বিশেষ সংবাদদাতা,কলকাতা:পশ্চিমবাংলার রাজনীতিতে এখন চরম শত্রু দল হিসেবে পরিচিত তৃণমূল আর বিজেপি। নানা ইস্যুতে দুটি দল বারবারই পরস্পরের বিরুদ্ধে তোপ দেগে থাকে। এবার এমন একটি ঘটনা নিয়ে পরস্পরের দিকে দুটি দল অভিযোগের আঙুল তুলেছে, তা নিয়ে রাজনীতির বাইরের মানুষও হকচকিয়ে যাবেন। ঘটনাটি হলদিয়া বন্দর শহরে খাবার লুঠের। অভিযোগকারী বিজেপি। অভিযুক্ত তৃণমূল। বিজেপির অভিযোগ, তাদের কর্মীদের জন্য তৈরি করা খাবার নাকি খেয়ে গিয়েছেন তৃণমূল কর্মীরা। তৃণমূল অভিযোগ অস্বীকার করে পাল্টা অভিযোগ করেছে, এটা একটা চক্রান্ত। তৃণমূলের বদনাম করতেই নাকি বিজেপি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে এই অপপ্রচার করছে। ফলে এক দলের খাবার অন্য দলের খেয়ে নেওয়ার অভিযোগ আর পাল্টা অভিযোগে জোর শোরগোল পড়ে গিয়েছে হলদিয়া জুড়ে। ওয়াকিবহাল মহলের ধারণা, রাজ্য– রাজনীতির ইতিহাসে এমন ঘটনা নজিরবিহীন।
জানা গিয়েছে, হলদিয়ায় বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের একটি সভা ছিল৷ অনেক দূর থেকে বহু বিজেপি কর্মী–সমর্থক দিলীপ ঘোষের সেই সভায় উপস্থিত হয়েছিলেন। দুপুরের আগেই তাঁরা সভাস্থলে আসতে শুরু করে দেন। অনেকে সকালের মধ্যেই পৌঁছে যান সেখানে। তাই বিজেপির জেলা কমিটির তরফে তাঁদের খাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছিল৷ কিন্তু খাওয়ার সময় খাবারের জায়গায় দেখা যায় প্রচুর ভিড়। রীতিমতো হইহট্টগোল হচ্ছে সেখানে। তার মধ্যে সকলেই খেয়েদেয়ে চলে যান। এক সময় খাবারও ফুরিয়ে যায়। কিন্তু তখনও দেখা যায়, বহু বিজেপি কর্মীরই খাওয়া হয়নি। সেই সময়ই প্রশ্ন ওঠে, সভাস্থলে যত বিজেপি কর্মী উপস্থিত ছিলেন, তাঁদের সংখ্যা অনুযায়ীই খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। তা হলে তাঁদের খাবার কম পড়ল কেন? তখনই বিজেপি নেতারা বিষয়টি অনুসন্ধান করতে শুরু করেন। বিজেপির আঞ্চলিক কমিটির সূত্রে খবর, দেখা যায়, প্রথম দিকে দলের পর দল বেঁধে যাঁরা এক প্রকার জোর করে খেয়ে গিয়েছেন, তাঁরা কেউই নাকি বিজেপি কর্মী–সমর্থক নন। তাঁদের অনেককে নাকি বিজেপির কেউ কেউ চিনতেও পেরে যান। তাঁদের বক্তব্য, তাঁরা সকলেই তৃণমূল কর্মী।
জেলা বিজেপির অভিযোগ, হলদিয়া পুরসভার ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আজিজুল রহমানের অনুগামীরাই নাকি এই কাণ্ড ঘটিয়েছেন। আর তাই বিজেপি কর্মীদের অভুক্ত থাকতে হয়েছে। বিজেপির আঞ্চলিক কমিটি সোজাসুজি অভিযোগের আঙুল তুলে কাউন্সিলর আজিজুল রহমানের বিরুদ্ধে তীব্র আক্রমণ শানিয়েছে। বলেছে, বিজেপির নাম খারাপ করতেই আজিজুল রহমান চক্রান্ত করে এই কাজ করিয়েছেন। অবশ্য বিজেপির এই অভিযোগ পুরোপুরি উড়িয়ে দিয়েছেন তৃণমূল নেতা আজিজুল রহমান৷ তিনি বিজেপির বিরুদ্ধে পাল্টা তোপ দেগে বলেছেন, ‘এটা বিজেপিরই ষড়যন্ত্র। তৃণমূলের নামে বদনাম ছড়াতেই এই অপপ্রচারের আশ্রয় নিয়েছে বিজেপি।’ পাশাপাশি তিনি এ কথাও বলেন, ‘তৃণমূল হল মা, মাটি ও মানুষের দল। আমরা সেই দলের সৈনিক। আমরা সবসময় মানুষের কথা ভাবি। তাই মানুষকে অভুক্ত রেখে আমরা খাবার খাব, তা হতে পারে না। আমরা সবসময় মানুষের মুখে খাবার তুলে দিয়ে থাকি। লকডাউনের সময় আমাদের এমন প্রয়াস সকলেই দেখেছেন। এই সময় আমরা অসংখ্য মানুষের মুখে খাবার তুলে দিয়েছি। তাই বিজেপি যা বলছে, তা পুরোপুরি মিথ্যে। এটা একটা রাজনৈতিক চক্রান্ত। আমাদের দলকে কালিমালিপ্ত করতেই এই মিথ্যে অভিযোগ করছে।’
যদিও নিজেদের বক্তব্যে অনড় বিজেপি। তাদের অভিযোগ, আজিজুল রহমান ঠিক কথা বলছেন না। অথবা, ইচ্ছে করেই মিথ্যে কথা বলছেন। তাঁরা চেয়েছিলেন, বিজেপি যাতে সভা করতে না পারে, তাদের সভায় যাতে কোনও বিজেপি কর্মী যোগ দিতে না পারেন, তাই নানা ভাবে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করে গিয়েছেন তাঁরা। তবু সফল হতে পারেননি। বিজেপির সভা হয়েছে। সফল ভাবেই হয়েছে। সেই কারণে অন্য কোনও উপায় খুঁজে না পেয়ে শেষে এমন জঘন্য কাজ করেছেন। আসলে তাঁরা রীতিমতো হামলা করেই বিজেপির খাবার ডাকাতি করে খেয়েছে। উল্লেখ্য, এই আজিজুল রহমান সেখানকার পরিচিত তৃণমূল নেতা। পাশাপাশি অধুনা তৃণমূলের বিক্ষুব্ধ নেতা শুভেন্দু অধিকারীর ঘনিষ্ঠ বলেই তিনি মেদিনীপুরের রাজনৈতিক মহলে পরিচিত। বিজেপির অভিযোগ, এমন ধরনের নানা কাজ এর আগেও নাকি আজিজুল রহমান করেছেন। সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্রকেও নাকি তিনি একবার আক্রমণ করেছিলেন।
জোর করে খাবার খাওয়া নিয়ে বিজেপি–তৃণমূলের চাপানউতোরে পূর্ব মেদিনীপুরের বন্দর শহর হলদিয়া রীতিমতো সরগরম হয়ে রয়েছে। রাজনীতি, এমনকী রাজনীতির বাইরের মানুষের অনেকেই এমন ঘটনার কথা শুনে নাকি মুখ টিপে হাসছেন। যদিও রাজনীতির ব্যাপার বলে অনেকে বিষয়টি নিয়ে প্রকাশ্যে কিছু বলছেন না!