করোনাভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে গত বছরের ১৮ মার্চ থেকে বন্ধ রয়েছে দেশের সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। সরকারি নির্দেশনার পরই বন্ধ হয়ে যায় ঢাকা কলেজ। তার একদিন পরই কলেজের সব আবাসিক হল বন্ধ ঘোষণা করে কলেজ কর্তৃপক্ষ। প্রায় দশ মাস বন্ধ থাকার পর জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারিতে বিভিন্ন বর্ষের শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা নেয়ার ঘোষণা দেয়া হয়েছে। এর আগেই বকেয়া সকল ফি পরিশোধ করে ফরম পূরণ করতে হবে। করোনকালে দীর্ঘদিনের জমে থাকা ফি পরিশোধ করতে গিয়ে বিপাকে পড়েছেন শিক্ষার্থীরা।
শিক্ষার্থীদের দাবি, করোনা পরিস্থিতিতে অনেকেরই পরিবারের আর্থিক অবস্থা খারাপ। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকা অবস্থায় পরীক্ষা নেয়া হচ্ছে। এই মুহূর্তে ফরম পূরনের জন্য বকেয়া ‘নির্ধারিত ফি’ আদায় অযৌক্তিক। যেহেতু গত দশ মাস কলেজের আবাসিক হলগুলো বন্ধ রয়েছে, তাই বকেয়া হল ভাড়া দিতে নারাজ তারা। এছাড়াও পরিবহন, চিকিৎসা, লাইব্রেরিসহ অন্যান্য সুবিধা শিক্ষার্থীরা যেহেতু ভোগ করেনি, তাই এসব ফি আদায়ও সম্পূর্ন অযৌক্তিক বলে শিক্ষার্থীদের দাবি।
ঢাকা কলেজের ইন্টারন্যাশনাল হলের আবাসিক শিক্ষার্থী মো. শরীফ হাসান বলেন, ‘গত এক বছরে কলেজের কোন শিক্ষার্থী বাস, লাইব্রেরি, ম্যাগাজিন, বিজ্ঞান ক্লাব, খেলাধুলা, চিকিৎসাসহ অন্য কোন সেবা গ্রহণ করেনি। পুরো ক্যাম্পাসই যেখানে বন্ধ সেখানে ফরম পূরনের জন্য এসব ফি আদায় করা অযৌক্তিক। আমরা চাই, কলেজ প্রশাসন সাধারণ শিক্ষার্থীদের কথা বিবেচনা করে এসব ফি মওকুফ করবে।’
উত্তর হলের আবাসিক শিক্ষার্থী মঈনুল হাসান বলেন, ‘হল না খুলেই পরীক্ষা শুরু হচ্ছে। এটাই আমাদের জন্য অনেক বড় চাপ। ঢাকায় এসে থাকব কোথায়? এর মধ্যে আবার পরীক্ষার ফরম পূরনের জন্য দশ হাজার টাকার বেশি দিতে হবে। পরিবারের পক্ষে এত টাকা দেয়া সম্ভব নয়।’
এসব বিষয়ে কথা বলার জন্য কয়েকটি হলের তত্ত্বাবধায়কদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে, ‘বিষয়টি অধ্যক্ষসহ সংশ্লিষ্ট কমিটি দেখবে বলে’, কেউই মন্তব্য করতে রাজি হননি।
তবে কলেজের প্রশাসনিক কর্মকর্তারা বলছেন, শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে এখন ২০১৮ সালের জুলাই থেকে ২০১৯ সালের জুন মাস পর্যন্ত বেতন ও অন্যান্য ফি নেয়া হচ্ছে। এসব ফি করোনাভাইরাস মহামারি শুরুর অনেক আগের। তাই এসব ফি কমানোর কোনো সুযোগ নেই।
এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে ঢাকা কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ অধ্যাপক এ.টি.এম. মইনুল হোসেন বলেন, ‘এগুলো কমানোর কোন সুযোগ নেই। হল চার্জ ছাত্ররা না দিলে হল চলবে কিভাবে? হল তো নিজের আয়ে নিজে চলে। ২০১৯-২০ অর্থবছরের হল চার্জ তো আমরা এখন নিচ্ছি না। অনেকেই অনেক কথা বলবে। কিন্তু কলেজ তো পরিচালনা করতে হবে।’
করোনাকালে আর্থিকভাবে অসচ্ছল পরিবারের শিক্ষার্থীদের শিক্ষা চালিয়ে নেয়ার জন্য কলেজ থেকে কোনো ধরনের সহায়তা করা হয়নি। এরপরও মহামারি চলাকালেই শিক্ষার্থীদের দরিদ্র তহবিল ফি, চিকিৎসা ফি, ছাত্র সংসদ ফি, অভ্যন্তরীণ ও ইনকোর্স পরীক্ষাসহ বিভিন্ন ফি নেয়া হচ্ছে।
এসব বিষয়ে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, ‘কলেজের দরিদ্র তহবিলের সক্ষমতা খুবই সামান্য। এ কারণে সীমিত কিছু শিক্ষার্থী ছাড়া সবাইকে এই তহবিল থেকে সহায়তা দেয়া সম্ভব হয় না। করোনার সময় অনেকেই সহায়তার জন্য এসেছিল, আমরা তাদের নিজ নিজ বিভাগে আবেদন করতে বলেছিলাম। কারণ, বিভাগের শিক্ষকরা জানেন কার আর্থিক অবস্থা কেমন।’
সেশনজট নিরসনে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে ২৬ ডিসেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাণিজ্য অনুষদের ডিন ও প্রধান সমন্বয়কারীর সভাপতিত্বে এক বৈঠকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে পরীক্ষা নেয়ার সিন্ধান্ত হয়। ১৪ জানুয়ারি থেকে ২০১৭ সালের মাস্টার্স শেষ পর্বের অসমাপ্ত পরীক্ষা ও ২৫ জানুয়ারি থেকে ২০১৯ সালের অনার্স চতুর্থ বর্ষের পরীক্ষা গ্রহণ করা হবে। ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে শুরু হবে অনার্স তৃতীয় বর্ষের পরীক্ষা। নিয়ম অনুযায়ী পরীক্ষার আগে করতে হবে ফরম পূরন। এ সময় আবাসিক সুবিধা ভোগ করা প্রতি শিক্ষার্থীর দিতে হবে প্রায় দশ হাজার টাকা।