নারী শিক্ষা কেন প্রয়োজন
-আকলিমা নাসরিন (লিমা)
একসময় দেশের পুরুষ শাসিত সমাজের একটা ধারণা ছিল যে, নারীদের শিক্ষার কোনো প্রয়োজন নেই। কারণ নারীরা হলো ঘরের মেয়ে লোক। তারা লেখাপড়া শিখে কি লাভ হবে। তাদের দ্বারা তো দেশের কোনো কাজ হবে না। তারা তো দেশে কোনো চাকরি করতে পারবে না। এমন ধারণাটা ছিল একটা অন্ধকার যুগের ধারণা। যার কারণে সে সময় নারীরা শিক্ষিত না হওয়ার কারণে আমাদের দেশ অর্থনৈতিকভাবে অনেকটা পিছিয়ে ছিল।
দেরিতে হলেও তারা এখন বুঝতে পারছে যে, পুরুষদের পাশাপাশি তাদেরও শিক্ষার প্রয়োজন আছে। যার কারণে এখন দেশের সকল স্কুল, কলেজ, ইউনিভার্সিটিতে মেয়ে শিক্ষার জন্য সুব্যবস্থা করা হয়েছে। করা হয়েছে দেশে শিক্ষিত মেয়েদের চাকরির ব্যবস্থা।
বাংলাদেশে সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে নারীর শিক্ষা পরিস্থিতির উন্নয়নে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। যেমন সব শিশুর জন্য প্রাথমিক শিক্ষা অবৈতনিক ও বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। প্রাথমিক স্তরের ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য খাদ্য কর্মসূচি রয়েছে। পৌরসভার বাইরে বিনা বেতনে দশম শ্রেণি পর্যন্ত ছাত্রীদের শিক্ষার সুযোগ আর মহা নগরের বাইরে মাধ্যমিক পর্যায়ে ছাত্রীদের জন্য উপবৃত্তির সুযোগ রয়েছে। মাধ্যমিক পর্যায়ে বিনামূল্যে পাঠ্যপুস্তক সরবরাহ করা হচ্ছে। শিক্ষিত ও স্বল্পশিক্ষিত নারীদের বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণের উদ্দেশে জাতীয় নারী প্রশিক্ষণ ও উন্নয়ন একাডেমি পুনর্গঠন এবং প্রশিক্ষণ একাডেমি স্থাপন করা হয়েছে। বেগম রোকেয়া প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, মহিলা কৃষি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট, বেগম শহীদ ফজিলাতুন্নেসা মুজিব মহিলা প্রশিক্ষণ একাডেমি এবং মহিলা কৃষি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের জন্য কারিগরি সহায়তা প্রদান করা হয়েছে।
দেশে এখনো অনেক মেয়ের বিবাহিত জীবনে বিভিন্ন রকমের দুর্ঘটনা ঘটে থাকে। অনেক মেয়ে স্বামীর বাড়ি হতে পরিত্যক্ত হয়ে বাপের বাড়িতে চলে আসে। তখন তাদের জীবনে নেমে আসে চরম দুঃখ-দুর্দশা। অনেক পরিবারে ভাই ও ভাইয়ের বউদের অত্যাচারে অনেক মেয়ে দিশেহারা বিপথগামী হয়ে খারাপ পথে পা বাড়াতে বাধ্য হয়। শুধুমাত্র তার জীবন-জীবিকা নির্বাহের জন্য। আবার অনেক মেয়ে যৌতুকের কারণেও স্বামীর বাড়ি হতে পরিত্যক্ত হয়ে থাকে। তাই এসব মেয়েরা যদি শিক্ষিত হয়ে থাকে তাহলে তাকে স্বামীর বাড়ি হতে পরিত্যক্ত হলে যেকোনো কর্ম করে বাঁচতে পারে। নারীদের শিক্ষার পাশাপাশি আয়মূলক শিক্ষা (কারিগরি শিক্ষা)ও গ্রহণ করতে হবে। তাহলে তারা আর কারও ওপর নির্ভরশীল হতে হবে না। তাছাড়াও নারীদের শিক্ষিত হওয়ার সবচেয়ে বড় যে প্রয়োজন তাহলো মা হিসেবে তার সন্তানদেরকে শিক্ষিত করতে হলে মায়ের শিক্ষা একান্ত প্রয়োজন। যে সংসারে মা শিক্ষিত সে সংসারের ছেলে বা মেয়ে অবশ্যই শিক্ষিত হবে। তাতে কোনো সন্দেহ নেই। একটা পরিবারে মা শিক্ষিত হলে পুরো পরিবার শিক্ষিত হবে। তাই একজন মেয়েকে তার ভবিষ্যৎ সংসার জীবনের কথা চিন্তা করে হলেও তাকে শিক্ষিত হতে হবে।
লেখক : আকলিমা নাসরিন (লিমা)
শিক্ষিকা, জলদী, বাঁশখালী, চট্টগ্রাম।