শাহাদাৎ হোসেন মুন্না :করোনায় যখন সারা দেশ জুড়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। সকল স্কুল, কলেজ, অফিস, আদালতসহ প্রায় সকল প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেলো। আস্তে আস্তে এক একটা এলাকা লক ডাউন ঘোষণা করা হলো। করোনার এই থাবায় পর্যায়ক্রমে বন্ধ হয়ে যায় সকল পরিবহনের চাকা। অলস মনে দূর্বল শরীরে ঘরের কোনে হেলান দিয়ে ঘুমিয়ে পড়ে পরিবহন শ্রমিকরা। কোনও কোনও শ্রমিকের চুলায় নিয়মিত আগুন জ্বলছে কিনা তা নিয়েও সন্দেহ রয়েছে। অনেকে লোক লজ্জায় কারো কাছে হাত পাততেও পারেনা। পরিবহন না চলায় অনেকে যথারীতি কাজ না করতে পেরে অসুস্থও হয়ে পড়ছে।
এ যেন এক নির্মম প্রতিচ্ছবি ফুটে উঠেছে পরিবহন শ্রমিকদের ঘরে।যাদের দিয়ে দেশে আন্দোলন করিয়ে সব স্থবির করাসহ বন্ধ করে দেওয়া হয় পরিবহন। যারা রাস্তায় বের হয়ে অনেকে দূর্ঘটনার শিকার হয়েছে। বিনিময়ে তারা অসুস্থ হয়ে ঘরের কোনেই পড়ছিলো। কিন্তু যারা ঘরের কোনে বসে এসব করিয়েছে তাদের কোন খোঁজ পর্যন্ত মেলেনি।
যেই শ্রমিকরা গাড়ী চালাতে গিয়ে প্রতিটি রাস্তার মোড়ে মোড়ে, নির্দিষ্ট পয়েন্টগুলোতে পরিবহনের বিভিন্ন ফেডারেশনের নামে প্রতিনিয়ত চাঁদা দিতে হতো। সেই চাঁদা নেওয়া ফেডারেশনের নীতি নির্ধারকরা এখন গা ঢাকা দিয়েছে! যারা নিজেদের শরীরের ঘাম, যাত্রীদের হাজারো বকাঝকা হজম করে সারাদিন যা আয় রোজগার করে, তার সিংহভাগ পরিবহনের নেতাদের হাতে তুলে দিয়ে বাসায় যাওয়ার সময় রাতের খাবারের জন্য চাল কিনে নিয়ে যায়!
এমন পরিস্থিতি প্রায় সকল পরিবহন শ্রমিকের ঘরের প্রতিদিনের দৃশ্য একই রকম। তারা অসুস্থ হলে নেই কোনও চিকিৎসার ব্যবস্থা। এমনকি তারা এক্সিডেন্ট হলেও তাদের জন্য নেই কোনও স্বাস্থ্য বীমা। বর্তমানে দেশের এই সঙ্কটকালে পরিবহন সেক্টরের নীতি নির্ধারকদের সহায়তার হাত এখনো খুলতে দেখা যায়নি। তবে কি তারা পরিবহনে এই শ্রমিকদের দিয়ে ফেডারেশন নামের চাঁদাবাজি করছিলো? আসলে ধরে নেবো আমাদের বিবেক মরে গিয়েছে। না হয় আমরা যাদের দিয়ে স্বার্থ হাসিল করে আমাদের পকেট ভারী করি। তাদের এই দূরবস্থায় আজ নীরব কেন? হয়তো দেশের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে, সব আগের মতো ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু তাদের এই দূরবস্থায় কতো পরিবহন শ্রমিক যে অসুস্থ হয়ে একেবারে হারিয়ে যাবে। তাদের হিসাব কি কেউ রাখবে? তাদের অসহায় পরিবারগুলো কিভাবে জীবন যাপন করবে তার খোজ কি নেবে?
তাই পরিবহন নেতাদের কাছে আশা করবো, তাদের জীবন যাপন সহায়তায় দেশের এই ক্রান্তিকালে তারা এগিয়ে আসবে। তাদের পরিবারগুলোর খবর নিয়ে যেন সহায়তা দেয়।
উল্লেখ্য, মতামতের জন্য সম্পাদক কিংবা কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়।
লেখক: শাহাদাৎ হোসেন মুন্না
ভাইস চেয়ারম্যান,সৃষ্টি হিউম্যান রাইটস সোসাইটি।