নিজস্ব প্রতিবেদক: বন্যায় ৩১ জেলায় এই পর্যন্ত ৮ লাখ ৬৫ হাজার ৮০০ পরিবার পানিবন্দি হয়েছে বলে জানিয়েছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান। তিনি বলেন, ‘৩১ জেলা বন্যাকবলিত হয়েছে এবং বন্যা উপদ্রুত উপজেলার সংখ্যা ১৪৭টি। ক্ষতিগ্রস্ত লোকের সংখ্যা ৩৯ লাখ ৭৫ হাজার ৯৩৭। এ পর্যন্ত ৩৯টি আশ্রয়কেন্দ্রে ৮৮ হাজার ৬২ জন আশ্রয় নিয়েছেন।’
শনিবার (২৫ জুলাই) সচিবালয় থেকে অনলাইনে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এই কথা জানান। এসময় মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মহসীন উপস্থিত ছিলেন।
বন্যা পরিস্থিতি প্রসঙ্গে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘প্রায় এক মাস হয়ে গেলো আমাদের দেশে বন্যা হয়েছে। গত ২১ জুলাই থেকে তৃতীয় দফায় পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রথম দিকে ২৬ জুন থেকে বন্যা শুরু হয়েছে, এরপরে ১১ জুলাই থেকে আবার পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। সেটা কমে আসার পর ২১ জুলাই থেকে আবারও পানি বাড়ছে। সমুদ্রে যদি জোয়ার থাকে, তাহলে দেশের মধ্যাঞ্চলের পানি কমতে কিছুটা দেরি হতে পারে। আর যদি জোয়ার না থাকে, তাহলে হয়তো আগস্টের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে দেশের সব জায়গার পানি নেমে যাবে। বন্যা দীর্ঘায়িত হলেও সরকারের ত্রাণ কার্যক্রম অব্যাহত রাখার সক্ষমতা রয়েছে।’
প্রতিমন্ত্রী জানান, বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র থেকে যে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে, সে অনুযায়ী ব্রহ্মপুত্র-যমুনার পানি বৃদ্ধি আগামী ২৪ ঘণ্টা পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। উত্তর-পূর্বাঞ্চলের মেঘনা অববাহিকার প্রধান নদ-নদীগুলোর পানি হ্রাস পাচ্ছে এবং আগামী ৪৮ ঘণ্টা তা অব্যাহত থাকবে। ঢাকা জেলার আশেপাশের নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা আগামী ৪৮ ঘণ্টা পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে। আমরা দেখছি যে ২৭ তারিখ পর্যন্ত পানি বৃদ্ধি পাবে। আগামী ২৪ ঘণ্টায় সুনামগঞ্জের বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নিম্নাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতি স্থিতিশীল থাকতে পারে।
প্রতিমন্ত্রী আরও জানান, এই সময়ে মানিকগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, ফরিদপুর, মাদারীপুর, চাঁদপুর, রাজবাড়ী, শরীয়তপুর, ঢাকা, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, নাটোর, বগুড়া, জামালপুর, সিরাজগঞ্জ, টাঙ্গাইল ও নওগাঁ জেলার বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হবে। আরও দুই দিন পরিস্থিতির অবনতি হয়ে তারপর পানি কমতে থাকবে।
ত্রাণ কার্যক্রম মনিটরিং প্রসঙ্গে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘বন্যায় ত্রাণ বিতরণ মনিটরিংয়ের জন্য ছয়টি কমিটি গঠন করা হয়েছে। ন্যাশনাল ডিজাস্টার রেসপন্স কো-অর্ডিনেশন সেন্টার থেকে সারাদেশে উপজেলা, ইউনিয়ন এবং ওয়ার্ড পর্যায়ে ত্রাণ কার্যক্রম মনিটরিং করা হবে। আগামী ২১ দিন তারা এই দায়িত্ব পালন ও মনিটরিং করবে। মাঠ পর্যায় থেকে যে কোনও সমস্যা সমাধান করবে এবং চাহিদা অনুযায়ী জানাবে, আমরা বরাদ্দ দেবো।’
ত্রাণ বিতরণ ও বরাদ্দ সম্পর্কে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘গত ২৮ জুন থেকে ত্রাণ বিতরণ ও বরাদ্দ অব্যাহত রাখা হয়েছে। আজও আটটি জেলায় নতুন করে বরাদ্দ দিয়েছি। এ পর্যন্ত তিন কোটি ৩৬ লাখ ৫০ হাজার টাকা, ১২ হাজার ১০ টন চাল, এক লাখ ২১ হাজার শুকনো খাবারের প্যাকেট এবং গবাদি পশুর খাদ্য কেনার জন্য এক কোটি ৪৮ লাখ টাকা ও শিশুখাদ্যের জন্য ৭০ লাখ টাকা দিয়েছি। আর ঘর বানানোর জন্য ৩০০ বান্ডেল টিন ও ৯০ লাখ টাকা দেওয়া হয়েছে।’