বিশেষ প্রতিবেদন: দেব সিনেমার নায়ক। তার ওপর সাংসদ। সুতরাং তাঁকে নিয়ে মানুষের আগ্রহ থাকবেই। তাই নিজের সংসদীয় এলাকাতেই যেতে পারছিলেন না। যাওয়ার কথা বললেই জেলাশাসকরা বারণ করতেন। দেবের আসার কথা শুনে অনেক দূর থেকেও ছুটে আসতে পারেন বহু মানুষ। সামাজিক দূরত্ব অনেকেই হয়তো মানতে পারবেন না তখন। ফলে হিতে বিপরীত হতে পারে। তবু ঘরে বন্দি থাকতে পারেননি রুপোলি পর্দার এই নায়ক। প্রশাসনিক বৈঠকে যোগ দিতে পশ্চিম মেদিনীপুরে ছুটে যান শনিবার। রবিবারও সারা দিন ছিলেন নিজের জেলায়।
এদিন ঘাটালে তিনি জানালেন ভিনরাজ্য থেকে ফিরে আসা শ্রমিকদের নিয়ে নিজের দুশ্চিন্তার কথা। বললেন, ‘এখানে পর্যাপ্ত কোয়ারেন্টাইন সেন্টার নেই। তা ছাড়া গোটা রাজ্যেই বাইরে থেকে আসা শ্রমিকরা এমন সেন্টারে থাকতে চাইছেন না। কিন্তু বাইরে থেকে আসার পর তাঁদের বাড়ি যেতে দেওয়া উচিত নয়। এই শ্রমিকরা এক–একটা ঘরেই ৫–৬ জন মিলে থাকেন। তাঁরা যদি বাইরে থেকে করোনা সংক্রমিত হয়ে এসে থাকেন, তা হলে পরিবারের সকলেই সংক্রমিত হয়ে পড়বেন। তাই তাঁদের কোয়ারেন্টাইন সেন্টারে থাকা উচিত।’ তিনি জানালেন ঘাটালে বড় কোয়ারেন্টাইন সেন্টার খোলার চেষ্টা করছেন।
যদিও ঘাটালে এখনও এই সংক্রমণ তেমন ছড়িয়ে পড়েনি। তবে বাইরে থেকে বহু পরিযায়ী শ্রমিক ফিরে এসেছেন। এখনও আসছেন। তাঁদের নিয়েই উদ্বেগ বাড়ছে দেবের। দেশের বিভিন্ন রাজ্যে তাঁর এলাকার যে শ্রমিকরা কাজ করেন, তাঁদের একটি তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। তাঁদের কোয়ারেন্টাইন সেন্টারে রাখার ব্যবস্থা করাই এখন তাঁর লক্ষ্য। কিন্তু তিনি তো শুধু সাংসদ নন, অভিনেতাও। তাঁর অভিনীত বেশ কয়েকটি ছবি লকডাউনের জন্য এখনও মুক্তি পায়নি। কবে লকডাউন উঠবে, পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে এবং সিনেমা হলগুলি খুলবে, তার পর সিনেমাগুলি মুক্তি পাবে! কিন্তু এখন তিনি সিনেমা নিয়ে ভাবছেন না। বলেই দিলেন, ‘আগে তো বাঁচি। বেঁচে থাকলে অভিনয় করার সুযোগ আসবে। হিরোও হওয়া যাবে। কিন্তু তার আগে আমাদের বেঁচে থাকতে হবে।’
সেই সঙ্গে জানিয়ে দিলেন, নিজের সাংসদ তহবিল থেকে পুরো টাকাটাই এবার তিনি এই অঞ্চলের স্বাস্থ্য খাতে ব্যয় করবেন। কিন্তু তাঁর এই কথায় বিরোধীরা কটাক্ষ করতেও ছাড়েননি। অনেকেই বলেছেন, কোনও সাংসদই এবার সাংসদ তহবিলের টাকা পাবেন না। সেই টাকা করোনা মোকাবিলায় প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে প্রতিটি সাংসদকেই দিয়ে দিতে হবে। এই নিয়ম হওয়ার সময় তৃণমূলও প্রতিবাদ করেছিল। তবে সেই প্রতিবাদ গ্রাহ্য হয়নি। তা হলে দেব কী করে সাংসদ তহবিলের টাকা এখানকার স্বাস্থ্যখাতে ব্যয় করবেন?
যদিও দেব বিরোধীদের কোনও সমালোচনাকেই পাত্তা দেননি। বরং বিষয়টি নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারেরই তীব্র সমালোচনা করেছেন তিনি। বলেছেন, ‘বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ২০ লক্ষ কোটি টাকার আর্থিক প্যাকেজ ঘোষণা করেছেন। এই টাকার মধ্যে যদি এক লক্ষ কোটি টাকাও যদি পরিযায়ী শ্রমিকদের জন্য খরচ করা হত, তা হলে কোনও সমস্যাই থাকত না।’ শুধু তাই নয়, কেন্দ্রীয় সরকারকে কটাক্ষ করে তিনি বলেছেন, ‘যাঁরা বিদেশে রয়েছেন, তাঁদের ফিরিয়ে আনার জন্য কেন্দ্র বিমান পাঠাচ্ছে, আর পরিযায়ী শ্রমিকদের নিয়ে তাদের ভাবার সময় নেই। এই শ্রমিকরা বাড়ি ফিরতে গিয়ে দুর্ঘটনায় মারা যাচ্ছেন, অথবা অনাহারে থাকছেন। অথচ এই শ্রমিকদের ছাড়া আমাদের চলবে না।’