কক্সবাজার প্রতিনিধি: নাম ও ঠিকানার মিল থাকায় গত ২১ জুলাই থেকে কক্সবাজারের রামু থানার মাদক মামলায় নিরপরাধ এক ব্যক্তি কারান্তরীণ রয়েছেন। এর প্রায় ৫ মাস পর পুলিশ সুপারের হস্তক্ষেপে অভিযান চালিয়ে প্রকৃত মাদককারবারি ও মামলার আসামিকে গ্রেফতার করেছে ডিবি পুলিশ।
বৃহস্পতিবার রাতে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার সদর ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের জারুলিয়াছড়ি এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয় বলে জানান কক্সবাজার জেলা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) ওসি শেখ মোহাম্মদ আলী। গ্রেফতারকৃত নুরুল আমিন ওরফে ইমাম হোসেন (২৪) নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার সদর ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের জারুলিয়াছড়ি এলাকার মৃত আশরুমিয়ার ছেলে; পাশাপাশি রোহিঙ্গা নাগরিক। কিন্তু তিনি মিয়ানমারের রোহিঙ্গা নাগরিক হলেও শ্বশুর মো. মনিরুজ্জামানকে পিতা সাজিয়ে নাইক্ষ্যংছড়ি থেকে জন্ম নিবন্ধন সনদ সংগ্রহ করে বসবাস করে আসছিলেন।
অন্যদিকে নিরপরাধ হওয়ার পরও মামলায় মিথ্যা আসামি হয়ে কারান্তরীণ থাকা নুরুল আমিন ওরফে নুরু (২৬) একই এলাকার সালামের ছেলে। এজাহারের বরাতে ডিবি ওসি বলেন, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে চলতি বছরের গত ২৮ এপ্রিল রাতে রামু-নাইক্ষ্যংছড়ি সড়কের চা বাগান এলাকার রাস্তার মাথায় ডিবি পুলিশ অভিযান চালায়। এ সময় ইয়ামাহা এফজেড মডেলের মোটরসাইকেলের তেলের ট্যাংকের ভেতরে বিশেষ কৌশলে লুকিয়ে রাখা ৩০ হাজার পিস ইয়াবাসহ মোহাম্মদ রশিদ ওরফে খোরশেদ (৩০) নামের এক যুবককে আটক করা হয়।
পরে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে মাদক সিন্ডিকেটের সহযোগীদের নাম পুলিশের কাছে স্বীকার করে। স্বীকারোক্তিতে মোহাম্মদ রশিদ ওরফে খোরশেদ জানিয়েছিল, ইয়াবার চালান লেনদেনের সঙ্গে নুরুল আমিন ওরফে ইমাম হোসেন, মো. বেলাল হোসেন, বশির আহমেদ ও মাহমুদুর রহমান ওরফে গাছরারা জড়িত।
ওসি বলেন, পরে আটক মোহাম্মদ রশিদকে নিয়ে মজুদ করা আরও ইয়াবার চালান উদ্ধারে চা বাগানের ভিতরে পুলিশ অভিযান চালিয়েছিল। এতে ঘটনাস্থলে পৌঁছলে পুলিশকে লক্ষ্য করে তার সহযোগী ইয়াবা কারবারিরা গুলি ছুড়ে। পুলিশও আত্মরক্ষার্থে পাল্টা গুলি ছুড়ে। এতে দৌড়ে পালানোর সময় মোহাম্মদ রশিদ ও পুলিশের ৩ সদস্য গুলিবিদ্ধ হন।
পরে তাকে (মোহাম্মদ রশিদ) উদ্ধার করে রামু উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। এ সময় ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার হয়েছিল দেশীয় তৈরি ১টি বন্দুক ও ৩টি গুলি। এ ঘটনায় ডিবি পুলিশ বাদী হয়ে সংশ্লিষ্ট আইনে রামু থানায় মামলা দায়ের করেছিল বলে জানান শেখ মোহাম্মদ আলী।
এ মামলায় নুরুল আমিন ওরফে ইমাম হোসেন, মো. বেলাল হোসেন, বশির আহমেদ ও মাহমুদুর রহমান ওরফে গাছরাকে পলাতক দেখিয়ে আসামি করা হয়। ডিবি ওসি বলেন, গত ২১ জুলাই নাইক্ষ্যংছড়ি থানা পুলিশ মামলার পলাতক আসামি নুরুল আমিন ওরফে ইমাম হোসেনকে গ্রেফতারে অভিযান চালায়। এতে নাম ও ঠিকানা মিল থাকায় প্রকৃত আসামি মনে করে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার সদর ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের জারুলিয়াছড়ি এলাকার নুরু সালামের ছেলে নুরুল আমিন ওরফে নুরুকে গ্রেফতার করে।
পরে তাকে মামলায় আসামি দেখিয়ে আদালতে সোপর্দ করলে বিচারক কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। কিন্তু মামলাটির প্রথম তদন্তকারী কর্মকর্তা পরিদর্শক রুপল চন্দ্র দাশ অন্যত্র বদলি হলে তদন্তভার দেয়া হয় ডিবি পুলিশের ওসি শেখ মোহাম্মদ আলীকে।
মামলার কর্মকর্তা বিশ্বস্ত সূত্রে জানতে পারেন, মামলায় গ্রেফতার হয়ে কারান্তরীণ থাকা ব্যক্তি প্রকৃত আসামি নন এবং তিনি নিরপরাধ। তবে এজাহার নামীয় ৩ নম্বর আসামি নুরুল আমিন ওরফে ইমাম হোসেন এখনও গ্রেফতার এড়িয়ে প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে। এ তথ্যের ভিত্তিতে পুলিশ ঘটনাস্থল সরেজমিন পরিদর্শন করে প্রকৃত তথ্য সংগ্রহ করে। পরে এ তথ্যের ভিত্তিতে বৃহস্পতিবার রাতে অভিযান চালিয়ে মামলার প্রকৃত আসামিকে গ্রেফতার করা হয়। এ ঘটনায় গ্রেফতার আসামিকে আদালতে সোপর্দ করে প্রতিবেদন দাখিল করা হয়েছে বলে জানান ডিবি ওসি।