বিশেষ প্রতিবেদন,কলকাতা : এবার সরাসরি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেই আক্রমণ করলেন বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারী। বললেন, ‘নিজের ক্ষমতায় মুখ্যমন্ত্রী হননি। যদি নিজের ক্ষমতায় হতেন, তা হলে ২০০১ সালেই হয়ে যেতেন। নন্দীগ্রামের মৃতদেহগুলির ওপর দাঁড়িয়ে তাঁকে মুখ্যমন্ত্রী হতে হয়েছে। যে কংগ্রেস ভেঙে তিনি তৃণমূল তৈরি করেছেন, সেই কংগ্রেসের হাত ধরেই তাঁকে ২০১১ সালে জোট করতে হয়েছিল। মুখ্যমন্ত্রী হতে হয়েছিল।’ যদিও তাঁর নাম একবারও উচ্চারণ করেননি তিনি। তবে পূর্ব বর্ধমানের পূর্বস্থলীতে তৃণমূল দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে এ ভাবেই নিশানা করলেন শুভেন্দু।
এদিন তাঁর কথায় উঠে আসে বাংলার বেকার যুবকদের কথা। বলেন, ‘সমস্ত স্থায়ী সরকারি চাকরি রাজ্য থেকে তুলে দিয়েছে এই সরকার। বদলে নিয়ে এসেছে অস্থায়ী চাকরি। সবই তো এখন টেম্পোরারি বা কন্ট্রাকচুয়াল কাজ। ২ হাজার থেকে আড়াই হাজার টাকার মাইনে দিয়ে এইসব চাকরি দিচ্ছেন তিনি। আর বলছেন, ১ কোটি কর্মসংস্থান তৈরি করেছেন। সমস্ত ভুল কথা। ২০১৪ সাল থেকে রাজ্যে স্কুল সার্ভিস কমিশনের নিয়োগ বন্ধ রয়েছে। টেট নিয়ে ভয়ঙ্কর কেলেঙ্কারি করে রেখেছেন। গোটা রাজ্যে আজ ২ কোটি প্রত্যক্ষ বেকার। সাড়ে ৯ বছরে মানুষকে যমের দুয়ারে পৌঁছে দিয়েছে এই সরকার। আর ভোট এসে গিয়েছে বলে মানুষের চোখে ধুলো দিতে এখন নিয়েছেন ‘দুয়ারে সরকার’ কর্মসূচি। একটা ফর্ম ফিল আপ করে জমা দেবেন। ওই পর্যন্তই কাজ। জানুয়ারি পর্যন্ত এই নাটক চলবে। ফেব্রুয়ারি মাসে একটা কার্ড হাতে পাবেন। ব্যস, সরকারের দায়িত্ব শেষ হয়ে যাবে। আপনারা যে তিমিরে ছিলেন, সেই তিমিরেই পড়ে থাকবেন। একটা টাকাও পাবেন না।’
এদিন তিনি আরও বলেন, ‘এই সরকার রাজ্যের মানুষকে কেন্দ্রীয় সরকারের ‘আয়ুষ্মান ভারত’ প্রকল্পের সুযোগ পেতে দেয়নি। কৃষকদের ৬ হাজার টাকা করে পাওয়া হয়নি। এই সুযোগ–সুবিধাগুলি পেতে হলে তৃণমূলকে রাজ্য থেকে বিদায় করতেই হবে। বিজেপিকে আনতেই হবে বাংলার ক্ষমতায়।’ শনিবার মেদিনীপুরের সভায় অমিত শাহের হাত থেকে তুলে নিয়েছিলেন বিজেপির পতাকা। রেখেছিলেন বক্তব্যও। তাঁকে সম্মান দিয়ে সভার শেষ বক্তা অমিত শাহের ঠিক আগেই তাঁকে বলার সুযোগ দেওয়া হয়েছিল। তার পর রবিবার বা সোমবার কোনও রাজনৈতিক কর্মসূচিতে অংশ নেননি শুভেন্দু। মঙ্গলবার পূর্বস্থলীতে ছিল তাঁর প্রথম জনসভা। যদিও সেই সভায় যাঁরা উপস্থিত থাকবেন বলে প্রচার হয়েছে, সেই তালিকায় নাম ছিল না তাঁর। পোস্টারে বা ফ্লেক্সেও তাঁর নাম দেখা যায়নি। আয়োজকদের তরফে বিষয়টি ব্যাখ্যা করে জানানো হয়, তাঁরা জানতেন না শুভেন্দু এই সভায় আসবেন। খবর পেয়েছেন সোমবার রাতে। তার পর আর এক বেলার মধ্যে সব কিছু করে ওঠা যায়নি। তবে শুভেন্দুর প্রথম জনসভায় যোগ দেওয়া নিয়ে রাজনৈতিক মহলের মধ্যে এদিন তুমুল আগ্রহ ছিল। তিনি কী বলেন, সে দিকে রাজনীতি বিশেষজ্ঞদেরও নজর ছিল।
তবে সে সবের পরোয়া করেননি শুভেন্দু। মঞ্চ থেকেই জানিয়ে দিলেন, তিনি বিজেপির একজন কর্মী হিসেবেই কাজ করতে চান। কোনও রকম নেতা হতে আসেননি। যদিও তৃণমূলের তরফে তাঁকে ‘বিশ্বাসঘাতক’ বলে উল্লেখ করে বলা হয়েছে, তিনি নাকি পদের লোভে বিজেপিতে গিয়েছেন। সেই অভিযোগেরই জবাব দিলেন এদিন মাত্র দশ মিনিটের বক্তৃতায়। সেই সঙ্গে বিঁধলেন তৃণমূল ও সেই দলের শীর্ষনেতাদেরও। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম না করে বললেন, ‘আজ আমি বিজেপিতে যোগ দিয়েছি বলে যাঁরা আমার নামে উল্টোপাল্টা বলছেন, তাঁরা কি জানেন না, সিঙ্গুরের অনশন ভাঙতে কে ফলের রস খাইয়েছিলেন? তিনি রাজনাথ সিং।’ সেই সঙ্গে এ কথাও বলেন, ‘যাঁরা আমাকে বিশ্বাসঘাতক বলছেন, তাঁরা শুনে রাখুন, অটলবিহারী বাজপেয়ী এবং লালকৃষ্ণ আদবানিরা আশ্রয় না দিলে আপনাদের দলটাই উঠে যেত। ১৯৯৮ সালে তৃণমূল তৈরি হওয়ার পর পঞ্চায়েত ভোটে বিজেপির সঙ্গেই জোটে গিয়েছিল। ১৯৯৮ এবং ১৯৯৯ সালে লোকসভা ভোটেও বিজেপির সঙ্গে জোট করেছিল তৃণমূল।’
এদিনের জনসভায় বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের পাশে দাঁড়িয়ে তিনি স্লোগান তোলেন, ‘বাংলায় এবার পরিবর্তনের পরিবর্তন চাই। এবার আমরা তৃণমূলকে হারাবই হারাব।’ পূর্বস্থলীর জনসভা শেষ হওয়ার পর তৃণমূলের হয়ে পাল্টা মুখ খোলেন সাংসদ সৌগত রায়। তিনি বলেন, ‘শুভেন্দুর আসলে কোনও নীতি নেই। তিনি ধর্মনিরপেক্ষতায় বিশ্বাস করেন না। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ক্ষমতা ছিল বলেই নতুন দল করেছিলেন। শুভেন্দুর সেই ক্ষমতা নেই। না হলে তিনিও নতুন দল করতেন। নিজে আলাদা দল করলে বোঝা যেত, তিনি একজন সাহসী নেতা।’ সৌগত রায়ের প্রশ্নগুলি শুভেন্দু শুনেছেন। তবে এদিন রাত পর্যন্ত সেইসব প্রশ্নের জবাব দেওয়ার প্রয়োজন বোধ করেননি তিনি।