বিষে ভরা দুই হাজার বিশ
–— অনুুপ চক্রবর্তী ‘
পল্লবী! আমার প্রেমিকা।
দীর্ঘ চার বছরের প্রেম আমাদের।
নদীর ধারে ফটিক কাকা র দোকানে
পল্লবী কে প্রথম দেখা।
প্রথম দেখাতেই ভালো লাগা, ভালো লাগা থেকেই
উৎপত্তি আমাদের ভালোবাসার।
মাঝে অবশ্য বেশ কয়েকবার নদীর ঢেউ তীরে আছরে পরার মতো, আমাদের জীবনে ও ভাঙ্গণ
সৃষ্টি করেছিল, তবে সেটা বেশী দিন স্থায়িত্ব লাভ করতে পারে নাই।
কিছু দিন যাবৎ পল্লবী র সাথে আমার দেখা নেই।
আজকাল কথাও কম হয়।
মোবাইল ফোনে কল দিলেই ব্যাস্ততা বেড়ে যায় পল্লবীর।
হয়তো ভালোবাসা টা কমে গেছে।
দীর্ঘ তিন মাস পল্লবীর সাথে নদীর ধারে ফটিক কাকা র কাছে ফুচকা খেতে যায় না।
ফটিক কাকা র ফুচকার সাথে আমাদের ভালোবাসা উতপ্রত ভাবে জড়িয়ে।
কি জানি কেমন আছে ফটিক কাকা।
শহর থেকে গ্রামে আসার পর বেলকুনি তে রেখে আসা বনসাই এর কোনো খবর জানি না।
হয়তো গাছটা শুকিয়ে মারা গেছে।
পল্লবী শখ করে গাছটা কিনে দিয়েছিল।
সেটার বয়স যতদূর মনে আছে তিন বছর হবে হয়তো।
পল্লবীর সাথে দুই দিন থেকে কোনো যোগাযোগ নেই।
কল দিলে ফোন অফ।
পল্লবীর এক বান্ধবী প্রমা,তার সাথে আমার পরিচয় পল্লবীর মাধ্যমেই।
চিন্তাগ্রস্থ হয়ে তাকে কল দিলে সেও রিসিভ করে না।
সন্ধ্যায় আরেকবার কল দিলে ফোন রিসিভ করে কন্ঠস্বর টা অদ্ভুত শোনায়।
মনে হয় আমি যেন এক অচেনা প্রমা র সাথে কথা বলছি।
তাকে পল্লবীর কথা জিজ্ঞেস করতেই সাফ জানিয়ে দেয় কিছু জানে না।
পরের দিন দুপুরে প্রমা নিজে থকেই আমাকে কল দেয়, আমি একটু আশ্চর্য হলাম, প্রমা বলে উঠলো
পল্লবী কোভিড ১৯ শে আক্রান্ত হয়ে কিছুক্ষণ আগে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছে।
কাউকে না জানিয়ে শহরে চলে যায় শেষ বারের মতো পল্লবী কে দেখতে।
কিন্তু সব শেষ।
পল্লবী র শেষ কৃর্ত্য পুলিশ সম্পন্ন করে।
শেষ বারের মতো পল্লবী র সাথে দেখা হয় না।
ছুটে যায় ফটিক কাকা র ফুচকার দোকানে,
জানতে পায় ফটিক কাকা ও কোভিড ১৯ এ আক্রান্ত,
রাতে ঘরে ফিরে বেলকুনি তে বনসাই এর দিকে লক্ষ্য করে দেখি জলের অভাবে গাছ ও শুকিয়ে মারা গেছে।
পল্লবী র সাথে শেষ বারের মতো কথা বলার সময় গাছটি র কথা জিজ্ঞেস করেছিল, বলেছিলাম হয়তো বেঁচে আছে।
পল্লবীর সাথে ও শেষ কথাটিও মিথ্যে হলো তাহলে।
হয়তো সুস্থ পৃথিবীটা আবার একদিন সুস্থ হয়ে উঠবে
সেদিন তুমি পাশে থাকবে না।