সৈয়দ আতিকুর রব,ওয়েব ডেস্ক রিপোর্টঃ
পেশা হিসেবে অ্যাকাউন্টিং অত্যন্ত প্রাচীন, যা যেকোনো অঙ্গন থেকে উঠে আসা লোকদের আকৃষ্ট করে। বিভিন্ন মাধ্যমের শিক্ষার্থী বা গ্র্যাজুয়েটরা এখানে এসে ক্যারিয়ার গড়তে পারেন। যেকোনো প্রতিষ্ঠানের সাফল্যের জন্য যে বিভাগগুলো সবচেয়ে গুরত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে, তার মধ্যে হিসাব একটি। আর এ বিভাগের সবচেয়ে বড় সুবিধা হচ্ছে এ–সক্রান্ত অর্জিত জ্ঞান দিয়ে অনেক সেক্টরে দায়িত্ব পালন করা যায়। আর্থিক সেবা প্রতিষ্ঠান, ব্যাংকিং, খুচরা বিক্রয়, সরকার, স্বাস্থ্যসেবা, তথ্যপ্রযুক্তি—এ রকম সব খাতেই অ্যাকাউন্ট্যান্ট প্রয়োজন।
আবার এ খাতের ব্যক্তির সুবিধা অনুযায়ী ফুলটাইম, পার্টটাইম, অনলাইন সার্ভিস, শিক্ষানবিশ হিসেবেও কাজ করা যায়। কাজেই আগামী দিনের সম্ভাব্য হিসাবরক্ষকেরা নিজেদের পছন্দমতো এ সেক্টরে কোর্স বা কাজের ক্ষেত্র খুঁজে নিতে পারেন। অ্যাকাউন্ট্যান্ট বা হিসাবরক্ষকদের প্রচুর চাহিদা রয়েছে বিশ্বব্যাপী। এ জন্য বেশ কিছু আন্তর্জাতিক মানের কোর্সও রয়েছে। এসব কোর্স সম্পন্ন করে হিসাব বিভাগে ক্যারিয়ার গড়ার দারুণ সুযোগ রয়েছে।
আয়ারল্যান্ডে অ্যাকাউন্ট্যান্ট পেশাটির তদারক করে আইরিশ অডিটিং অ্যান্ড অ্যাকাউন্টিং সুপারভাইজরি অথরিটি বা আইএএএসএ। এ সংস্থার তালিকাভুক্ত চারটি প্রধান হিসাবরক্ষণ সংস্থা রয়েছে দেশটিতে। সেগুলো হলো ইনস্টিটিউট অব চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টস ইন আয়ারল্যান্ড (আইসিএআই), চার্টার্ড ইনস্টিটিউট অব ম্যানেজমেন্ট অ্যাকাউন্ট্যান্টস (সিআইএমএ), অ্যাসোসিয়েশন অব চার্টার্ড সার্টিফায়েড অ্যাকাউন্ট্যান্টস (এসিসিএ) এবং চার্টার্ড ইনস্টিটিউট অব পাবলিক ফিন্যান্স অ্যান্ড অ্যাকাউন্ট্যান্সি (সিআইপিএফএ)।
আয়ারল্যান্ডে অ্যাকাউন্টিং বিষয়ে পড়াশোনার অনেক সুযোগ রয়েছে বিদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য। পেশাদার অ্যাকাউন্ট্যান্ট হওয়ার জন্য যেসব কোর্স আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত, তার সবই রয়েছে দেশটিতে। তবে শিক্ষার্থীরা তাঁদের পূর্ববর্তী ডিগ্রি অনুযায়ী এসব কোর্সে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পাবেন। এক বছর, দুই বছর ও চার বছর মেয়াদি এসব কোর্সে একাডেমিক শিক্ষার পাশাপাশি স্বীকৃত প্রতিষ্ঠানে বাস্তব অভিজ্ঞতা গ্রহণের সুযোগ রয়েছে। অর্থাৎ অ্যাকাউন্টিংকে পেশা হিসেবে নেওয়ার জন্য একজন শিক্ষার্থীকে পুরোপুরি যোগ্য করে তোলার ব্যবস্থা রয়েছে এসব কোর্সে। আবার হিসাবের কারিগরি দিকে দক্ষ জনবল, অর্থাৎ অ্যাকাউন্টিং টেকনিশিয়ান তৈরির জন্যও রয়েছে পৃথক কোর্স।
অ্যাকাউন্ট্যান্ট হতে হলে অ্যাকাউন্টিং বিষয়ে বিশেষায়িত কোর্সের আগে বেশির ভাগ শিক্ষার্থীই তৃতীয় স্তরের বিজনেস ডিগ্রি নিয়ে থাকেন। এসব ক্ষেত্রে অ্যাকাউন্ট্যান্ট হয়ে উঠতে চার বছর লাগে। তবে যাঁদের বিশ্ববিদ্যালয় ডিগ্রি রয়েছে, তাঁদের ক্ষেত্রে সময় কম লাগে। তবে কোথাও ভর্তি হওয়ার আগে বিভিন্ন ধরনের কোর্সের সম্পর্কে ভালোভাবে জেনে নিতে হবে। কোন কোর্সটি নিজের দক্ষতার সঙ্গে মানানসই হবে এবং পেশাগত ক্যারিয়ারে কী প্রভাব রাখবে, সে ব্যাপারে বিস্তারিত ধারণা নিয়ে কোর্স শুরু করা উচিত যেকোনো শিক্ষার্থীর।
চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট (এসিএ/এফসিএ)
যেকোনো বিভাগে স্নাতক ডিগ্রি নেওয়া শিক্ষার্থীরা এ কোর্সে ভর্তি হতে পারেন। চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট হওয়ার জন্য প্রধানত দুটি পথ রয়েছে। একটিতে যেকোনো স্বীকৃত প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে প্রশিক্ষণ চুক্তির আওতায় এটি করতে পারবে। অন্যটিকে বলা হয় ফ্লেক্সিবল রুট, যেখানে আগ্রহী ব্যক্তি তার বর্তমান চাকরি ঠিক রেখেই কোর্সটি করতে পারবেন। দুটি কোর্সের সিলেবাস একই, তবে পাঠদানপ্রক্রিয়া ভিন্ন।
সার্টিফায়েড অ্যাকাউন্ট্যান্ট (এসিসিএ, এফসিসিএ)
আন্ডারগ্র্যাজুয়েট ও গ্র্যাজুয়েট উভয় ধরনের শিক্ষার্থীদের জন্য এ কোর্স করার সুযোগ রয়েছে। এ কোর্স থেকে সনদ নেওয়া শিক্ষার্থীরা হিসাব বিভাগের যেকোনো শাখায় দক্ষতার সঙ্গে কাজ করতে পারেন। এসিসিএ অর্জনের জন্য শিক্ষার্থীদের নির্দিষ্ট পরীক্ষা ছাড়াও নেতৃত্ব, যোগাযোগ ও বাণিজ্যসচেতনতা–বিষয়ক জ্ঞান (এথিকস মডিউল) এবং সুর্দিষ্টি বিষয়ে নির্দিষ্ট মেয়াদের কাজের অভিজ্ঞতা প্রয়োজন হয়।
কস্ট অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট অ্যাকাউন্ট্যান্টস (সিআইএমএ/এফসিএমএ) কোম্পানির নীতি নির্ধারণের জন্য আর্থিক ও অনার্থিক তথ্যগুলো বিশ্লেষণই ম্যানেজমেন্ট অ্যাকাউন্ট্যান্টদের কাজ। কোর্সটি সবার জন্য উন্মুক্ত। এমনকি বাণিজ্য বিষয়ে আগের পড়াশোনা না থাকলেও এতে ভর্তি হওয়ার সুযোগ রয়েছে। আবার কর্মক্ষেত্রে অভিজ্ঞ ব্যক্তিরাও এতে ভর্তি হতে পারেন।
অ্যাকাউন্টিং টেকনিশিয়ান রুট (এটিআই)
আন্ডার গ্র্যাজুয়েটদের জন্য বিশেষ করে এ কোর্সে পূর্ণাঙ্গ অ্যাকাউন্ট্যান্ট হওয়ার আগে তাঁরা অ্যাকাউন্ট্যান্ট টেকনিশিয়ান হিসেবে নিজেদের গড়ে তুলতে পারেন। চার্টার্ড অ্যাকউন্ট্যান্টস আয়ারল্যান্ডেরই একটি সহযোগী প্রতিষ্ঠান হচ্ছে অ্যাকাউন্টিং টেকনিশিয়ানস আয়ারল্যান্ড। এ ছাড়া ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন অব অ্যাকাউন্ট্যান্টসের (আইএফএসি) সদস্য এ সংস্থা।
এ কোর্সের শিক্ষার্থীরা সপ্তাহে চার দিন কোনো প্রতিষ্ঠানে হাতে-কলমে কাজ করেন। আর তাঁদের ডাবলিন, কর্ক, লিমেরিক, মোনাঘান, গ্যালওয়ে, উইকলো অথবা ওয়াটারফোর্ডের স্থানীয় কলেজগুলোতে সপ্তাহে এক দিন ক্লাস করতে হয় দুই বছর ধরে। এই কর্মভিত্তিক শিক্ষা কোর্সের শিক্ষানবিশ ফি দেওয়া হয় বছরে ১৯ হাজার ৭০০ ইউরো। স্কুল পর্যায়ের বা আন্ডারগ্র্যাজুয়েট যেকোনো শিক্ষার্থী এই কোর্স করার পর সিএসহ অ্যাকাউন্টিং বিষয়ে যেকোনো উচ্চতর ডিগ্রি নিতে পারেন।
অ্যাকাউন্টিং টেকনিশিয়ানস আয়ারল্যান্ডের চিফ অপারেশন অফিসার গিলিয়ান ডোহার্তি বলেন, ‘আমাদের শিক্ষার্থীরা শিক্ষানবিশ সময়কাল, একাডেমিক শিক্ষা ও দুই বছরের কর্ম–অভিজ্ঞতা অর্জনের ফলে ভবিষ্যতে ব্যবসাবিষয়ক যেকোনো উচ্চশিক্ষায় ভালো অবস্থান লাভ করেন।’
বেতন কেমন
ie.indeed.com-এর তথ্য অনুযায়ী একজন Accountant অ্যাভারেজ ৪৫ হাজার, Financial accountant ৫৭ হাজার, accounting manager ৬২ হাজার, auditor ৫৫ হাজার, controller ৩৯ হাজার, bookkeeper ২২ হাজার এবং একজন financial analyst ৪৫ হাজার ইউরো বছরে বেতন পান।
বিস্তারিত তথ্যের জন্য
accountingtechniciansireland.ie/ভিজিট করুন। এ ছাড়া আয়ারল্যান্ডে অ্যাকাউন্টিং বিষয়ে উচ্চশিক্ষাবিষয়ক যেকোনো তথ্যের জন্য ভিজিট করুন :
*আইরিশ অডিটিং অ্যান্ড অ্যাকাউন্টিং সুপারভাইজরি অথরিটি (iaasa.ie)
*অ্যাসোসিয়েশন অব চার্টার্ড সার্টিফায়েড অ্যাকউন্ট্যান্টস (ireland.accaglobal.com)
*ইনস্টিটিউট অব চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টস ইন আয়ারল্যান্ড (charteredaccountants.ie)
*ইনস্টিটিউট অব সার্টিফায়েড পাবলিক অ্যাকাউন্ট্যান্টস ইন আয়ারল্যান্ড (cpaireland.ie)
সূত্র :ডাবলিন বাংলা বার্তা।