চট্টগ্রাম প্রতিনিধি: চট্টগ্রাম নগরের আকবরশাহ থানা এলাকায় শিশু ফাতেমা আক্তার মীমকে (৯) দল বেঁধে ধর্ষণের পর হত্যার ঘটনায় ৮ আসামিকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন চট্টগ্রাম নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৪। আজ সোমবার (১৪ ডিসেম্বর) এ রায় দেন আদালত। রায় ঘোষণার সময় ৭ আসামি আদালতে উপস্থিত ছিলেন। বাকি একজন এখনো পলাতক।
মৃত্যদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন মো. বেলাল হোসেন ওরফে বিজয় (১৮), মো. রবিউল ইসলাম ওরফে রুবেল (১৬), মো. হাছিবুল ইসলাম ওরফে লিটন (২৬), মো. আকসান মিয়া প্রকাশ হাসান (১৮), মো. সুজন (২০), মো. মেহেরাজ প্রকাশ টুটুল (৩২), আয়শা মমতাজ মহলের কেয়ারটেকার মনিরুল ইসলাম মনু (৪৯) ও শাহাদাত হোসেন সৈকত (১৯)। এদের মধ্যে শাহাদাত হোসেন সৈকত এখনো পলাতক। দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) এম এ নাসের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, ফাতেমা আক্তার মীম হত্যা মামরার সব আসামিকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আদালত। একইসঙ্গে আদালত তাদের প্রত্যেককে ১ লাখ টাকা করে অর্থদণ্ড দিয়েছেন।
২০১৮ সালের ২১ জানুয়ারি চট্টগ্রাম নগরীর আকবর শাহ থানাধীন বিশ্ব কলোনি এলাকায় অবস্থিত ‘আয়শা মমতাজ মহল’ নামের একটি ভবনের দ্বিতীয় তলা থেকে মীমের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। সে স্থানীয় একটি মাদরাসার দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল। ঘটনার পরদিন ২২ জানুয়ারি রাতে মীমের মা রাবেয়া বেগম বাদী হয়ে ধর্ষণ ও হত্যার অভিযোগ এনে মামলা দায়ের করেন। পুলিশ ওই ভবনের প্রহরীসহ ছয়জনকে গ্রেপ্তার করে। তখনই পুলিশ ঘটনায় জড়িত সাতজন বলে উল্লেখ করেছিল। সর্বশেষ ওই ঘটনায় ফ্ল্যাটের ভাড়াটিয়া মিরাজকে গ্রেপ্তার করে। মামলায় গ্রেপ্তার সাতজনের মধ্যে ছয়জনই দলবদ্ধ ধর্ষণের দায় স্বীকার করে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।
মিরাজের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দির বিষয়টি নিশ্চিত করে আকবরশাহ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) উত্পল বড়ুয়া বলেন, ‘যে ফ্ল্যাটে ধর্ষণের ঘটনা ঘটে, সেই ফ্ল্যাটে পরিবার নিয়ে ভাড়ায় থাকত মিরাজ ড্রাইভার। নিজের পরিবারের সদস্যরা চাঁদপুর বেড়াতে যাওয়ার সময় ফ্ল্যাট খালি ছিল। এ সুযোগে সেখানে মীমকে ধর্ষণ করে এরা।’ আদালত সূত্র থেকে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দির তথ্য অনুযায়ী, মিরাজের বাসা খালি থাকার তথ্য জানত প্রহরী মনু। ঘটনার দিন মনু ফোন করে মিরাজকে। এ সময় তাকে বাসায় যাওয়ার কথা বলে। এতে মিরাজ রাজি হয়ে মনুকে নিয়ে নিজের ফ্ল্যাটে যায়। ফ্ল্যাটে গিয়ে কিছুক্ষণের মধ্যে বেরিয়ে যায় মনু। পাঁচ মিনিট পর পুনরায় বাসার কলিং বেল টিপে মনু। তখন দরজা খোলে মিরাজ। দরজা খোলার পরপরই একটি মেয়েকে (মীম) নিয়ে বাসায় প্রবেশ করে মনু। সঙ্গে ছিল বিজয়, হাসান, রুবেল, সৈকত ও সুজন। বাসায় প্রবেশ করেই মনু ও বিজয় মেয়েটাকে নিয়ে মিরাজের বেডরুমে চলে যায়। পায়জামা খুলে মুখ বাঁধে। বিজয় মেয়েটির গলায় ছুরি ধরে। এরপরই মনু, বিজয়, লিটন, হাসান, রুবেল, সৈকত এবং শেষে মিরাজ মীমকে ধর্ষণ করে।
স্বীকারোক্তিতে মিরাজ আরো উল্লেখ করে, মনু ও বিজয় মেয়েটার গলা টিপে হত্যা করে। এ সময় বিদ্যুৎ চলে যায়। অন্ধকারের মধ্যে মনু, বিজয়, সুজন ও সৈকত মরদেহ বের করে সিঁড়ি ঘরে নিয়ে রাখে। অন্যরা যে যার মতো বাসা থেকে চলে যায়। বিদ্যুৎ আসার পর ফ্ল্যাটে তালা দিয়ে পালিয়ে যায়।