা এখন স্থিতিশীল। আরও কয়েকদিন তাঁকে পর্যবেক্ষণের মধ্যে রাখা হবে। তার পর ফের তার সোয়াব টেস্ট হবে। উল্লেখ্য, ৩ জুলাই শুক্রবার টুইট করে লকেট নিজেই তাঁর করোনা সংক্রমণের কথা জানান। সেদিন হোম আইসোলেশনে থাকলেও দলের পরামর্শে ই এম বাইপাসের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হন।
বেশ কয়েকদিন ধরেই তাঁর মধ্যে করোনার একাধিক উপসর্গ দেখা গেলে ব্যক্তিগত চিকিৎসকের পরামর্শে করোনা পরীক্ষা করান। রিপোর্টে তাঁর কোভিড–১৯ ধরা পড়ে। এদিকে, লকেট চট্টোপাধ্যায়ের স্বামী এবং ছেলের করোনা পরীক্ষার রিপোর্ট নেগেটিভ এসেছে। তবে লকেটের আপ্ত সহায়কের এখনও করোনা পরীক্ষা হয়নি। তিনি বাড়িতে কোয়ারেন্টাইনে রয়েছেন।