কৃষ্ণাঙ্গ – শ্বেতাঙ্গের মতো বন্ধ হোক বিষয় নেপোটিজম
-মেয়ে ইতিহাস নিয়ে পড়াশোনা করছে? ছিঃ ছিঃ! একদম মাথা নেই তাহলে।
-শুনলাম আপনার বড় ছেলে নাকি একাউন্টিংয়ের উপর অনার্স করছে। ভালো। তবে আজকালকার যুগে এসবের কি আর কদর আছে বলুন?
– মাধ্যমিকের পরে দেশসেরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সবচাইতে মেধাবী ছাত্রটি যখন বিজ্ঞান বিভাগ অগ্রাহ্য করে মানবিক বিভাগ বেছে নিলো; যে মানুষগুলো বড় মুখ করে বলতো ওর ভবিষ্যৎ তো সোনায় সোহাগা, ঠিক যেনো নক্ষত্রের মতোই জ্বলজ্বল করছে!আজকাল সেসব মানুষের সাথে দেখা হলেও মুখখানা যেনো হঠাৎ-ই ফেকাশে বর্ণ ধারণ করে বসে।
– “কমার্স নেয়ার কি দরকার ছিলো? কমার্স তো ছেলেদের বেশি মানায়। তুমি বরং আর্টস নিয়েই পড়তে পারতে?” এলাকার সেই চুপচাপ স্বভাবের মেয়েটিকে কেন্দ্র করে চায়ের দোকানে বসে থাকা এলাকার মুরুব্বির প্রশ্ন!এরপর থেকে মেয়েটির মাঝে অজান্তেই অপরাধবোধ কাজ করতে থাকে।
গল্প নয় সত্যি বলছি। সত্য সবসময়ের মতোই তিক্ত হবে আর এই তিক্ত আর নোংরা মনমানসিকতার মানুষজনদের সাথে প্রতিনিয়ত এক প্রকার অদৃশ্য কিংবা দৃশ্যমান যুদ্ধ করছে আমাদের দেশের এক বিশাল জনগোষ্ঠীর শিক্ষার্থী। দোষ তাদের একটাই। মস্ত বড় মাপের দোষ তা হলো বিজ্ঞান বিভাগে না পড়া। আরেহ আমাদের সমাজের মাপকাঠিতে একমাত্র বিজ্ঞানই হচ্ছে অভিজাত সাবজেক্ট। বিজ্ঞান বিষয়কে শ্রদ্ধা করি। কারণ বিষয় তোমার আমার হয় না। রোজ সব বিষয় নিয়েই আমাদের চলতে হয় অজান্তে। তাহলে এত অবহেলা কেনো আর্টস, কমার্স নিয়ে? বলছি ব্যাংক, বীমা, ডেবিট -ক্রেডিট নিয়ে সম্পূর্ণ ধারণা আছে? চন্ডীমঙ্গল, মনসামঙ্গল? পাশ্চাত্য ইতিহাস নিয়ে কোনো ধারণা আছে? মানতে শিখুন নেই। আপনি অকৃতকার্য মাথা নিচু করে মানতে শিখুন। কেউ পিথাগোরাসের সূত্র পারে না আর আপনিও ইতিহাস, ভূগোল নিয়ে পনেরো পাতা রাঙিয়ে লিখে আসতে পারবেন না। আমারও চাকরির জন্য অঙ্ক করতে হয় আর আপনাকেও কারেন্ট আফেয়ার্স পড়তে হয়। কোনো তফাৎ নেই।আচ্ছা বিষয়টা জটিল করার কি খুব দরকার? আপনার যেমন তিলের নাড়ু পছন্দ অপরদিকে আমার নারকেলের সন্দেশ এভাবে একটু ভেবে দেখুন না। পছন্দ আলাদা হোক সম্মানটা সবাই পাক।পৃথিবীর সব কার্যকলাপগুলো ঠিক কিভাবে সম্পাদন হচ্ছে ধারণা রাখেন? কোন সেক্টরে কোন বিষয়ের অভিজ্ঞ লোক দিনরাত খেঁটে যাচ্ছেন তা না জেনেই কেনো একজন অপার সম্ভাবনাময় শিক্ষার্থীকে কথা শোনাচ্ছেন?আপনার মন্তব্যে হয়ত তেমন কিছুই হবে না। কিন্তু সবাই আপনার নেতিবাচক কথাগুলো স্বাভাবিকভাবে গ্রহণ করার ক্ষমতা রাখে না। আর তাই আপনার চিন্তা -চেতনার পরিবর্তন খুব দরকার।আর কথাগুলোর সাথে যদি আপনি একমত না হতে পারেন তাহলে বুঝবেন আপনার কাছে হয়ত সার্টিফিকেট আছে কিন্তু প্রকৃত শিক্ষা টা এখনো বাকি।
লেখক:ফারজানা ফেরদৌস শৈলী
শিক্ষার্থী ও লেখিকা