রাজস্থান মূলত একটি শুষ্ক স্থান। সেখানে পানির খুবই অভাব। বিভিন্ন মানবসৃষ্ট হ্রদের উপরই ভরসা রাজস্থানবাসীর। যদিও এখন আধুনিক উপায় রয়েছে। তবে বাওলি থেকে পানি সংগ্রহ করে তেষ্টা মেটায় অনেকেই।
বেশ কয়েকটি স্টেপওয়াল বা বাওলি রয়েছে সেখানে। রাজস্থানের প্রথম দিকের রাজারা এসব বাওলি নির্মাণ করেছিলেন বলে জানা যায়। সেগুলোর মধ্যেই রয়েছে একটি স্টেপওয়াল, যেটি তৈরি করেছিল ভূতেরা।
বিষয়টি নিছক মজার ছলে নেওয়ার কারণ নেই। রাজস্থানের সবাই একে ‘ভূত কী বাওলি’ বলেই জানেন। রামসি গ্রামের যোধপুর থেকে ৯০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এ বাওলি।
স্থানীয়দের মতে, ঠাকুর জয় সিং নামে এক ব্যক্তি তার ঘোড়ায় চড়ে একদিন বিখ্যাত মেলা দেখার জন্য রামসি গ্রামের দিকে যাচ্ছিলেন। পথিমধ্যে তিনি ঘোড়ার তৃষ্ণা নিবারণের জন্য একটি হ্রদে থামেন।
যখনই ঠাকুর জয় সিং হ্রদের পানি স্পর্শ করলেন; তখনই তার সামনে একটি ভূত উপস্থিত হলো! ওই হৃদটি না-কি অভিশপ্ত ছিল, তাই ভূত ঠাকুর সিং ও তার ঘোড়ার পিপাসা মেটাতে নিজেই পানির জোগাড় করে।
এরপর ভূত জয় সিংয়ের একটি ইচ্ছার কথা জানতে চান, যা সে পূরণ করতে চায়। জয় সিং ভূতকে নিজের জন্য একটি সুন্দর প্রাসাদ ও নিজ শহর সুন্দর করে সাজানোর অনুরোধ জানান।
ভূত তার ইচ্ছার কথা মানতে রাজি হলে দুইটি শর্ত জুড়ে দেয়। প্রথমত, বাড়ির নির্মাণকাজ জয় সিংয়ের শ্রমিকরা শুরু করবে এবং তা ভূত দ্বারা ১০০ গুণ বাড়ানো হবে। দ্বিতীয়ত, জয় সিং ভূতের সঙ্গে হওয়া এ চুক্তি কাউকে জানাতে পারবেন না। তাহলে ভূত তার কাজ সমাপ্ত না করেই চলে যাবে- জয় সিং শর্ত দু’টি মেনে নেন।
পরের দিন, জয় সিং তার শ্রমিকদের বাওলির স্থানটিতে বাড়ি নির্মাণ কাজ শুরু করতে বলেছিলেন। তারা কিছু কাজ করার পর রাতে ঘুমিয়ে পড়ে। পরের দিন তারা অর্ধনির্মিত বাওলি দেখে অবাক হয়েছিল।
রাতারাতি এ বিস্ময়ের সাক্ষী হয়ে, জয় সিংয়ের স্ত্রী তাকে এ নির্মাণ রহস্যের বিষয়ে জানতে তাগাদা দেন। একসময় স্ত্রীর চাপে পড়ে জয় সিং ভূতের সঙ্গে হওয়া চুক্তির বিষয়ে জানিয়ে দেন।
স্থানীয়দের মতে, ৭ তলা প্রাসাদটি ২ তলা পর্যন্ত সম্পন্ন করার পরই ভূতেরা নির্মাণকাজ থামিয়ে দেয়। এমনকি বাওলি মাত্র ২০০ ফুট গভীর করে সবে ১৭৪ ধাপের কাজ শেষ হয়েছিল। সম্পূর্ণ কাজ শেষ হওয়ার আগেই প্রাসাদ ও বাওলি নির্মাণ কাজ সমাপ্ত হয়ে যায়।
তবুও এখনো পর্যন্ত অত্যাধুনিক নকশার এ বাওলি দেখে রীতিমতো চমকে যান স্থপতিরা। এতো নিঁখুত নকশা ও নির্মাণশৈলী সত্যিই অবিশ্বাস্য। প্রতিবছর হাজারো দর্শনার্থী বাওলি দেখতে ভিড় জমায় রাজস্থানে। কথিত রয়েছে, এ বাওলি না-কি সত্যিই এখন ভূতেদের আড্ডাখানায় পরিণত হয়েছে!