মিয়ানমারের উত্তরাঞ্চলের শহর মান্দলে। এই শহরের চান মিয়ে থাজি এলাকায় বাবা-মা ও একমাত্র ভাইয়ের সঙ্গে বেড়ে উঠছিল খিন মিও চিট। বয়স তার সবেমাত্র ৭ বছর। মঙ্গলবার (২৩ মার্চ) বাড়িতেই বাবার কোলে বসে খেলছিল সে। হঠাৎ ছুটে আসা ঘাতক বুলেটের আঘাতে মুহূর্তেই লুটিয়ে পড়ে খিন মিও।
মিয়ানমার সেনাদের ছোঁড়া গুলি তার মাথায় আঘাত হানে। পরিবারের সদস্যদের চিৎকারে উদ্ধারকর্মীরা সেখানে গিয়ে খিন মিওকে রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায়। তবে তাকে বেশিক্ষণ বাঁচিয়ে রাখা সম্ভব হয়নি। খবর বিবিসির।
গত ১ ফেব্রুয়ারি দেশটিতে সামরিক জান্তা সরকারের ক্ষমতাগ্রহণের পর এর প্রতিবাদে বিক্ষোভে অংশ নিয়ে যারা নিহত হয়েছেন, তাদের মধ্যে খিন মিও চিট সবচেয়ে কমবয়সী।
দেশটির সংবাদমাধ্যম ‘মিয়ানমার নাও’ এর বরাতে বিবিসি জানিয়েছে, মিয়ানমার সেনারা তার বাবাকে গুলি করতে চেয়েছিল। তবে তা গিয়ে লাগে বাবার কোলে বসে থাকা খিন মিও চিটের মাথায়। ওই সময় তারা নিজেদের বাড়িতেই বসেছিল। তবে এ ব্যাপারে সেনাবাহিনীর কোনো বক্তব্য প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়নি।
নিহত খিন মিওয়ের পরিবার জানিয়েছে, কয়েকদিন আগে খিন মিও এর বড় ভাইকে গ্রেফতার করেছে সেনারা। তার বয়স ১৯। গ্রেফতারের পর তার কোনো হদিস মিলছে না। এর মধ্যেই মঙ্গলবার বাড়িতে বাবার কোলে বসে থাকা অবস্থায় ৭ বছরের শিশুকে হত্যা করল সেনারা।
শিশু খিন মিও চিট নিহতের পর এক বিবৃতিতে সেভ দ্য চিলড্রেন বলেছে, ৭ বছরের একজন মেয়ে শিশুকে এভাবে হত্যার ঘটনা ভয়াবহ। একদিন আগে মান্দলে শহরে ১৪ বছরের এক কিশোরকেও গুলি করে হত্যা করা হয়েছে।
বিবৃতিতে সেভ দ্য চিলড্রেন প্রশ্ন তুলেছে, বাড়িতে পরিবারের সঙ্গে বসেও যদি তাদের নির্মমভাবে মৃত্যুবরণ করতে হয়, তাহলে তারা নিরাপদ কোথায়? এভাবে শিশুদের হত্যার মধ্য দিয়ে প্রমাণিত হচ্ছে যে, দেশটির নিরাপত্তাবাহিনীর সদস্যরা মানুষের জীবনের মূল্য দিতে চরম অবজ্ঞা করছে।
এদিকে ওয়াচডগ গ্রুপ অ্যাসিস্টেন্স অ্যাসোসিয়েশন ফর পলিটিক্যাল প্রিজনারের (এএপিপি) বরাত দিয়ে বিবিসি এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, জান্তা সরকারবিরোধী বিক্ষোভে সেনাদের গুলিতে এখন পর্যন্ত দেশটিতে নিহত হয়েছেন ২৬১ জন। যার মধ্যে অন্তত ২০ জন শিশু বলে জানিয়েছে সেভ দ্য চিলড্রেন। যদিও জান্তা সরকার বলছে- নিহতের সংখ্যা ১৬৪।
মঙ্গলবার নির্মমভাবে শিশু খিন মিও হত্যার কিছুক্ষণ আগে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর তরফ থেকে দেশটিতে চলমান বিক্ষোভে হতাহতদের জন্য দুঃখ প্রকাশ করা হয়েছিল। তবে সেনাবাহিনীর একজন মুখপাত্র ওই বিবৃতিতে বলেছিলেন, দেশের নৈরাজ্য সৃষ্টির জন্য বিক্ষোভকারীরাই দায়ী। তারা সহিংসতা ও অগ্নিসংযোগ করে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করছে।