বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর এস কে সুর চৌধুরী এবং ঋণ জালিয়াতিতে প্রশান্ত কুমার হালদারের (পি কে হালদার) সহযোগী ও বিভিন্ন দেশে তার প্রমোদ ভ্রমণের সঙ্গী নাহিদা রুনাইকে কেন গ্রেফতার করা হয়নি বলে প্রশ্ন তুলেছেন আদালত। এ সময় হাইকোর্ট বলেন, দুদক তাদের গ্রেফতার না করে মেহমানদারি করতে পারে না।
পি কে হালদারের পালানোর বিষয়ে শুনানিতে সোমবার (১৫ মার্চ) হাইকোর্টের বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি মহি উদ্দীন শামিমের সমন্বয়ে গঠিত ভার্চুয়াল বেঞ্চ এ বিষয়ে প্রশ্ন তোলেন আদালত।
আদালতে এদিন দুদকের পক্ষে শুনানি করেন মো. খুরশিদ আলম খান। রাষ্ট্রপক্ষের শুনানিতে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন মানিক। তার সঙ্গে ছিলেন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল মাহজাবিন রাব্বানী দীপা ও আন্না খানম কলি। বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার খান মোহাম্মদ আজিজ।
পি কে হালদার পালানো ও তার দুর্নীতির বিভিন্ন বিষয়ে শুনানির সময় হাইকোর্ট বলেছেন, পিকে হালদার ইস্যুতে অনেককে গ্রেফতার করা হচ্ছে না। তারা ঘুরে বেড়াচ্ছে। ১৬৪ ধারায় যাদের নাম এসেছে- শাহ আলম, এস কে শুর, পিকের বান্ধবী নাহিদা রুনাইকে কেন গ্রেফতার করা হচ্ছে না? দুদক তাদের গ্রেফতার না করলে আদালত তাদের গ্রেফতারের আদেশ দেবে।
পি কে হালদার কাদের অবহেলায় পালালো সেটা আদালত বের করবে এবং কঠোর ব্যবস্থা নেবে বলে আদালতের পক্ষ থেকে জানানো হয়।
পিকে হালদার নিষেধাজ্ঞার পরও কিভাবে পালালো সেটা দুদককে লিখিত আকারে এবং যাদের নাম জবানবন্দিতে এসেছে তাদের বিরুদ্ধে কি ব্যবস্থা নিয়েছে সেটাও দুদককে জানাতে বলেছেন হাইকোর্ট। এপ্রিলেই প্রতিবেদন দাখিল করতে হবে বলে জানান আদালত।
বাংলাদেশ ব্যাংকের দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যক্তি যারা অর্থপাচারের সঙ্গে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও মন্তব্য করেন আদালত। এ বিষয়ে কোনো ছাড় নয় এবং গভর্নর তাদের তালিকা আদালতকে দিক বলে হাইকোর্ট ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংক ও রিলায়েন্স ফাইন্যান্স লিমিটেডের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) পি কে হালদারের বান্ধবী অবন্তিকা বড়ালকে ধানমন্ডি এলাকা থেকে গ্রেফতার করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গত ১৩ জানুয়ারি পি কের বান্ধবী অবন্তিকা বড়ালকে গ্রেফতারের বিষয়টি নিশ্চিত করেন দুদকের পরিচালক (জনসংযোগ) প্রণব কুমার ভট্টাচার্য।
ঋণ জালিয়াতির সহযোগীরা বিভিন্ন দেশে প্রমোদ ভ্রমণ করতেন। এর মধ্যে দু’জন বান্ধবীর প্রতি তার বিশেষ দুর্বলতা ছিল- অবন্তিকা ও নাহিদা রুনাই। এ দুই বান্ধবীকে নিয়ে পৃথকভাবে পি কে হালদার অন্তত ২৫ বার সিঙ্গাপুর ও থাইল্যান্ড ভ্রমণ করেন। অবন্তিকা আর রুনাই এতটাই ক্ষমতাধর হয়ে ওঠেন যে, একজন চালাতেন ইন্টারন্যাশনাল লিজিং, অন্যজন চালাতেন পিপলস লিজিং। এই দুজনের কথায় হতো লিজিং কোম্পানি দুটির ঋণ বিতরণ।
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) করা মামলায় পি কে হালদারের অন্যতম সহযোগী পিপলস লিজিংয়ের চেয়ারম্যান উজ্জ্বল কুমার নন্দীর ১৬৪ ধারায় দেয়া জবানবন্দিতে এসব তথ্য বেরিয়ে আসে। গত সোমবার ঢাকা মহানগর হাকিম আতিকুল ইসলাম তার জবানবন্দি রেকর্ড করেন।
এদিকে সাবেক ডেপুটি গভর্নর এসকে সুর চৌধুরী ও তার স্ত্রী এবং নির্বাহী পরিচালক মো. শাহ আলম ও তার দুই স্ত্রীর ব্যাংক অ্যাকাউন্টের তথ্য চেয়েছে খোদ বাংলাদেশ ব্যাংক। ঘুষ কেলেঙ্কারিতে আলোচিত সাবেক ও বর্তমান ঊর্ধ্বতন দুই কর্মকর্তার তথ্য চেয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) থেকে সব ব্যাংকে চিঠি দেয়া হয়েছে।
মঙ্গলবারের (১৬ মার্চ) মধ্যে তাদের অ্যাকাউন্টের লেনদেনসহ যাবতীয় তথ্য দেয়ার দিন রয়েছে। বিএফআইইউ থেকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কোনো কর্মকর্তার অ্যাকাউন্টের তথ্য চাওয়ার নজির নেই বলে জানা গেছে।
চিঠিতে সুর চৌধুরী ও তার স্ত্রী সুপর্ণা সুর চৌধুরী এবং শাহ আলম ও তার দুই স্ত্রী শাহীন আক্তার শেলী ও নাসরিন বেগমের নাম উল্লেখ রয়েছে। এদের সবার অ্যাকাউন্ট খোলার ফরম, লেনদেনসহ যাবতীয় তথ্য মঙ্গলবারের মধ্যে পাঠাতে বলা হয়েছে।
সম্প্রতি জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) গোয়েন্দা সেল থেকেও সুর চৌধুরী ও শাহ আলমের তথ্য চেয়ে ব্যাংকগুলোতে চিঠি দেয়া হয়।
মূলত পিকে হালদারের নিয়ন্ত্রণাধীন ইন্টারন্যাশনাল লিজিংয়ের সাবেক এমডি রাশিদুল ইসলামের আদালতে দেয়া জবানবন্দিতে এ দু’জনের ঘুষ নেয়ার বিষয়টি উঠে আসে।