1. abrajib1980@gmail.com : মো: আবুল বাশার রাজীব : মো: আবুল বাশার রাজীব
  2. abrajib1980@yahoo.com : মো: আবুল বাশার : মো: আবুল বাশার
  3. farhana.boby87@icloud.com : Farhana Boby : Farhana Boby
  4. mdforhad121212@yahoo.com : মোহাম্মদ ফরহাদ : মোহাম্মদ ফরহাদ
  5. shanto.hasan000@gmail.com : Rakibul Hasan Shanto : Rakibul Hasan Shanto
  6. masum.shikder@icloud.com : Masum Shikder : Masum Shikder
  7. shikder81@gmail.com : Masum shikder : Masum Shikder
  8. riyadabc@gmail.com : Muhibul Haque :

আওয়ামীলীগের অগ্রগতিতে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী—নাইম ইসলাম নিবির

  • Update Time : শুক্রবার, ১৭ ডিসেম্বর, ২০২১
  • ৩৬৯ Time View

আওয়ামীলীগের অগ্রগতিতে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী।

— নাইম ইসলাম নিবির। 

 

২০২১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্ণ হলো। বর্তমান সরকার ২০২১ সালকে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী হিসেবে চিহ্নিত করেছে। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী কথাটি অত্যন্ত আবেগময় অত্যন্ত স্মৃতিময় সংগ্রাম আর ত্যাগের। স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশের অভ্যুদয়ে রয়েছে অগণিত মানুষের আত্মদানের ইতিহাস যা বিশ্বে একটি বিরল ঘটনা। দীর্ঘ সংগ্রাম-লড়াইয়ের ফলেই অর্জিত হয়েছে আজকের বাংলাদেশ। বহু মানুষের অবদানে, বহু মানুষের ত্যাগ-তিতিক্ষায়, বহু মানুষের সাধনায় আমাদের স্বাধীনতা অর্জিত হয়েছে। বাঙালি জাতির স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র নির্মাণের পেছনে রয়েছে এক মহান নেতার সংগ্রাম-লড়াইয়ের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস। ৫৬,০০০ বর্গমাইল আয়তনবিশিষ্ট দক্ষিণ এশিয়ার বাংলাদেশ নামক ভূখণ্ডের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের জন্য আজীবন সংগ্রাম করে যাওয়া মানুষটির নাম শেখ মুজিবুর রহমান। পারিবারিকভাবে আদর করে ডাকা হতো খোকা, আপামর জনতার দেয়া নাম ‘বঙ্গবন্ধু’, কেউ বলে স্বাধীনতার মহানায়ক, কেউ বলে রাজনীতির কবি, বাংলাদেশের সংবিধান দিয়েছে জাতির পিতার স্বীকৃতি।

১৯২০ সালের ১৭ মার্চ গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় জন্ম নেয়া জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তার আয়ুষ্কালের ৫৫ বছরের প্রতিটি মুহূর্তে ব্যয় করেছেন বাঙ্গালি জাতির মুক্তি সংগ্রামে। বঙ্গবন্ধু, মুক্তিযুদ্ধ, বাঙালি জাতিসত্তা, স্বাধীনতা এবং বাংলাদেশ এক ও অভিন্ন। বঙ্গবন্ধু বাঙালি জাতির মুক্তির জন্য আজীবন লড়াই করেছেন। এ দেশের মানুষ যাতে আত্মমর্যাদা নিয়ে বিশ্বের দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারে এজন্য তিনি তার জীবন উৎসর্গ করেছেন।

তার রাজনীতির মূলমন্ত্রই ছিল আদর্শের জন্য সংগ্রাম, আদর্শের জন্য আত্নত্যাগ। যে আদর্শ, বিশ্বাস ও স্বপ্ন নিয়ে তিনি রাজনীতি করতেন, শত কষ্ট ও প্রচণ্ড চাপেও তিনি তাতে অটল ছিলেন—এটা আমরা দেখতে পাই তার ছাত্রজীবন থেকেই। ১৯৩৯ সালে স্কুল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে তার কারাবরণ শুরু। বস্তুত জেল-জুলুম ও নিপীড়ন বঙ্গবন্ধুর জীবনে এক নিয়মিত অধ্যায়ে পরিণত হয়েছিল। জনগণের জন্য, দেশের জন্য তিনি তার ৫৫ বছরের জীবনে ৪ হাজার ৬৮২ দিন কারাগারে ছিলেন, যা তার মোট জীবনকালের প্রায় এক-চতুর্থাংশ।

১৯৪৭ সালে দেশভাগের পর থেকে বাংলাদেশে ঐতিহাসিক যতগুলো গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা রয়েছে, প্রতিটি ঘটনার মূখ্য চরিত্র বঙ্গবন্ধু। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন; ১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্টের সাধারণ নির্বাচন; ১৯৬২ সালে শিক্ষা সংকোচন নীতির বিরুদ্ধে আন্দোলন; ১৯৬৬ সালের ৬ দফা আন্দোলন; ১৯৬৮ সালের আগরতলা মামলা; ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুথান; ১৯৭০ সালের নির্বাচন; ১৯৭১ সালের ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ; ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা; ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বিশ্বের মানচিত্রে নতুন রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের আত্মপ্রকাশ—পুরোটাই বঙ্গবন্ধুময়।

জাতির পিতার অন্যতম স্বপ্ন ছিল সোনার বাংলা বিনির্মাণ। কিন্তু স্বপ্নের সোনার বাংলা নির্মাণযাত্রা ছিল নানাভাবে কণ্টকাকীর্ণ ও বিপৎসংকুল। একদিকে যুদ্ধবিধ্বস্ত একটি দেশ, ভৌত-অবকাঠামো, রাস্তাঘাট-ব্রিজ-যানবাহন, বিদ্যুৎ, টেলিফোন, প্রায় সবকিছুই বিনষ্ট—বিধ্বস্ত। প্রশাসন ছিল অসংগঠিত। বৈদেশিক মুদ্রার শূন্য ভাণ্ডার ও ভারসাম্যহীন আন্তর্জাতিক বাণিজ্য, নিঃস্ব ও সহায়-সম্বলহীন কোটি শরণার্থীর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন ও পুনর্বাসন চ্যালেঞ্জ, বন্যা, খাদ্যাভাব। অন্যদিকে বিশ্বমন্দা ও নানা আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রে সামাজিক অস্থিরতা বিরাজ করছিল।

এমন প্রতিকূল পরিস্থিতিতে দেশের দায়িত্বভার গ্রহণ করে বঙ্গবন্ধু যখন  খাদ্যাভাব দূরীকরণ, সামাজিক অস্থিরতা নিরসন, আইন-শৃংখলার উন্নতিতে নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণ এবং যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশকে পুনর্গঠন করার জন্য বিভিন্ন উন্নয়নমুখী নীতি ও আইন প্রণয়ন করে দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন ঠিক তখনই ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যা করে তার সেই স্বপ্ন বাস্তবায়ন হতে দেয়নি  ঘাতকেরা। ওরা ভেবেছিল মুজিবকে হত্যা করলেই হয়ে যাবে সব শেষ কিন্তু ওরা বুঝতে পারেনি মুজিব মানেই বাংলাদেশ। একজন ব্যক্তি মুজিবকে হত্যা করা যায়, কিন্তু তার আদর্শ এবং স্বপ্নকে হত্যা করা যায় না।

জাতির পিতার অসমাপ্ত স্বপ্নগুলো বাস্তবায়ন করে চলেছেন তারই সুযোগ্য কন্যা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা। স্বাধীনতার পরাজিত শক্তিরা বলেছিল—আগামী ১০০ বছরের মধ্যেও বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় ১ হাজার ডলার ছাড়াবে না।

কিন্তু বিস্ময়ের বিষয় এই যে, মাত্র ৫০ বছরের মধ্যেই বাংলাদেশের মানুষের মাথাপিছু আয় ২০৬৪ ডলার ছাড়িয়ে গেছে। অথচ ১৯৭০-এ মাথাপিছু গড় আয় ছিল ১৪০ ডলার। হেনরি কিসিঞ্জার বাংলাদেশকে ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’ আখ্যায়িত করেছিলেন। কিন্তু অতি আশ্চর্যের বিষয় এই যে, ৫০ বছরে বাংলাদেশ নামক ঝুড়িটি আর তলাবিহীন নয়; ঝুড়ি এখন সাফল্যে পরিপূর্ণ । বর্তমানে বাংলাদেশের রিজার্ভ ৪৪ বিলিয়ন ডলার।

মহামারি করোনাকালীন সময়ে  বিশ্বের সব দেশে যখন প্রবৃদ্ধির হার কমে যাচ্ছে, তখন বাংলাদেশে ২০২০-২০২১ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধির হার ছিলো ৮.২ শতাংশ এবং এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক বলছে, বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি ৭ শতাংশ অর্জিত হতে পারে। করোনাকালীন কঠিন সময়েও বাংলাদেশে গত ফেব্রুয়ারি, ২০২১ -এ ১৭৮ কোটি ডলার রেমিটেন্স এসেছে; যা অত্যন্ত আশাব্যঞ্জক ঘটনা।  ১৯৭২-১৯৭৩ সালে বাংলাদেশের জাতীয় বাজেটের আকার ছিল ৭৮৬ কোটি টাকা অথচ জাতীয় সংসদে ২০২০-২১ অর্থবছরের জন্য ৫ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকার বাজেট সর্বসম্মতিক্রমে পাস হয়েছে। বর্তমানে বাংলাদেশের রপ্তানি ৮১ গুণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩১.২ বিলিয়ন ডলার। একই সঙ্গে বেড়েছে রপ্তানি পণ্যের সংখ্যাও। স্বাধীনতার পর রপ্তানি আয়ের সত্তর ভাগ ছিল পাটের দখলে। বর্তমানে মোট রপ্তানির ৮২ শতাংশই তৈরি পোশাক খাতের দখলে।

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা ভিশন ২০২১ দিয়েছেন এবং বাস্তবায়ন করেছেন যার মধ্য দিয়ে আমরা উন্নয়নশীল দেশ উন্নীত হয়েছে এবং ভিশন ২০৪১ এর মাধ্যমে আমরা আধুনিক এবং উন্নত দেশে পরিণত হব।  বাংলাদেশ অনেক উন্নয়ন প্রকল্প চলমান রয়েছে, বড় বড় ফ্লাইওভার করা হয়েছে, মেট্রোরেল মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে,  রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে,  মহাকাশে বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করা হয়েছে, সারা দেশজুড়ে রাস্তাঘাট কালভার্ট নির্মাণ করা হচ্ছে,  দেশের সর্ববৃহৎ পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজ নিজস্ব অর্থায়নে দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলছে। কৃষি, খাদ্য, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, যোগাযোগ, নারীর ক্ষমতায়ন, আর্থ-সামাজিক প্রতিটি সূচক ও জরিপে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনার সুযোগ্য নেতৃত্বের কারণেই দক্ষতার সাথে মহামারি করোনা মোকাবেলা করা সম্ভব হচ্ছে এবং বিশ্বের বহু বড় বড় দেশকে পেছনে ফেলে বাংলাদেশ প্রথম সারির দেশ হিসেবে কোভিড-১৯ এর টিকাদান নিশ্চিত করেছে এবং প্রয়োগ শুরু হয়েছে।

বাংলাদেশে বর্তমানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন এবং স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপিত হচ্ছে । ‘মুজিব চিরন্তন’ শিরোনামে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী এবং স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী পালন করার জন্য বিশ্বের অনেক দেশের সরকার এবং রাষ্ট্রপ্রধান বাংলাদেশ সফর করছেন।  গত ১৭ মার্চ বাংলাদেশে এসেছিলেন মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম মোহাম্মদ সালেহ; ১৯ মার্চ বাংলাদেশ সফর করেছেন  শ্রীলংকার প্রধানমন্ত্রী মাহেন্দ্র রাজাপাকসে; ২২ মার্চ বাংলাদেশ সফর করেছেন নেপালের প্রেসিডেন্ট বিদ্যাদেবী ভান্ডারী; ২৪শে মার্চ বাংলাদেশ সফর করেছেন ভুটানের প্রধানমন্ত্রী ড. লোটে শেরিং এবং সর্বশেষ আজ বাংলাদেশ সফরে এসেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। ভিডিও বার্তায় শুভেচ্ছা  জানিয়েছেন চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং, জাপানের প্রধানমন্ত্রী ইউশিহিদে সুগা ও কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো। স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আরব আমিরাতের দুবাইয়ে বিশ্বের সর্বোচ্চ ভবন বুর্জ আল খলিফায় ২৬ শে মার্চ ঘণ্টাব্যাপী বঙ্গবন্ধুর ছবি প্রদর্শন ও আলোকসজ্জার আয়োজন করেছে।

স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে পাঠানো ভিডিও বার্তায় পোপ ফ্রান্সিস বলেছেন, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং সাংস্কৃতিক ঐক্য, ভাষা নিয়ে সহাবস্থানে এক আধুনিক নাগরিকের দেশ বাংলাদেশ, যার আরেকটি পরিচয় সোনার বাংলা। এই সোনার বাংলার স্বপ্ন দেখেছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর জন্মশতবার্ষিকী এবং স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উপলক্ষে বিশ্ব নেতৃবৃন্দ বাংলাদেশকে শুভেচ্ছায় সিক্ত করছেন; বাংলাদেশের অপ্রতিরোধ্য অগ্রযাত্রাকে অভিনন্দিত করছেন। উন্নয়নের বিস্ময়, বিস্ময়ের বাংলাদেশ স্বচক্ষে দেখার আগ্রহ প্রকাশ করছেন যা বাংলাদেশকে বিশ্বদরবারে মহিমান্বিত করছে। একাত্তরে স্বাধীনতার মহানায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে আমরা একটি স্বাধীন দেশ পেয়েছি, আর তারই সুযোগ্য কন্যা বর্তমান মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে গড়ে তুলতে চলেছি ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত, আধুনিক ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ; বিস্ময়ের বাংলাদেশ।

বর্তমান সরকার ৫০ বছর বা সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন বা বাস্তবায়ন করেছে। জাতি হিসেবে আমরা অত্যন্ত ভাগ্যবান কারণ যেই আওয়ামী লীগের প্রচেষ্টায় আমরা স্বাধীন জাতি হিসেবে আজ প্রতিষ্ঠিত সেই আওয়ামী লীগের আমলেই আমরা স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী এবং মুজিববর্ষ উদযাপন করতে পারছি। যা পুরো বাঙালি জাতির জন্য একটি আনন্দের বিষয়। একটি দেশের স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্ণ করা কম কথা নয়। স্বাধীনতা লাভ করে অন্যান্য আগ্রাসী শক্তিকে উপেক্ষা করে আত্মমর্যাদাশীল জাতি হিসেবে পথ চলা সহজ নয়। বিশ্বে নজির রয়েছে, বিভিন্ন দেশ স্বাধীনভাবে চলতে চলতে আগ্রাসী শক্তির কবলে পড়ে পথ হারিয়ে বিলীন হয়ে গেছে অথবা পুনরায় পরাধীন হয়ে গেছে। বাংলাদেশের

মুক্তিকামী মানুষ জীবন দিয়ে লড়াই করে যে স্বাধীনতা লাভ করেছে, তা পথ হারায়নি। এ কৃতিত্ব সমস্ত জাতির ও আওয়ামী লীগের। স্বাধীনতার পরাজিত শক্তির ষড়যন্ত্রকে মোকাবিলা করে দেশ স্বাধীনতা ধরে রেখে এগিয়ে যাচ্ছে। আভ্যন্তরীণ রাজনীতির নানা ঘাত-প্রতিঘাত, অভিঘাত এবং বিরূপ প্রাকৃতিক ঝড়-ঝঞ্ঝা মোকাবেলা করে পঞ্চাশ বছরের পথ অতিক্রম করেছে। পঞ্চাশ বছরে স্বাধীনতার মূলমন্ত্র গণতন্ত্র, সমতা, মানবিক মর্যাদা এবং সামাজিক ন্যায়বিচারে  আমরা আজ অগ্রসর জাতি। রাজনীতি, অর্থনীতি, সমাজনীতিতে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে দুর্বার গতিতে। অস্বীকার করার উপায় নেই, স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছরের পথ পরিক্রমায় বিশ্বে বাংলাদেশের একটি সুদৃঢ় ও উজ্জ্বল অবস্থান সৃষ্টি হয়েছে। স্বাধীনতা পূর্ব, মুক্তিযুদ্ধের সময় এবং স্বাধীনতা লাভের পরবর্তী বাংলাদেশ আর আজকের বাংলাদেশ এক নয়। সামগ্রিক অর্থনীতি অনেক দূর এগিয়ে গিয়েছে।

জিডিপি, মাথাপিছু আয়, প্রাকৃতিক বিপর্যয় মোকাবেলায় সক্ষমতা অর্জন, কৃষি বিপ্লব, শিল্প-কারখানার প্রসার, স্বাস্থ্য-শিক্ষা, তথ্য ও প্রযুক্তি খাতে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি সাধিত হয়েছে। ইতোমধ্যে বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হয়েছে এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশে পরিণত হওয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।

স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছরে দাঁড়িয়ে আমরা যদি বর্তমান বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নতির চিত্রটির দিকে দৃষ্টি দেই তাহলে দেখব, আমাদের অনেক অগ্রগতি সাধিত হয়েছে। দেখা যাচ্ছে, মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী বিধ্বস্ত অর্থনৈতিক চিত্র থেকে বাংলাদেশ বের হয়ে একটি শক্ত অর্থনৈতিক অবস্থানে দাঁড়িয়েছে। অথচ সে সময় বিশ্বের কোনো দেশই আশা করেনি, বাংলাদেশ অর্থনৈতিকভাবে এতটা শক্তিশালী অবস্থানে যাবে। যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনরি কিসিঞ্জার এক কথায় বাংলাদেশকে উড়িয়েই দিয়েছিলেন। বলেছিলেন, ‘বটমলেস বাস্কেট’। তার ধারণা ছিল, দেশটি কখনোই অর্থনৈতিকভাবে শক্ত অবস্থানে দাঁড়াতে পারবে না। ক্ষুধা, দারিদ্র্য, বন্যা, ঝড়-ঝঞ্ঝার এ দেশ প্রান্তিক পর্যায়েই থেকে যাবে। সে সময়ের সামগ্রিক অর্থনৈতিক বাস্তবতায় তার এ ধারণা অমূলক ছিল না। তবে এদেশের মানুষ শত প্রতিকূলতার মধ্যেও যে টিকে থাকতে পারে এবং এগিয়ে যেতে পারে, এ দিকটি হয়তো কিসিঞ্জারের জানা ছিল না। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশে ফিরে নিপীড়িত-নির্যাতিত, ক্ষুধা-দারিদ্র্যে জর্জড়িত মানুষের খাদ্যসংস্থান এবং অর্থনীতি বিনির্মাণে সীমিত সামর্থ্যের মধ্যেই নিরন্তর প্রচেষ্টা চালাতে থাকেন। তিনি সাড়ে সাত কোটি মানুষের ভাগ্য ফেরাতে নানা উদ্যোগ গ্রহণ করেন। জাতির পিতা হিসেবে জাতির ভাগ্য অন্বেষণে এমন কোনো পথ নেই যা তিনি অবলম্বন করেননি। দুঃখের বিষয়, যে আশা-আকাক্সক্ষা নিয়ে দেশ স্বাধীন হয়েছিল, তাতেও একটি বিরোধী শ্রেণী সক্রিয় ছিল। তারা বঙ্গবন্ধুর অর্থনৈতিক কর্মকান্ড বাধাগ্রস্থ ও প্রশ্নবিদ্ধ করতে উঠেপড়ে লেগেছিল। যার কারণে সে সময় দেশের অর্থনীতি বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছিল। ফলাফল হিসেবে ’৭৪ সালে দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়। দেশের এই দুর্দশার মধ্যেই দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রের কবলে পড়ে বিপথগামী সেনা সদস্যদের দ্বারা স্বপরিবারে নৃশংসভাবে হত্যার পর দেশ এক টালমাটাল এবং ঝঞ্ঝা-বিক্ষুদ্ধ অবস্থার মধ্যে পড়লেও দিশা হারায়নি। বিগত প্রায় একযুগেরও বেশি সময় ধরে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে বাংলাদেশ অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী রাষ্ট্র হিসেবে সমগ্র বিশ্বব্যাপী পরিচিতি পেয়েছে। শেখ হাসিনার দক্ষ নেতৃত্বে অর্থনৈতিক উন্নয়নের কারণে বাংলাদেশ আজ বিশ্বের কাছে প্রশংসিত ও পুরষ্কৃত। বিশ্বনেতারা বাংলাদেশকে উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে আখ্যায়িত করতে বাধ্য হচ্ছে। জিডিপি, মাথাপিছু আয়, গড় আয়ু বৃদ্ধি, কৃষিতে অভাবনীয় সাফল্য, খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতার মতো উচ্ছ্বাসমূলক ঘটনা একমাত্র আওয়ামী লীগের নেতৃত্বেই ঘটেছে। এছাড়াও আমরা আজ মাছ ও শাক-সবজি উৎপাদনসহ কৃষিতে বিশ্বে প্রথম সারিতে রয়েছি। পশুপালনেও ব্যাপক সাফল্য রয়েছে। পদ্মাসেতু, মেট্রোরেল, কর্ণফুলি টানেল, রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, পায়রা বন্দর, এবং একশ’ অর্থনৈতিক অঞ্চল বাস্তবায়নের মতো বড় প্রকল্পের কাজ চলছে। পায়রা সেতু, শেখ হাসিনা সেনানিবাস বাস্তবে রুপ পেয়েছে।

দেশ এগিয়ে যাচ্ছে সাথে মানুষের জীবন যাত্রার মান উন্নত হচ্ছে। যোগাযোগ ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন ঘটতে যাচ্ছে দেশের ইতিহাসে। বাংলাদেশ বর্হিবিশ্বে এখন উন্নয়নের রোল মডেল। বাংলাদেশের চলমান মেঘা প্রজেক্টগুলো ও তার শেষ হওয়ার সম্ভাব্য সময়ঃ খুলনা রেল সেতু – জুন ২০২২, বেকুটিয়া সেতু – জুন ২০২২, মিরপুর -কালশী ফ্লাইওভার – জুন ২০২২, কালনা সেতু – জুন ২০২২, ৩য় শীতলক্ষ্যা সেতু – জুন২০২২, ঢাকা – টাঙ্গাইল ৪ লেন – জুন ২০২২, বনানী – এয়ারপোর্ট এক্সপ্রেসওয়ে – জুন ২০২২, পদ্মা সেতু -জুন ২০২২, ভাঙা মাওয়া রেল – জুন ২০২২, লোহালিয়া সেতু – জুলাই ২০২২, গোমা সেতু – আগস্ট ২০২২, নড়াইল – খুলনা সেতু -ডিসেম্বর ২০২২, চট্টগ্রাম – কক্সবাজার রেল -ডিসেম্বর ২০২২, কুলাউড়া – শাহবাজপুর রেল – ডিসেম্বর

২০২২, মেট্রোরেল – আগারগাঁও – উত্তরা – ডিসেম্বর ২০২২, বঙ্গবন্ধু হাইটেক পার্ক ( সিলেট,রাজশাহী) – ডিসেম্বর ২০২২, খুলনা – মংলা রেল ওয়ে  – ডিসেম্বর ২০২২, জয়দেবপুর – ঢাকা ডাবল রেললাইন  – ডিসেম্বর ২০২২, বিআরটি -৩ – জানুয়ারি ২০২৩

পূর্বাচল এক্সপ্রেসওয়ে – মার্চ ২০২৩, কর্ণফুলী টানেল – মার্চ ২০২৩, রামপাল বিদ্যুৎ – এপ্রিল ২০২৩, যমুনা রেল সেতু – জুন ২০২৩, মাতারবাড়ি বিদ্যুৎ – ডিসেম্বর  ২০২৩, রূপপুর পারমাণবিক -১ – ডিসেম্বর ২০২৩, ঢাকা -মাওয়া রেল – ডিসেম্বর ২০২৩, ঢাকা – রংপুর ৪ লেন – জানুয়ারি ২০২৪, যশোর – ঝিনাইদহ ৪ লেন – জানুয়ারী ২০২৪, কমলাপুর – আগারগাঁও মেট্রোরেল – জানুয়ারি ২০২৪, পায়রা বন্দর ড্রেজিং – জুন ২০২৪, মংলা বন্দর ড্রেজিং – জুন ২০২৪, রূপপুর পারমাণবিক ২ – ডিসেম্বর ২০২৪, আমিনবাজার  ৮ লেন সেতু – ডিসেম্বর ২০২৪, রংপুর -লালমনিরহাট ৪ লেন – ডিসেম্বর ২০২৪, ভাঙা – যশোর রেল – ডিসেম্বর ২০২৪, কক্সবাজার বিমানবন্দর – ডিসেম্বর ২০২৪, খুলনা বিদ্যুৎ কেন্দ্র – ডিসেম্বর ২০২৪, ঢাকা – ইস্ট ওয়েস্ট এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে – জুন ২০২৫, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট -২ – জুন ২০২৫, ঢাকা বাইপাস – জুন ২০২৫, মাগুরা ফরিদপুর রেল – জুন ২০২৫, রংপুর পঞ্চগড় ৪ লেন – জুন ২০২৫, পতেঙা বে টার্মিনাল – জুন ২০২৫, বঙ্গবন্ধু শিল্প অঞ্চল – জুন ২০২৫, মাতারবাড়ি সমুদ্র বন্দর – জুন ২০২৫, কুতুবখালী – বনানী এক্সপ্রেসওয়ে – জুন ২০২৫, পানগুচি সেতু – জুন ২০২৫, ঢাকা  আরিচা ৪ লেন – জুন ২০২৫, ৩য় মেঘনা সেতু – জুন ২০২৫, পায়রা – ভাঙা ৪ লেন – জুন ২০২৬, বেনাপোল – ভাঙা ৪ লেন – জুন ২০২৬, নলুয়া – বহেরচর সেতু – জুন ২০২৬, শেখ হাসিনা স্টেডিয়াম – জুন ২০২৬, ঢাকা – আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে – জুন ২০২৬, চাঁদপুর শরীয়তপুর টানেল – জুন ২০২৬, চট্টগ্রাম মেট্রোরেল – জুন ২০২৭, যমুনা টানেল – জুন ২০২৭, চাঁদপুর – শরীয়তপুর সেতু – জুন ২০২৭, ভোলা -বরিশাল সেতু – জুন ২০২৭, ঢাকা সিলেট ৪ লেন – জুন ২০২৭, তিস্তা ব্যারেজ – জুন ২০২৭, চট্টগ্রাম – ঢাকা বুলেট ট্রেন – জুন ২০২৮, ভাঙা – পায়রা রেল – জুন ২০২৮, ঢাকা সাবওয়ে  রেল ( ১,২,৩,৪) – জুন ২০২৮, বঙ্গবন্ধু  ট্রাই টাওয়ার – জুন ২০২৮, শেখ হাসিনা  সাবমেরিন ঘাটি – জুন ২০২৮, সাবরাং টুরিজম পার্ক – জুন ২০২৮, নাফ টুরিজম পার্ক -জুন ২০২৮, সোনাদিয়া টুরিজম পার্ক – জুন ২০২৮

আকাশচুম্বি চ্যালেঞ্জ আর ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে অগ্রগতির নতুন মাইলফলক সৃষ্টি করে সাফল্যের এক যুগ পূর্ণ করেছে বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকার। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে খাদ্য নিরাপত্তা, সমুদ্র বিজয়, শিক্ষা, স্বাস্থ্য খাতের অগ্রগতি, নারীর ক্ষমতায়ন, অর্থনৈতিক উন্নতি ইত্যাদি ক্ষেত্রে ঈর্ষণীয় সাফল্য এসেছে। বিশ্বের নেতৃত্বদানকারী দেশগুলো বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র, ভারত ও চীনের সাথে সম্পর্কের ভারসাম্য রক্ষা করে উন্নয়ন অগ্রযাত্রা অব্যাহত রেখেছেন। জঙ্গিবাদের কারণে মুসলিম দেশগুলোর মধ্যে ইন্দোনেশিয়া ও পাকিস্তান সংকটে রয়েছে সেখানে জঙ্গিবাদ মোকাবেলা করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিস্ময় সাফল্য দেখিয়েছেন। দেশের চলমান কয়েকটি মেগা প্রজেক্ট ২০২৩ সালের মধ্যে জনগণের জন্য উন্মুক্ত হলে দেশে আরো দ্রুত উন্নয়নের জোয়ার বইবে এবং জনগণের জীবন যাত্রার মান বাড়বে বলে আশাবাদী সরকার।

দেশের রাজনীতিতেও আওয়ামী লীগ এখন প্রায় অপ্রতিদ্বন্দ্বী। দেশ ও দল এক হাতে সাফল্যের সাথে পরিচালনা করছেন প্রধানমন্ত্রী।

করোনা সংকটে পুরো দেশ যেখানে ভয়ে বিহবল, মন্ত্রী এমপিরা করোনার ভয়ে বের হননি সেখানে অনেকগুলো মন্ত্রণালয়ের কাজ সরাসরি পরিচালনা করেছেন প্রধানমন্ত্রী। তার দক্ষ নেতৃত্বের কারণে অর্থনৈতিক সংকট তৈরী হয়নি, দেশে কেউ না খেয়ে মারা যায়নি। বরং প্রবৃদ্ধি অর্জনে প্রতিবেশি দেশগুলোর চেয়ে এগিয়ে রয়েছে বাংলাদেশ।

আওয়ামীলীগ দীর্ঘদিন ধরে সরকারে থাকা এবং উন্নয়নমুখী অর্থনীতি নিয়ে কাজ করার ফলে বাংলাদেশ ইতোমধ্যে মধ্য আয়ের দেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে। এখন ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ উন্নত দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে অদম্যগতিতে এগিয়ে চলছে। ২০০৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর নবম জাতীয় নির্বাচনে নিরঙ্কুশ বিজয়ের পর ২০০৯ সালের ৬ ডিসেম্বর যাত্রা শুরু করে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ। এরপর ২০১৪ সালে এবং ২০১৮ সালে জয়ের ধারাবাহিকতা বজায় রেখে রাষ্ট্রক্ষমতায় টানা ১২ বছর পূর্ণ করেছে আওয়ামী লীগ সরকার। এর আগে ১৯৯৬ সালের ১২ জুনের সংসদ নির্বাচনে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করেছিল আওয়ামী লীগ।

২০০৮ সালে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ‘দিনবদলের সনদ’ নামে নির্বাচনি ইশতেহারে ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল আওয়ামীলীগ। ২০১৪ সালে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলটির ইশতেহারের ২০৪১ সালের মধ্যে দেশকে উন্নত সমৃদ্ধ দেশে পরিণত করার ঘোষণা দেয়া হয়। সরকার এমন কিছু প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে যা বিগত কোন সরকারের পরিকল্পনায় ছিল না। এর মধ্যে রয়েছে ১০০ বছর মেয়াদি ডেল্টা প্ল্যান, বঙ্গবন্ধু

স্যাটেলাইট, মেট্রোরেল চট্টগ্রামে কর্ণফুলি নদীর তলদেশে টানেল, পারমানবিক বিদ্যুত কেন্দ্র, ই-নামজারি, অনলাইন জিডি, দেশের সকল বিদ্যালয়ে বছরের প্রথম দিন বিনামূল্যে বই প্রদান, জরুরি সেবা ৯৯৯ চালু করা।

গত ১২ বছরে ঈর্ষণীয় সাফল্য কুড়িয়েছে বর্তমান সরকার। ডিজিটাল বাংলাদেশের সুফল পাচ্ছেন রাষ্ট্রের প্রতিটি নাগরিক। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, নাগরিক সেবা, মাথাপিছু আয়, হাতে হাতে মোবাইল ফোন আর ইন্টারনেটের বদৌলতে পাল্টে গেছে জীবনমান। এদিকে বড় বড় মেগা প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে অপেক্ষামান রয়েছে। করোনার আক্রমণের মধ্যেও থেমে ছিল না বাংলাদেশ। ইন্টারনেট ব্যবহারের মাধ্যমে দেশের সকল কার্যক্রম পরিচালিত হয়েছে। করোনাভাইরাসের এই মহামারির সময়ে যখন মানুষের চলাচল সীমিত হয়ে পড়ে, তখন ডিজিটাল যোগাযোগ প্রযুক্তি,  ব্যবসা-বাণিজ্যের একমাত্র মাধ্যম হিসেবে পরিগণিত হয়। সরকারি বেসরকারি কাজ, স্কুলের পড়াশোনায় চলেছে ইন্টারনেটে। ঘরে বসে খাবারের অর্ডার করেও খেতে পারছে জনগণ। দেশের ১৮ হাজার ৪৩৪টি সরকারি প্রতিষ্ঠান ও ৩ হাজার ৮০০ ইউনিয়নে ফাইবার অপটিক ক্যাবল স্থাপনের মাধ্যমে ইন্টারনেট সংযোগ দেওয়া হয়েছে। করোনাভাইরাসের সময় ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ১১ কোটিতে উন্নীত হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, বিএনপি-জামায়াত সরকারের সময় ২০০৬ সালে বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ছিলো তিন হাজার ৩৭৮ মেগাওয়াট। ২০০৯ সালে বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ছিলো চার হাজার ৯৪২ মেগাওয়াট। বর্তমান সরকারের এক যুগে ২০২০ সালে বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা দাঁড়িয়েছে ২৩ হাজার ৭৭৭ মেগাওয়াট। বিএনপি-জামায়াত সরকারের আমলে ২০০৬ সালে মোট বিদ্যুৎকেন্দ্র ছিলো ৪২টি। ২০০৯ সালে আরও নতুন বিদ্যুৎকেন্দ্র হয় ২৭টি। বর্তমানে ২০২০ সালে এর সংখ্যা এসে দাঁড়ায় মোট ১৪০টিতে।

২০০৬ সালে কৃষিতে কোনো ভর্তুকি দেয়া হয়নি। ২০০৯ সালে আওয়ামী সরকারের আমলে পাঁচ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা কৃষি খাতে ভর্তুকি দেয়া হয়। পরবর্তীতে ২০১৮ সালে এসে ১০ হাজার ৩৭৬ কোটি টাকায় উন্নীত করা হয়। ২০২০ সালে ৯ হাজার ৫০০ কোটি টাকা প্রদান করে সরকার। বিএনপি-জামায়াত সরকারের সময় ২০০৬ সালে অতি দারিদ্যের হার ২৪ দশমিক ২ শতাংশ। আওয়ামী লীগ সরকার দায়িত্ব গ্রহণকালে ২০০৯ সালে ছিলো ১৯ দশমিক ৩ শতাংশ। ২০১৮ সালে কমে তা ১১ দশমিক ৩ শতাংশে আসে। বর্তমান ২০২০ সালের তথ্য চিত্র অনুযায়ী অতি দারিদ্র্যের হার ১০ দশমিক ৫ শতাংশ।

২০০৬ সালে বৈদেশিক বিনিয়োগ ছিলো ৪৫ দশমিক ৬ কোটি ডলার। আওয়ামী লীগ সরকার দায়িত্ব গ্রহণকালে ২০০৯ সালে ছিলো ৯৬ দশমিক এক কোটি ডলার। ২০১৮ তা বেড়ে ৩০০ কোটি ডলারে উন্নীত হয়। বর্তমান সরকারের একযুগ পূর্তিতে এখন বৈদেশিক বিনিয়োগ ৩ দশমিক ৯০ বিলিয়ন ডলার। বিএনপি-জামায়াত সরকারের আমলে ২০০৬ সালে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিলো দশমিক ৩৪ বিলিয়ন ডলার। আওয়ামী লীগ সরকারের ক্ষমতাগ্রহণের বছর ২০০৯ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ১ বিলিয়ন ডলারে। ২০১৮ সালে হয় ৩৩ বিলিয়ন ডলার। আজ একযুগ পূর্তিতে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বেড়ে দাঁড়ায় ৪২ দশমিক ০৯ ডলার।

২০০৬ সালে বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় ছিলো ৫৬০ মার্কিন ডলার। ২০০৯ সালে আয় ছিলো ৭১০ ডলার। আওয়ামী লীগ সরকারের একযুগ পূর্তিতে তা বেড়ে দাঁড়ায় দুই হাজার ৬৪ মার্কিন ডলার। ২০০৬ সালে মুক্তিযোদ্ধা ভাতা ছিলো ৫০০ টাকা। ২০০৯ সালে দেয়া হয় ৯০০ টাকা করে। বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের একযুগ পূর্তিতে তা বেড়ে দাঁড়ায় ১০ হাজার টাকা।

বাংলাদেশের উন্নয়নের তুলনামূলক চিত্রে দেখা যায়, ২০০৬ সালে দারিদ্র্যের হার ৪১ দশমিক ৫ শতাংশ। আওয়ামী লীগ ক্ষমতা গ্রহণের বছর ২০০৯ সালে ৩৪ শতাংশ। ২০১৮ সালে তা ছিলো ২১ দশমিক ৮ শতাংশ। বর্তমান সরকারের একযুগ পূর্তিতে তা এসে দাঁড়ায় ২০ দশমিক ৫ শতাংশে।

বিএনপি-জামায়াত সরকারের সময় ২০০৬ সালে নাগরিকদের গড় আয়ু ছিলো ৬৫ দশমিক ৪ বছর। ২০০৯ সালে গড় আয়ু হয় ৬৬ দশমিক ৮ বছর। ২০১৮ সালে ছিলো ৭২ দশমিক এক বছর। আওয়ামী লীগ সরকারের একযুগ পূর্তিতে গড় আয়ু বেড়ে দাঁড়ায় ৭২ দশমিক ৬ বছর।

নানা প্রতিকূলতা পেরিয়েও বড় বড় মেগা প্রকল্পগুলোর কাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে। করোনা মাহামারির কারণে বেশ কিছুদিন কাজ বন্ধ থাকলেও এখন পুরোদমে গতিশীল হচ্ছে।

ক্ষমতায় আসার পরই পদ্মা সেতু নির্মাণকে অগ্রাধিকার মেগা প্রকল্প হিসেবে গ্রহণ করে শেখ হাসিনা সরকার। দেশ-বিদেশের নানা ষড়যন্ত্র উপেক্ষা করে নিজস্ব অর্থায়নেই পদ্মা সেতু নির্মাণের ঘোষণা দেন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের স্বপ্নের সেই পদ্মা সেতু এখন উদ্বোধনের পথে।

স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীতে দেশের প্রথম মেট্রোরেল চালু করার নতুন লক্ষ্য নিয়ে এগিয়ে চলছে কাজ। এমআরটি-৬ নামের এ প্রকল্পের উত্তরা থেকে আগারগাঁও ১১ দশমিক ২৯ কিলোমিটার অংশ পর্যন্ত ২০২১ সাল এবং আগারগাঁও থেকে মতিঝিল পর্যন্ত প্রায় ১০ কিলোমিটার ২০২৩ সালের মধ্যে শেষ করার লক্ষ্য ছিলো। ২০০৯ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে ৪৫৩ কিলোমিটার জাতীয় মহাসড়ক ৪ বা তদুর্ধ্ব লেনে উন্নীত করা হয়েছে। আরও ৬৬১ কিলোমিটার মহাসড়ক চার এবং তদুর্ধ্ব লেনে উন্নীত করার

কাজ চলছে। ঢাকায় বিমানবন্দর থেকে কুতুবখালী পর্যন্ত ৪৬.৭৩ কিলোমিটার এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণ কাজ ২০২৩ সাল নাগাদ শেষ হবে।

‘ওয়ান সিটি-টু টাউন’ মডেলে চট্টগ্রাম শহরের সাথে আনোয়ারাকে যুক্ত করতে কর্ণফুলী নদীর তলদেশে তৈরি হচ্ছে সাড়ে তিন কিলোমিটারের সুড়ঙ্গপথ। চীনা অর্থায়নে চলমান বঙ্গবন্ধু টানেল প্রকল্পে কাজ করছে চায়না কমিউনিকেশন্স কনস্ট্রাকশন কোম্পানি (সিসিসিসি)। গত ডিসেম্বর পর্যন্ত অগ্রগতি ৬১ শতাংশ।

করোনা পরিস্থিতির মধ্যেও যথাসময়ে প্রায় সাড়ে চার কোটি শিক্ষার্থীর হাতে বিনামূল্যে নতুন বই তুলে দিয়ে ১০ বছর ধরে সাফল্যের ধারা অব্যাহত রেখেছে সরকার। আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার ২০১০ সাল থেকে বছরের প্রথম দিন উৎসব করে শিক্ষার্থীদের হাতে নতুন বই তুলে দিচ্ছে।

জাতির জনকের জন্মশতবার্ষিকী ঘিরে দেশব্যাপী উৎসবমুখর কর্মসূচি নেয়া হলেও বৈশ্বিক মহামারি করোনা সবকিছু থমকে দেয়, বড় ধরনের ধাক্কায় পড়ে সরকার। উৎসবের বছর পরিণত হয় আতঙ্ক আর হতাশায়। ২০২০ সালের শুরুতেই সারা বিশ্বসহ বাংলাদেশে যখন করোনাসংকটে নানা অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে তখন তা মোকাবিলায় দ্রুত নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অর্থনীতিকে চাঙ্গা রাখতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এক লাখ ১২ হাজার ৬৩৩ কোটি টাকার ২১টি প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেন। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে বড় অর্জন হচ্ছে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হওয়া। দেশের যেমন উন্নয়ন অগ্রগতি হয়েছে তেমনি প্রতিটি মানুষের ভাগ্যেরও উন্নয়ন হয়েছে।

প্রিয় পাঠক! আমরা আজকের আলোচনার একেবারে প্রান্তসীমায় চলে এসেছি। পরিশেষে বলবো বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নিরলস প্রচেষ্টায় চলমান প্রকল্পের বাস্তবায়ন আর উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে আগামী জাতীয় নির্বাচনে আপনারা নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবেন। সাধারণ নাগরিক, দেশী-বিদেশী বেসরকারী সংস্থার সমন্বিত কার্যক্রমই পারে দেশকে দ্রুত কাঙ্খিত লক্ষ্যে নিয়ে যেতে। অস্থিতিশীলতা, ধর্মীয় বিষঃবাষ্প ছড়ানো সহ দূর্নীতি ও বিলম্বিত বিচার প্রক্রিয়ার মতো ক্ষতিকর বিষয়সমূহের বেড়াজাল থেকে বেরিয়ে আসতে পারলে আমি  আশাবাদী বাংলাদেশ একদিন পূরো বিশ্বকে নেতৃত্ব দিবে!

 

নাইম ইসলাম নিবির : রাজনীতিক ও কলামিস্ট।

nayemulislamnayem148@gmail.com

Please Share This Post in Your Social Media

এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ দেখুন..