বিশেষ সংবাদদাতা:
রেশন বণ্টনে দুর্নীতি নিয়ে পশ্চিমবাংলার বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ, সঙ্ঘর্ষ অব্যাহত। শুক্রবারই রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় সঙ্ঘর্ষ ও বিক্ষোভের খবর পাওয়া গিয়েছিল। হাসনাবাদে তো গুলিও চলে। একজন গুলিবিদ্ধ হন। জখম হন ১২ জনের মতো। শনিবারও তেমনই গোলমাল, অগ্নিসংযোগের খবর পাওয়া গিয়েছে। এ দিন মুর্শিদাবাদের লালগোলায়ও রেশন নিয়ে রীতিমতো গন্ডগোল বাধে। উত্তেজিত জনতা রেশন বণ্টনে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে বিক্ষোভ দেখায়। এক রেশন ডিলারের বাড়ির সামনেই আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ দেখানো হয়।
ঘটনায় রীতিমতো অসন্তোষ প্রকাশ করেন খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। তিনি অভিযোগ করেন, ‘বিভিন্ন জায়গায় যে গন্ডগোলগুলি হচ্ছে, তার পিছনে রয়েছে বিজেপি ও কংগ্রেস। তারাই মানুষকে ভুল বোঝাচ্ছে, উত্তেজিত করছে, প্ররোচিত করছে।’ পাশাপাশি তিনি সতর্ক করে দিয়ে এ কথাও জানিয়ে দেন, গোলমাল বন্ধ করতে হবে। না হলে যে জায়গাগুলিতে গোলমাল হচ্ছে, সেইসব জায়গায় রেশন দেওয়া বন্ধ করে দেওয়া হবে। যদিও পরে তিনি এ কথাও জানান, গোলমাল বন্ধ হলে এবং পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে তার পরই সেইসব জায়গায় রেশন দেওয়া হবে। সরকার কিছুতেই এই করোনা পরিস্থিতিতে রেশন বণ্টনের সময় এমন গোলমাল বরদাস্ত করবে না।
খাদ্যমন্ত্রীর এ কথার পরই বিরোধী দলগুলি সমালোচনায় মুখর হয়ে ওঠে। খাদ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে রীতিমতো তোপ দেখে প্রদেশ কংগ্রেসের প্রাক্তন সভাপতি তথা লোকসভায় কংগ্রেস নেতা অধীর চৌধুরী বলেন, ‘একজন খাদ্যমন্ত্রী এমন কথা কী করে বলতে পারেন? এ ধরনের কথা বলার অধিকার তাঁর নেই। রেশন দোকান তাঁর পৈতৃক সম্পত্তি নয় যে, ইচ্ছে হলে তিনি তা বন্ধ করে দেবেন, আবার ইচ্ছেমতো তা খুলে দেবেন! রেশন দোকান বন্ধ করে দিলে সমস্যার সমাধান হবে না। বরং তাতে সমস্যা আরও জটিল হবে।’ অধীর প্রশ্ন তোলেন, ‘রেশন বণ্টনে দুর্নীতি হয় কিনা, তা মানুষ ভালো করেই জানেন। তাঁর কথায় মানুষের প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা বদলে যাবে না।
খাদ্যসচিবকে কেন সরাতে হয়েছে, তার জবাব তিনি কি দিতে পারবেন? রেশনে যখন অনিয়ম হচ্ছিল, তখন তিনি কী করছিলেন? তিনি কি ঘুমোচ্ছিলেন?’ এমনকী, এদিন তিনি খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিককে ‘১০ শতাংশ মন্ত্রী’ বলেও উল্লেখ করেন।শুধু কংগ্রেস নয়, রেশন ব্যবস্থায় দুর্নীতি নিয়ে সরব হয়েছে বিজেপি এবং সিপিএমও। বিজেপি নেতা সায়ন্তন বসু বলেছেন, ‘সাধারণ মানুষের কাছে রেশন পৌঁছচ্ছে না, যাচ্ছে হাফ নেতাদের কাছে। তাই মানুষ প্রতিবাদ করছে।’ সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তী বলেছেন, ‘সাধারণ মানুষ রেশন পাচ্ছে না। সেই সমস্যার সমাধান না করে এখন কেন্দ্রের সঙ্গে ঝামেলা করতেই ব্যস্ত হয়ে পড়েছে রাজ্য সরকার।’ রাজ্য সরকারের পাশাপাশি করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের ভূমিকারও তীব্র সমালোচনা করেন তিনি।