করোনা শব্দটির সাথে আকাশ, বাতাস, প্রাণীকুল, মনুষ্য কুল এখন সবাই পরিচিত। মাত্র তিন অক্ষরের একটি শব্দের কাছে পুরো পৃথিবী,সব বড় বড় শক্তি মাথা নত করতে বাধ্য হয়েছে।
পুরো বিশ্ব করোনার সাথে যুদ্ধ করতে গিয়ে এখন ক্লান্ত! কোন ভাবেই তাকে দমানো সম্ভব হচ্ছে না। করোনা সব কিছুকে স্তব্ধ করে দিয়েছে। এই মহামারী শুরু হয়েছিল সেই সভ্য চীন থেকে,এখন তার ধ্বংসাত্মক আভা ছড়িয়ে পড়েছে সর্ব দিকে।
পুরো বিশ্ব ‘লক ডাউন’ হয়ে আছে। মৃত্যুর মিছিল দিন দিন দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হচ্ছে।
বিশ্ব অর্থনীতি দিন দিন পতনের সীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছে।স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শুরু করে সব প্রতিষ্ঠান অচল হয়ে আছে। ইতিমধ্যে করোনো প্রকোপ থেকে রক্ষা পেতে আমরা সবাই ঘরে অবস্থান করছি তথা “হোম কোয়ারেন্টাইনে” আছি। হোম কোয়ারেন্টাইনের দিনগুলোতে অলস ভাবে বসে না থেকে, সারাক্ষণ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ডুবে না থেকে অমল এই সময়গুলো কে আমরা সঠিকভাবে কাজে লাগাতে পারি। তখন করোনা আমাদের কাছে ‘করুনায়’ পরিণত হবে।
এবার আসা যাক করোনাকে কিভাবে করুনায় পরিণত করা যায়!
প্রথমত আমরা যারা স্কুল পর্যায়ে আছি, তারা বিষয়ভিত্তিক নির্দিষ্ট একটা রুটিন করে সে অনুযায়ী পড়াশোনা চালিয়ে যাবো। রুটিনে প্রতিদিন সব বিষয় অন্তর্ভুক্ত থাকতে হবে। এতে করে প্রতিটা বিষয়ের উপর নিজের ভালো দখল থাকবে।
দ্বিতীয়ত যারা এইচএসসি পরীক্ষার্থী আছো তারা এখন নতুন কোনো কিছু পড়ার দরকার নাই।এখন যে সময়টা পাচ্ছো এটা তোমাদের জন্য বোনাস। প্রতিটা বিষয়ের প্রতিটা টপিক ভালোভাবে ঝালিয়ে নাও।যে যে বিষয়ে দুর্বলতা আছে বা যে যে টপিকে সমস্যা আছে ওগুলোর প্রতি বারবার নজর দাও, বারবার রিভাইস দাও। বাংলায় ভালো করার জন্য প্রতিটা কবিতা লাইন বাই লাইন ভালো করে বুঝে বুঝে পড়ো।আর চেষ্টা করবা প্রতিটা কবিতা বুদ্ধিমত্তার সাথে পড়তে এবং মুখস্থ রাখতে।যেমন-“এ পৃথিবীতে এক স্থান আছে” কবিতায় কয়টা গাছের নাম, কয়টা নদীর নাম উল্লেখ আছে!
এগুলো এখন যেমন দারুন কাজে দিবে,তেমনি ভর্তি পরীক্ষার যুদ্ধের ময়দানেও তোমাকে এগিয়ে রাখবে।
ইংরেজি নিয়ে কম বেশি আমাদের সবারই ভয় ভীতি কাজ করে। ইংরেজি তে ভালো করার জন্য তোমার ফাউন্ডেশন মজবুত হতে হবে।এই ফাউন্ডেশন মজবুত বলতে তোমার বেসিক স্ট্রং হতে হবে, গ্রামারের সঠিক ব্যবহার জানতে হবে,ভোকাবোলারি তথা শব্দ ভান্ডারে ভালো দখল থাকতে হবে,নিজ থেকে লেখার ক্ষমতা থাকতে হবে।
ইংরেজি বিষয়ের বেশির ভাগ টপিকই কিন্তু আনসিন।যা আমাদের নিজেদের ফ্রি হ্যান্ড রাইটিং এর উপর নির্ভর করে।
আর আইসিটি তে ভালো নাম্বার পাওয়া খুবই সহজ। কিছু কৌশল অবলম্বন করলে আইসিটিতে এ প্লাস পাওয়া কোন ব্যাপার না।
বিগত বোর্ড প্রশ্ন গুলো দেখে প্রতিটা অধ্যায় ভিত্তিক প্রশ্ন আলাদা করে ফেললেই হয়।আর নৈব্যক্তিক অংশে ভালো করার জন্য মেইন বই তথা বোর্ড বইটা ভালো করে রিডিং পড়তে হবে,বিগত বোর্ড প্রশ্ন গুলো বুঝে বুঝে সমাধান করতে হবে।
এখন জাস্ট সব বিষয় এই সময়টাতে ঝালিয়ে নিতে হবে।
তৃতীয়ত আসি আমরা যারা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের মাত্র তিন মাস গড়িয়েছে এমন। যেহেতু আমরা ফাস্ট ইয়ার সেহেতু আমরা ভাবছি আমাদের হাতে প্রচুর সময়।বাদ দাও মিয়া পড়ালেখা! পরীক্ষার আগের রাতে পড়ে সেমিষ্টার/ইয়ার কোপাই দিমু।
আসলে কিচ্ছুই হবে না! এভাবে সময় আছে-সময় আছে চিন্তা করতে করতে কোপ দিতে দিতে নিজেই পরে কোপ খাইতে হবে। আমার নিজের কথাই বলি-“আজকে পড়বো ,কালকে পড়বো,আরেহ এখনো তো অনেক টাইম, আমাদের তো ইয়ারলি এক্সাম এই সব অদ্ভুত স্বপ্ন দেখতে দেখতে ভার্সিটি লাইফের তিন মাস যে কিভাবে বিদায় নিয়েছে তার যোগ-বিয়োগ-গুন-ভাগ আমি কিছুতেই মিলাতে পারবো না”।আসলে সময়কে সঠিকভাবে ব্যবহার ছাড়া কোন প্রকার সাফল্য অর্জনই সম্ভব নয়। আমি একটা রুটিন করে আনুমানিক ধারণা পেলাম যে প্রতিদিন অল্প অল্প করে পড়লে আমাদের পড়া আর বাকি থাকে না।তাই আমরা যারা ফাস্ট ইয়ারে আছি কোর্স ভিত্তিক নিজের মতো করে একটা রুটিন সাজিয়ে সে অনুযায়ী পড়াশোনা শুরু করে দিই। দৈনিক রুটিন মাফিক এক ঘন্টা পড়লেও পড়া আর বাকি থাকবে না।
চতুর্থত আমরা যারা বই পোকা তথা বই পড়ুয়া আছি যাদের জন্য হোম কোয়ারেন্টাইন এই সময়টা তো একটা সুবর্ণ সুযোগ। সারাক্ষণ বইয়ের সাথে কথা বলে বলে,বইয়ের পৃষ্ঠায় নিমজ্জিত থেকে নিজেকে চাঙ্গা রাখতে পারি।
সর্বশেষ আমরা যারা লেখালেখি করি,আমরা যারা কবি, সাহিত্যিক তাদের জন্য তো ‘হোম কোয়ারেন্টাইন’ একটা মহা আশীর্বাদ! ঘরে বসে নির্জন পরিবেশে নির্জনে ফুটিয়ে তুলতে পারি নিজের কল্পনাগুলোকে। চিন্তাগুলোতে রুপ দিয়ে,প্রাণ দিয়ে নির্মাণ করতে পারিথ শিল্প। আমি নিজেও এই খারাপ সময়টাকে আপন করে নিয়ে লেখালেখির জগতে,কল্পনার জগতে নিজেকে ডুবিয়ে রেখেছি। ইতিমধ্যে, আমার অনেক লেখা বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক পত্রিকায়ও প্রকাশিত হয়েছে।মাথায় কল্পনা আসলে সেটাকে সঙ্গে সঙ্গে শিল্পে রুপায়নের চেষ্টা করি। চিন্তায় ডুবে থাকতে ভালোলাগে,কল্পনাকে ভালোবাসি, লেখালেখি করতে ভালোবাসি।
আসুন যার যার অবস্থান থেকে আমরা সচেতন থাকি এবং হোম কোয়ারেন্টাইন সময়টাকে সঠিকভাবে ব্যবহার করি। ঘরে অবস্থান করি এবং “করোনাকে করুনায় পরিণত করি”।
লেখক: ইমরান ইমন
শিক্ষার্থী: ইংরেজি বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।