রাকিব শান্ত, ব্যুরো প্রধান, উত্তরবঙ্গঃ উত্তরা লের শস্যভান্ডার হিসেবে খ্যাত নওগাঁর আত্রাই উপজেলায় ইরি-বোরো আবাদে ব্যস্ত সময় পার করছেন চাষিরা। প্রচন্ড শীত আর ঘন কুয়াশা কাবু করতে পারেনি তাদের। তবে চারা রোপণ ব্যহত হচ্ছে খানিকটা। আবহাওয়া ভালো হওয়ার অপেক্ষা করছেন চাষিরা। এবছর ধানের দাম ভালো পাওয়ায় কৃষকদের মাঝে কিছুটা উচ্ছাস দেখা গেছে। এদিকে মাঘ মাসের শুরু থেকেই শীতের তীব্রতা বেড়ে গেছে। দিনভর প্রচন্ড শীত। ঘর থেকে বের হওয়া যায় না। ঘন কুয়াশা আর কনকনে শীত উপেক্ষা করে কৃষকরা ইরি-বোরো ধান চাষাবাদে ঝুঁকে পড়েছেন।
সরেজমিনে উপজেলার বিভিন্ন এলাকার মাঠ ঘুরে দেখা গেছে, কেউ কেউ তীব্র শীত উপেক্ষা করে বীজতলা থেকে চারা তুলে জমা করছে। আবার কেউ পাওয়ার টিলার দিয়ে হাল বয়ে জমি তৈরি করছে। আবার কোথাও কোথাও কৃষকরা তাদের তৈরিকৃত জমিতে ইরি-বোরো ধানের চারা রোপন করছে। কোথাও গভীর অথবা অগভীর নলকূপ দিয়ে পুরোদমে চলছে জমিতে সেঁচকাজ।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, ৮টি ইউনিয়নে চলতি বোরো মৌসুমে ১৮হাজার ৮শত ৮৫ হেক্টর জমিতে ইরি-বোরো চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। গত বছর ১৭ হাজার ৯শত ৫০ হেক্টর জমিতে ইরি-বোরো চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। এ বছর ধান রোপনের জন্য প্রায় ১১শত হেক্টর জমিতে বীজতলা প্রস্তুত করা হয়েছে। আগামী ১০-১৫ দিনের মধ্যে শতভাগ জমিতে বোরো ধানের রোপন কাজ সম্পন্ন হবে।
গত কয়েকদিন থেকে সূর্যের দেখা মিলছে না। ঘনকুয়াশার সঙ্গে হালকা বাতাসে শীতের তীব্রতা বেড়েছে। প্রচন্ড শীতে জবুথবু হয়ে পড়েছেন মানুষ ও গৃহপালিত পশু।
এ ব্যাপারে সাহাগোলা ইউনিয়নের মির্জাপুর গ্রামের কৃষক মো. বাবু বলেন, এ বছর আমি ৩বিঘা জমিতে বোরো আবাদ করার জন্য হালচাষ করে প্রস্তুত করেছি। এখন বীজতলা থেকে চারা উত্তোলন করে ৩-৪দিনের মধ্যে রোপনের চেষ্টা করবো। একই ইউনিয়নের উদনপৈ গ্রামের কৃষক মোজাফ্ফর হোসেন বলেন, আগাম ধান রোপন করলে ভালো ফলন পাওয়া যায়। ধানের রোগ বালাই কম থাকে। তাই আমি প্রতি বছর আগাম ইরি-বোরো ধানের চারা রোপন করে থাকি।
এ ব্যাপারে ভোঁ-পাড়া ইউনিয়নের ধান চাষী মো. নাজিম উদ্দিন বলেন, ভোঁ-পাড়া মাঠে আমার সাড়ে চার বিঘা জমিতে বোরো ধান রোপন আগামী সপ্তাহের মধ্যে শেষ হবে। ধীরো ধেির মাঠের পানি নেমে যাওয়ায় বোরো ধানের জমি প্রস্তুত হওয়ায় এখন এলাকায় কৃষি শ্রমিকের তেমন সংকট নেই।
এ বিষয়ে কালিকাপুর ইউনিয়নের রায়পুর গ্রামের কৃষক নজরুল ইসলাম, মিলন, বেলাল হোসেন বলেন, বন্যার পানি নেমে যাওয়ার সাথে সাথে আমরা বোরো ধানের বীজতলা রোপন করি। অন্যান্য এলাকার চাইতে আমাদের এলাকার বীজতলায় আগেই চারা বড় হয়ে যায়। ফলে সবার আগেই আমরা বোরো ধান রোপন করে থাকি। এতে ধানও আগে পাওয়া যায়।
এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ কে.এম কাউছার বলেন, উপজেলার ভোঁ-পাড়া, সাহাগোলা, কালিকাপুর ও আহসানগঞ্জ ইউনিয়নের বেশ কিছু এলাকায় বোরো ধান রোপন কাজ কিছুদিনের মধ্যে শেষ হবে। আবহাওয়া জনিত কারণে প্রতিবছর বীজতলা কম বেশী নষ্ট হলেও এ বছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় বীজতলায় তেমন কোনো ক্ষতি হয়নি। এ বছর বোরো ধানের চারার কোনো সংকট বা কাটতি হবে না বলে আমার বিশ্বাস।