বিশেষ সংবাদদাতা:
পশ্চিমবাংলায় করোনা পরিস্থিতির মোকাবিলায় রাজ্য সরকার যে ভালো কাজ করছে এবং তা যে সারা দেশে দৃষ্টান্তস্বরূপ, সে কথা স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই বেশ কয়েকবার জানিয়েছেন। কিন্তু রাজ্যের পরিস্থিতি নিয়ে কেন্দ্র যে খুশি নয়, সে কথা তারা ফের জানিয়ে দিল বুধবার। এদিন বিকেলে রাজ্যের স্বরাষ্ট্রসচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায় বেশ গুছিয়েই সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, রাজ্যে করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে নয়। কারণ এই পরিস্থিতির মোকাবিলায় রাজ্য সরকার সমস্ত রকম ব্যবস্থাই নিয়েছে।
কিন্তু তার কিছুক্ষণের মধ্যে কেন্দ্রীয় সরকারের স্বরাষ্ট্রসচিব অজয় ভাল্লার একটি চিঠি এসে পৌঁছয় রাজ্যের মুখ্যসচিব রাজীব সিনহার কাছে। সেই চিঠির ভাষা ছিল যথেষ্ট কড়া। তাতে করোনা–মোকাবিলায় রাজ্যের ভূমিকা যে মোটেও সন্তোষজনক নয়, সে কথা স্বরাষ্ট্রসচিব পরিষ্কার জানিয়েছেন। তিনি লিখেছেন, রাজ্যের মোট জনসংখ্যার নিরিখে কোভিড–১৯ পরীক্ষা অনেক কম হচ্ছে। আর আক্রান্তদের মধ্যে যাঁরা মারা যাচ্ছেন, তার শতকরা হারও সারা দেশে সর্বাধিক। উল্লেখ্য, রাজ্যে কোভিড আক্রান্তদের মধ্যে মৃত্যু হার ১৩.২ শতাংশ। স্বরাষ্ট্রসচিব কড়া ভাষায় লিখেছেন, রাজ্যে করোনা পরীক্ষার সংখ্যা উল্লেখযোগ্য মাত্রায় বাড়াতে হবে। একই সঙ্গে তিনি এ কথাও জানিয়েছেন, রাজ্যের সাত জেলা ঘুরে যাওয়া কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দল যে রিপোর্ট জমা দিয়েছে, তাতেও বাংলার করোনা পরিস্থিতি নিয়ে আশঙ্কার যথেষ্ট কারণ রয়েছে।
শুধু সংক্রমণ বা মৃত্যুর হারের কথাই স্বরাষ্ট্রসচিব অজয় ভাল্লা চিঠিতে লেখেননি। রাজ্যের অনেক জায়গায় লকডাউন ঠিকমতো মানা হচ্ছে না বলেও তিনি জানিয়েছেন। তিনি আরও জানিয়েছেন, কিছু জায়গায় লকডাউন কার্যকর করার ক্ষেত্রে কড়া ভূমিকা নিতে পুলিশ বা প্রশাসনকেও সে ভাবে দেখা যাচ্ছে না। এক শ্রেণির মানুষ লকডাউন ভাঙছে। এমনকী, তারা পুলিশের ওপর আক্রমণও করছে। কড়া হাতে এমন পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে রাজ্য প্রশাসনের মধ্যে ইতস্তত ভাব দেখা যাচ্ছে। অনেক জায়গায় স্বাস্থ্যকর্মীরাও আক্রান্ত হচ্ছেন। কোয়ারেন্টাইনেরও পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেই বলে চিঠিতে অভিযোগ করা হয়েছে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের তরফে সচিবের এই চিঠি যে রাজ্যকে কড়া বার্তা দিল, সে ব্যাপারে ওয়াকিবহাল মহল এক প্রকার নিঃসংশয়। সেই চিঠির জবাব রাজ্যের মুখ্যসচিব কী ভাষায় দেন, কিংবা মুখ্যমন্ত্রীই বা কী প্রতিক্রিয়ায় দেন, আপাতত সে–দিকেই তাকিয়ে রয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। এদিন রাত পর্যন্ত স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের এই চিঠি সম্পর্কে রাজ্য সরকারের কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।