ইমরান ইমন: ২০২০ কে ধরা হয়েছিল একটা সৌভাগ্যবান বছর হিসেবে।২০১০ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত একটা দুর্যোগময় দশক পেরিয়ে মানুষ যখন নতুন দশক উদযাপনে ব্যস্ত, তখনই পৃথিবীর বুকে এল বিশাল এক ধাক্কা!নতুন দশকের পরিবর্তিত রূপের ক্ষেত্রে ব্রেক্সিট, সিরিয়ার যুদ্ধ, শরণার্থী, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের দ্রুত বিস্তার ও জাতীয়তাবাদের মতো বিষয়গুলো গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে বলে ধরা হচ্ছিল। কিন্তু সব ওলটপালট করে দিয়ে সামনে এসে গেল নতুন এক মহামারি।নাম তার দেওয়া হয়েছে করোনা ভাইরাস।
গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর বেলা ১টা ৩৮মিনিটে চীন সরকারের ওয়েবসাইটে উহানে অজ্ঞাত নিউমোনিয়ার কারণে মানুষের সংক্রমিত হওয়ার ঘোষণা দেওয়া হলো।
এর পরপরই বদলে যেতে লাগল পুরো বিশ্ব। গত ১০০ দিনে যা ঘটে গেল তার কথা কেউ কি ভাবতে পেরেছিল? পৃথিবীটা হঠাৎ স্তব্ধ হয়ে যাবে, মানুষ লক ডাউনের মধ্যে থাকবে এমন পরিস্থিতির কথা কিন্তু কেউই ভাবেনি।
গত ১০০ দিনের মধ্যেই বিশ্বজুড়ে ১০ লাখের বেশি সংক্রমণ, যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রীর আইসিইউতে জীবনের সাথে লড়াই করার মতো মতো ঘটনা দেখেছে বিশ্ববাসী। গত ডিসেম্বরে নতুন বছর উদযাপনে আলোর রোশনাই, আতশবাজির অনুষ্ঠান আর মানুষে ঠাসা রাস্তাগুলো ১০০ দিনে এখন হাহাকার করছে।
গবেষণা করে ১ম দিন ও ১০০তম দিনের সারমর্ম গুলো তুলে আনার চেষ্টা করেছি।
১ম দিন
বুধবার, ১ জানুয়ারি।
উহানের সামুদ্রিক খাবারের একটি বাজার থেকে একটি সন্দেহজনক ভাইরাসের নমুনা সংগ্রহ করা হয়। ওই দিনই চীনা সামাজিক মাধ্যমগুলোতে উহানের হাসপাতালে অশুভ লক্ষণ নিয়ে রোগী ভর্তির তথ্য ছড়িয়ে পড়ে। এ নিয়ে সতর্ক থাকার আহ্বান জানানো হয়। তাইওয়ানের কর্তৃপক্ষ বিষয়টি সতর্কতার সঙ্গে গ্রহণ করে। তারা উহান থেকে আসা ফ্লাইটগুলোতে ফ্লুর উপসর্গ থাকা রোগীদের শনাক্ত করে। এর দুদিনের মধ্যে সিঙ্গাপুর ও হংকং তাদের সীমান্ত/বিমানবন্দরে নজরদারি শুরু করে। গুজব ছড়ানোর দায়ে ৮ জনকে অভিযুক্ত করে চীনের জননিরাপত্তা ব্যুরো।
ডিসেম্বরে করোনাভাইরাস সম্পর্কে প্রথম সতর্কবার্তা দেওয়া চীনা চিকিৎসক লি ওয়েনলিয়াং তাঁর সহকর্মীদের একটি সতর্কবার্তা পাঠান, যেখানে তিনি সার্সের (প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের একটি প্রজাতি) মতো একটি ভাইরাসের কথা জানান। কিন্তু এ জন্য উল্টো তাঁকে হেনস্তার শিকার হতে হয়।
চীনের জননিরাপত্তা ব্যুরো তাঁকে ডেকে ‘গুজব না ছড়ানোর’ জন্য সতর্ক করে এবং একটি চিঠিতে সই করতে বাধ্য করে, যেখানে তিনি মিথ্যা তথ্য ছড়াচ্ছেন বলে অভিযোগ করা হয়।
৯৯তম দিন
বুধবার, ৮ এপ্রিল।
আজ যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন দ্বিতীয় দিনের মতো নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়ছেন। জাতীয় জরুরি অবস্থার মধ্যে একজন প্রধানমন্ত্রীর এভাবে আইসিইউতে স্থানান্তর হওয়ার ঘটনা নজিরবিহীন। যুক্তরাজ্যজুড়ে ৫৫ হাজারের বেশি মানুষ এখন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত। মারা গেছে ৬ হাজার ২০০ মানুষ। ইউরোপে সবচেয়ে আক্রান্ত কয়েকটি দেশে নতুন সংক্রমণ ও মৃত্যুর সংখ্যা কমেছে।
চীন করোনাভাইরাসে প্রথম মৃত্যুহীন একটি দিন পার করেছে। দুই মাসের বেশি সময় ধরে ঘরে বন্দিদশায় ছিল চীনের উহানের মানুষ। আজ বুধবার তাদের বন্দী অবস্থার অবসান হলো। মুক্ত জীবনের স্বাদ পেল তারা। কর্তৃপক্ষ আজ আনুষ্ঠানিকভাবে লকডাউন তুলে নিয়েছে। উহানের জনসংখ্যা প্রায় ১ কোটি ১০ লাখ। গত ২৩ জানুয়ারি এ শহর লকডাউন করা হয়। চীনের সরকারি সূত্রের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, এ শহরের ৫০ হাজারের বেশি মানুষ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়। এখানে মারা যায় আড়াই হাজারের বেশি মানুষ। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে চীনে মরে যাওয়া মানুষের ৮০ শতাংশই এ শহরের। গত শনিবার ছিল এখন পর্যন্ত সবচেয়ে প্রাণঘাতী দিন। বিশ্বজুড়ে ওই দিন ৬ হাজার ৫০০ মানুষ মারা যায়।
আক্রমণের দ্বিতীয় ধাক্কা সামলানোর জন্য সিঙ্গাপুর আরো কঠোর কোয়ারেন্টিন ব্যবস্থা নিয়েছে। করোনাভাইরাস প্রতিরোধে দ্রুত ভ্যাকসিন নিয়ে কাজ করা হলেও তা ১৮ মাসের আগে বাজারে আসবে না। পাকিস্তান তাদের নির্মাণখাত আবার খুলে দিচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্রের জনস হপকিনস ইউনিভার্সিটির তথ্য অনুযায়ী, আজ বুধবার দুপুর পর্যন্ত করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ১৪ লাখ ৩৪ হাজার ৪২৬ ছাড়িয়েছে। বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে ৮২ হাজার ২২০ জন। এর মধ্য ইতালিতে ১৭ হাজার ১২৭ জন মারা গেছেন, যা এখন পর্যন্ত কোনো দেশের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ। এখন পর্যন্ত করোনা আক্রান্ত হওয়ার পর সুস্থ হয়েছে ৩ লাখ ১ হাজার ৭৬৮ জন। স্বাভাবিক জীবনে ফেরার জন্য এখন পর্যন্ত ঐকমত্যের ভিত্তিতে কোনো কৌশল নেওয়া হয়নি।
গবেষণায়: ইমরান ইমন
শিক্ষার্থী: ইংরেজি বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।