বিশেষ প্রতিবেদন,কলকাতা:আশঙ্কাটা ক্রমশ চেপে বসছে পশ্চিমবাংলার স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে। কারণ, গত কয়েকদিন ধরে গোটা রাজ্যে করোনায় সংক্রমিত হওয়ার সংখ্যা বেড়েই চলেছে। শেষ ২৪ ঘণ্টায় রাজ্যে করোনা সংক্রমিতের সংখ্যা ১০৮৮ জন। বুধবার এই সংখ্যাটা ছিল ৯৮৬ জন। মঙ্গলবার সংক্রমিত হন ৮৫০ জন। সোমবার এই সংখ্যাটা ছিল ৮৬১ জন।
বৃহস্পতিবার স্বাস্থ্য দফতরের প্রকাশিত বুলেটিন থেকে এই তথ্য পাওয়া গিয়েছে। সেখান থেকেই জানা গিয়েছে, সংক্রমিতদের মধ্যে ৩২২ জনই কলকাতার। অর্থাৎ, এদিন সংক্রমিতদের সংখ্যার হিসেবে কলকাতাই রয়েছে প্রথমে। এর পরেই রয়েছে উত্তর ২৪ পরগনা। সেখানে সংক্রমিতের সংখ্যা ২৬৪ জন। হাওড়ায় আক্রান্ত হয়েছেন ৪৭ জন। মালদায় আক্রান্ত হয়েছেন ৪৮ জন। ফলে মালদায় মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ২ জন। এ ছাড়া জলপাইগুড়িতে ৪৮ জন, দার্জিলিংয়ে ২০ জন নতুন করে সংক্রমিত হয়েছেন। এখনও পর্যন্ত রাজ্যে মোট করোনা আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৫ হাজার ৯১১ জন। করোনায় আক্রান্ত অবস্থায় এখন চিকিৎসাধীন রয়েছেন ৮ হাজার ২৩১ জন। কলকাতায় মোট সংক্রমিতের সংখ্যা হয়েছে ৮ হাজার ৩৬৮ জন। এদিন করোনা সংক্রমিতদের মধ্য মৃত্যু হয়েছে ২৭ জনের। ফলে করোনা আক্রান্ত মোট মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়াল ৮৫৪ জন।
এদিন যাঁরা প্রাণ হারান, তাঁদের মধ্যে কলকাতারই রয়েছেন ১৩ জন। কলকাতায় এখনও পর্যন্ত করোনায় মৃত্যু হয়েছে মোট ৪৫৭ জনের। তবে এর মধ্যে আশার আলো করোনা মুক্ত হওয়ার সংখ্যা। শেষ ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ৫২৬ জন। ফলে করোনা মুক্ত হয়ে রাজ্যে মোট সুস্থের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৬ হাজার ৮২৬ জনের। সুস্থ হয়ে হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাওয়ার হার ৬৪.৯৩ শতাংশ। করোনার আক্রোশ বাড়তে থাকায় সরকার ও প্রশাসন সতর্কতা জারি করেছে রাজ্য জুড়ে। পাশাপাশি কলকাতা–সহ রাজ্যের সমস্ত কনটেনমেন্ট জোনে বৃহস্পতিবার বিকেল পাঁচটা থেকেই কড়া লকডাউন শুরু হয়ে গিয়েছে। এই লকডাউনের কথা মঙ্গলবার স্বরাষ্ট্র সচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায় নবান্ন থেকে ঘোষণা করেন। যদিও বুধবার সংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে লকডাউনের কথা বলেননি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বরং বলেন, পুলিশ কড়া নজরদারি চালাবে কনটেনমেন্ট জোনগুলিতে।
এদিন বিকেল থেকেই কলকাতা–সহ রাজ্যের সমস্ত কনটেনমেন্ট জোনে কোথাও বাঁশ দিয়ে, কোথাও বা গার্ডরেল দিয়ে ব্যারিকেড করে রাস্তা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। রাস্তায় ঘুরে বেড়াচ্ছে পুলিশ। মাস্ক ছাড়া কাউকে দেখলেই বাড়িতে ফেরত পাঠিয়ে দিচ্ছে। মাইকেও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার জন্য প্রচার করছে। কনটেনমেন্ট জোনগুলির বাসিন্দাদের বাড়িতে ঢোকা বা বাড়ি থেকে বের হওয়া কার্যত বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। পুলিশের শীর্ষকর্তাদেরও এদিন রাস্তায় ঘুরে বেড়াতে দেখা যায়। তবে লকডাউন নিয়ে রাজ্যের ভূমিকায় খুশি নয় বিরোধী দলগুলি। বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ এদিন বলেছেন, ‘রাজ্যের মুখ্যসচিব, স্বরাষ্ট্রসচিব বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলোচনা করে কনটেনমেন্ট জোনের বিস্তারিত তালিকা বানিয়েছিলেন। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী সেই তালিকা এক কথায় পাল্টে দিয়েছেন।’
তিনি বলেন, ‘আমার ধারণা, রাজনৈতিক কারণেই এই কাজ করেছেন তিনি। তাই এই লকডাউন অর্থহীন। এই কড়া নজরদারিতে কোনও লাভ হবে বলে মনে হয় না।’ তিনি আরও অভিযোগ করেন, লকডাউনের প্রথম থেকেই মুখ্যমন্ত্রী বিধিনিষেধ মানেননি। রাজনৈতিক স্বার্থ দেখে চলেছেন। তাই তিনি এবং তাঁর দলের অন্য নেতারা ইচ্ছেমতো রাস্তায় ঘুরে বেড়িয়েছেন। তাই রাজ্যের কোথাও লকডাউন ছিল বলে মনেই হয়নি। আর পুলিশের তো শুধু কাজ ছিল বিজেপির জনপ্রতিনিধিরা রাস্তায় বের হলেই আটকে দেওয়া। করোনা মোকাবিলায় রাজ্যের ভূমিকায় অসন্তোষের কথা জানিয়েছে সিপিএম এবং কংগ্রেসও।