নিজস্ব প্রতিবেদক: করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যে নতুন বিশেষ বিসিএসের মাধ্যমে আরো দুই হাজার ডাক্তার (সহকারী সার্জন) নিয়োগ দিতে যাচ্ছে সরকার। এই নিয়োগের প্রস্তাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সম্মতি পেয়ে এরই মধ্যে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
এর আগে গত মে মাসে ৩৯তম বিশেষ বিসিএসের (স্বাস্থ্য) অপেক্ষমাণদের মধ্য থেকে নজিরবিহীন দ্রুততায় দুই হাজার ডাক্তার নিয়োগ দিয়েছিল সরকার। এবার নতুন বিশেষ বিসিএসে যেসব চিকিৎসক নিয়োগ পাবেন, তাঁদের কভিড রোগীদের সেবায় কাজ করতে হবে।
স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব আব্দুল মান্নান বলেন, বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য দ্রুত আরো দুই হাজার সহকারী সার্জন নিয়োগ দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে। স্পেশাল বিসিএসের মাধ্যমে তাঁদের নিয়োগ দেওয়া হবে।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, কভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসার জন্য সারা দেশে বিদ্যমান বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালকে প্রস্তুত করা হয়েছে। এ ছাড়া ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটি বসুন্ধরায় (আইসিসিবি) ও ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের একটি মার্কেটকে রূপান্তর করে পৃথক দুটি আইসোলেশন সেন্টার স্থাপন করা হয়েছে। সারা দেশে এ রোগের চিকিৎসা দিতে পারে এ রকম বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, বেসরকারি ক্লিনিক প্রভৃতির একটি ম্যাপিং হয়েছে।
এসব হাসপাতালে কভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের জন্য চিকিৎসক ও নার্সদের নিবিড় তত্ত্বাবধান প্রয়োজন হয়। কিন্তু বর্তমানে দেশে যে সংখ্যক চিকিৎসক আছেন, সেই সংখ্যক দিয়ে করোনায় আক্রান্তদের প্রয়োজনীয় সেবা দিতে কিছুটা সমস্যা হচ্ছে। এ প্রেক্ষাপটে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসাসেবা প্রদানের জন্য জরুরি ভিত্তিতে চিকিৎসক নিয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
করোনা আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা প্রদানের জন্য বাড়তি ডাক্তারের প্রয়োজনীয়তার বিষয়ে সারসংক্ষেপ পাঠালে প্রধানমন্ত্রী সেটার দ্রুত অনুমোদন দিয়েছেন বলে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে। স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের (পার-২ অধিশাখা) থেকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো নতুন চিকিৎসক নিয়োগের বিষয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে।
গত ২ জুলাই পাঠানো ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, জরুরি ভিত্তিতে বিশেষ বিসিএসের মাধ্যমে দুই হাজার সহকারী সার্জনের জন্য নবম গ্রেডে পদ সৃষ্টি করা হচ্ছে। চিঠিতে আরো বলা হয়েছে, ক্যাডার পদ সৃষ্টি করতে প্রশাসনিক উন্নয়ন সংক্রান্ত সচিব কমিটির অনুমোদন নিতে অনেক সময় লেগে যায়। এ কারণে এই নিয়োগের ক্ষেত্রে ভূতাপেক্ষভাবে প্রশাসনিক উন্নয়ন সংক্রান্ত সচিব কমিটির অনুমোদন দেখানো হবে।
নিয়োগপ্রাপ্ত চিকিৎসকরা সংযুক্তির মাধ্যমে বিভিন্ন ‘কভিড’ হাসপাতালে পদায়িত হবেন। করোনা আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা কার্যক্রম শেষ হয়ে গেলে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বিভিন্ন স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানের ক্যাডার পদে তাঁদের পদায়ন করা হবে।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবটি দ্রুতই সরকারি কর্ম কমিশনে (পিএসসি) পাঠানো হবে। তখন পিএসসি নিয়োগপ্রক্রিয়া শুরু করবে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, দেশে করোনা পরিস্থিতিতে আক্রান্তের হারে সবচেয়ে বেশি আসছে ডাক্তারদের নাম। প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে চিকিৎসাকাজে নিয়োজিত কয়েকজন ডাক্তার মারাও গেছেন। আক্রান্ত হয়েছেন হাজারেরও বেশি। এমনিতেই দেশে ডাক্তারের সংখ্যা কম, তার ওপর করোনার আঘাতে নাজেহাল স্বাস্থ্য খাতকে শক্ত অবস্থানে রাখতে বিশেষ উদ্যোগে দ্রুত ডাক্তার, নার্স, মেডিক্যাল টেকনোলজিস্টদের নিয়োগ দিচ্ছে সরকার।