বিশেষ সংবাদদাতা,কলকাতা : তৃণমূলের সভা হোক বা পশ্চিমবাংলা সরকারের সরকারি অনুষ্ঠান, সব জায়গায় বড় করে থাকে মুখ্যমন্ত্রী তথা শাসক দলের প্রধান নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি। এমনকী, সেখানে পরিষ্কার লেখা থাকে ‘মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অনুপ্রেরণায়’। দলের ছোট থেকে বড়, এমনকী মন্ত্রী থেকে সরকারি আধিকারিক, কারও পক্ষেই এর ব্যতিক্রম করে কোনও সভা–সমাবেশ বা অনুষ্ঠান করা সম্ভব হয় না। কিন্তু মঙ্গলবার এরই ব্যতিক্রম দেখা গেল পূর্ব মেদিনীপুরের পটাশপুরে। সেখানে সরকারি অনুষ্ঠান হল, অথচ ছিল না মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কোনও ছবিই। আর সেই দুঃসাহসিক অনুষ্ঠানটির প্রধান আকর্ষণ ছিলেন রাজ্যের পরিবহণ মন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী স্বয়ং।
স্বভাবতই প্রশ্ন উঠেছে, তা হলে কি সত্যিই শুভেন্দু তৃণমূল ছাড়ছেন? যদিও এই প্রশ্নের কোনও উত্তর বা ইঙ্গিত এদিন তাঁর মুখ থেকে শোনা যায়নি। যেমন একবারও তিনি উচ্চারণ করেননি মুখ্যমন্ত্রীর কথাও। অবশ্য নিজের দল তৃণমূলকে কটাক্ষ করতে তিনি ছাড়েননি। বলেছেন, ‘শুধু দল নিয়ে কাজ করলেই হয় না, মানুষের জন্য কাজ করতে হয়। যদি কেউ শুধু দল নিয়েই কাজ করেন, তা হলে তিনি হয়তো কিছুদিন ক্ষমতাবান থাকবেন, বেশিদিন থাকবেন না। কিন্তু যদি মানুষের জন্য এবং মানুষকে নিয়ে কেউ কাজ করেন, তা হলে তিনি অনেকদিন থেকে যাবেন। কারণ, ক্ষমতার দম্ভ যে কেউ দেখাতে পারেন, কিন্তু শেষ কথা বলবে মানুষই। নন্দীগ্রামের লড়াইয়ে আমরা সেটাই দেখেছি। কেউ যদি মানুষের আবেগ জিতে যেতে পারেন, তা হলে তিনিই একমাত্র রাজনীতিতে টিকে থাকবেন। না হলে হারিয়ে যাবেন বিস্মৃতিতে।’ এদিন পটাশপুরে রাজ্যের মন্ত্রী হিসেবে শুভেন্দু অধিকারী আড়গোয়াল পঞ্চায়েতের প্রশাসনিক ভবনের উদ্বোধন করেন।
দলের মধ্য থেকে যাঁরা তাঁর সমালোচনা করছেন, এই অনুষ্ঠানে তাঁদের প্রতি শ্লেষ ঝরে পড়ে তাঁর বক্তব্যে। তিনি বলেন, ‘যাঁরা সাইকেল চালানো শিখতে গিয়ে বারবার পড়ে যান, কিন্তু নিজেই উঠে আবার চালান, তাঁরাই ঠিকমতো সাইকেল চালানো শেখেন। কিন্তু যাঁরা সাইকেল চালাতে গিয়ে পড়ে যাওয়া মাত্র আর একজন এসে তাঁকে তুলে দিয়ে ঠেলে নিয়ে যান, তাঁরা ঠিকমতো সাইকেল চালানো শিখতে পারেন না। তাঁদের সাইকেল চালানো শিখতে ছয় থেকে আটমাস লেগে যায়।’ যদিও তাঁর এমন বক্তব্যের পাল্টা দিয়েছেন পূর্ব মেদিনীপুর জেলা তৃণমূল সভাপতি অখিল গিরিও। তিনি বলেছেন, ‘শুভেন্দু অধিকারীর মুখে গণতন্ত্রের কথা মানায় না। হলদিয়া ডেভেলপমেন্ট অথরিটি কী ধরনের গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে তিনি চালিয়েছেন, তা কারও অজানা নেই। আর সরকারি প্রকল্পে টাকা আসে সরকারের কাছ থেকে। সেই সরকারের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই সরকারি অনুষ্ঠানে কেন মুখ্যমন্ত্রীর ছবি ছিল না, তা বিডিও–র কাছে আমরা জানতে চেয়েছি। পঞ্চায়েত প্রধানকেও শোকজ করা হবে।’
তৃণমূলে শুভেন্দুর সমালোচনা এবং শুভেন্দুকে সমালোচনা দেখে মুখ খুলেছে বিজেপিও। দলের রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ রসিকতা করে বলেছেন, ‘দেখেশুনে মনে হচ্ছে, তৃণমূলে এখন যা চলছে, তাতে মনে হচ্ছে, সমালোচকরাই শুভেন্দু অধিকারীকে বিজেপিতে পাঠিয়ে ছাড়বে।’ দলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক সায়ন্তন বসু বলেছেন, ‘তৃণমূল শুভেন্দু অধিকারীর প্রকৃত জায়গা নয়। তৃণমূল দুষ্কৃতীদের দল। তাঁর উচিত তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দেওয়া। তা হলে তিনি মানুষের জন্য কাজ করতে পারবেন।’ তবে শুভেন্দু কী করবেন, সে বিষয়ে এখনও পরিষ্কার করে কিছু জানা যায়নি। সকলেই তাকিয়ে রয়েছেন ১০ নভেম্বর নন্দীগ্রামে তৃণমূলের সভার দিকে। ওইদিন ওই সভা ডেকেছেন শুভেন্দু নিজেই। সেখানে তাঁর অনুগামী নেতা ও কর্মীরাই উপস্থিত থাকবেন। তার আগে রাজ্যে সভা করে যাচ্ছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। তাই নন্দীগ্রামের সভাটিকেই গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন রাজনীতি বিশেষজ্ঞরা। মনে করা হচ্ছে, পরবর্তী রাজনৈতিক পদেক্ষপের কথা হয়তো ওই সভাতেই ঘোষণা করবেন শুভেন্দু অধিকারী।